নতুন বাংলাদেশে ‘মব জাস্টিস’ ও ‘ধর্মীয় উগ্রপন্থা’ রুখতে হবে || আতিকা নুরী

প্রকাশিত: ২০. সেপ্টেম্বর. ২০২৪ | শুক্রবার

Manual2 Ad Code

আতিকা নুরী: জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশ নিয়ে নারী পুরুষ-সবাই স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর উৎপাত এবং ‘মব জাস্টিস’ এর ফলে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে বাড়তি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদ বরাবরই ছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিপ্লবের পর বাংলাদেশ যেভাবে ভূতের মতো উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না।

আমরা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ করছি, উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে তো উঠেছেই,তারা এখন রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানতে চাইছে। তারা বাংলাদেশ নামের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোকেই ভেঙে ফেলার সাহস দেখাচ্ছে।

Manual4 Ad Code

অতি সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দেশের ভাস্কর্যগুলোর ওপর হেফাজতে ইসলাম,জামায়াত সহ অন্যান্য মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিষদৃষ্টি পড়েছে। তারা ভাস্কর্যসহ স্মৃতিস্তম্ভগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে। সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতালম্বীদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে৷ আমরা দেখতে পাচ্ছি ড.ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সুরও নরম। মনে হচ্ছে,মৌলবাদীরা যেভাবে ভাবছে-সরকার তার কাছে নতি স্বীকার করতে যাচ্ছে।

Manual2 Ad Code

আমি কথা না বাড়িয়ে শুধু এই কথাটাই বলব,দেশের শিল্পসাহিত্য ও কৃষ্টি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তারা এখানে নতি স্বীকার করলে দেশের নাগরিকেরা তা কখনোই মেনে নেবে না।

ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উগ্র সাম্প্রদায়িক দাবিদাওয়ার কাছে সরকারের নতি স্বীকারের দৃষ্টান্ত কোনোভাবেই স্থাপিত হওয়া উচিত নয়। এসব কৃষ্টি-সংস্কৃতিবিরোধী সাম্প্রদায়িক দাবি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করতে হবে। ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। ধর্মীয় মৌলবাদসহ সব ধরনের উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে অটল থাকতে হবে ড.ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ৷

২য় যে বিষয়টি আইনের শাসনে বিশ্বাসী সকল মানুষকে উদ্বিগ্ন করছে-তা হলো ‘মব জাস্টিস’। জনতা আইন বা আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কোনো বিচার নিজ হাতে যখন তুলে নেন, তখন তাকে ‘মব জাস্টিস’ বলে। এ ধরনের ঘটনায় যদি কেউ মারা যায় বা জনতার গনপিটুনিতে কেউ মারা গেলে তাকে লিঞ্চিং (lynching) বলে। এর অর্থ বিচার বহির্ভূত হত্যা।

এছাড়া জনতা দ্বারা বাড়িঘর পোড়ানো,কাউকে আহত করা,ভাংচুর সবকিছুই মব জাস্টিসের অংশ।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে ৮০০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে আরও প্রায় ২৮৬ জন। এর মধ্যে ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর ৭ মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) গণপিটুনিতে নিহত হন ৩২ জন। ঢাকাতেই নিহত হন ১৬ জন। হাসিনা সরকারের পতনের পরও ‘মব জাস্টিস’ হচ্ছে। রাজশাহী,জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিঠুনির ঘটনা ঘটেছে।

আমার দৃষ্টিতে ‘মব জাস্টিস’ ঘটে মূলত ১০ টি কারণে। কারণগুলো হচ্ছে (১) আইনপ্রণয়নের অভাব (২) অব্যবস্থাপনা (৩) অসন্তোষ ও ক্ষোভ (৪) সামাজিক বা রাজনৈতিক উত্তেজনা (৫) স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া (৬) রাজনৈতিক প্রভাব (৭) অর্থনৈতিক প্রভাব (৮) সামাজিক বৈষম্য (৯) বিচার বিভাগের দুর্বলতা এবং (১০) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দুর্বলতা।

মব জাস্টিস বন্ধ করতে করণীয়:

Manual3 Ad Code

মব জাস্টিস প্রতিরোধ করার জন্য আমাদেরকে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শক্তিশালী করতে হবে এবং দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, জনগণকে সচেতন হতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।

লেখকঃ নির্বাসিত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী৷

Manual8 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code