» ৭ই মার্চ ও বঙ্গবন্ধু : বাঙালি নেতৃত্বে সাহসের রাঙা ঢেউ || শাহিদ হাতিমী

প্রকাশিত: ০৭. মার্চ. ২০২১ | রবিবার

শাহিদ হাতিমী: 

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে একটিমাত্র ভাষণই আজ পর্যন্ত অনন্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অজেয়। এমন ভাষণ বাঙলার ইতিহাসে এর আগে কেউ দেয়নি, পরেও আর কেউ এমন করে দিতে পারবে বলে মনে হয় না। সেটি ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মাত্র ১৯ মিনিটের। সময়ের পরিমাপে এটি খুব স্বল্প কিন্তু তাৎপর্য অনুসন্ধান করলে, বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ, অসামান্য এক সুবর্ণমুহূর্ত। জনতার সঙ্গে সরাসরি ‘সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট’ বলা যায়। ১৯ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চারণ করেছেন ১১০৯টি শব্দ, ৮৯টি বাক্য। ‘ভায়েরা আমার’ সম্বোধন করেছে ২ বার। ‘আমি’ শব্দটি ৭ বার, ‘আমার’ শব্দটি ১৪ বার, ‘সংগ্রাম’ শব্দটি ৫ বার, ‘মুক্তি’ শব্দটি ২ বার, ‘মুক্ত’ শব্দটি ১ বার, তারপর উচ্চারণ করেছেন বহুল কাঙ্ক্ষিত শব্দ ‘স্বাধীনতা’ ১ বার এবং ‘জয় বাংলা’ বলে ভাষণের ইতি টেনেছেন। তবে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন “ইনশাআল্লাহ” শব্দটি উল্লেখ করায়! …রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশআল্লাহ! এই ইনশাআল্লাহ উচ্চারণই শিহরিত করে বাঙালির ৭কোটি একত্ববাদী জনতাকে! ইনশাআল্লাহ শব্দের মধ্যেদিয়েই বঙ্গবন্ধু মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়েছিলেন। আর ৭ই মার্চের জনসমুদ্রে আল্লাহর নাম নেয়া ভাষনটি মহান স্রষ্টা কবুল করেছিলেন বলেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র অর্জন করতে পেরেছি। শব্দ এবং বাক্যের এই পরিসংখ্যান থেকে বহুমাত্রিক তাৎপর্য অনুসন্ধান করা যায়। আমরা লক্ষ করি ‘আমি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ১৬ বার এবং ‘আমাদের’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ১১ বার- এটা থেকে বোঝা যায়, তিনি সামষ্টিক চেতনাকে অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রকৃত নেতা কখনো সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দেয়না। গণভিত্তি ও জনসমর্থনই বঙ্গবন্ধুকে অসীম উচ্চতায় উপনীত করেছে, অন্য কিছু নয়। তিনি ‘সংগ্রাম’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ৫ বার। গাণিতিক হিসেবে ৫ অড বা অবিভাজ্য নাম্বার। চর্যাপদের কাহ্নপার একটি পদ- ‘কা-আ’ তরুবর পঞ্চবি ডাল/ চঞ্চল চিত্র পৈঠা কাল’ এদেহ যেন একটা বৃক্ষ, পাঁচটি তার শাখা/ অস্থির চিত্তে সময় প্রবেশ করছে’ তৎকালীন পূর্ব বাংলা পাকিস্তান উপনিবেশিত রাষ্ট্রে বাঙালির পঞ্চ ইন্দ্রিয় ছিল যন্ত্রণাদগ্ধ, শোষণ-নির্যাতনে পর্যুদস্ত। ‘সংগ্রাম’ শব্দটি ৫ বার উচ্চারণ করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেই পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের যন্ত্রণাকে ইঙ্গিত করেছেন, ‘মুক্ত’ শব্দটি ১ বার এবং ‘মুক্তি’ শব্দটি ২ বার ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু মূলত শোষণ-নির্যাতন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ভাষণের উপান্তের বাক্যটি উল্লেখ করতেই হয়- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ অর্থাৎ এই পথেই ‘স্বাধীনতা’। চূড়ান্ত বিজয়। তাই উচ্চারণ করেছেন ‘জয় বাংলা’। বাংলার জয় হয়েছে, হানাদার অপশক্তি পরাজিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের বীজমন্ত্র বলে। অন্য কোনো শক্তিতে নয়, মনোবল, দেহবল, সংঘবদ্ধ শক্তি আর গভীর দেশপ্রেমই ৭ই মার্চের ভাষণের জাদুকরি শক্তি।

লেখক
বার্তা সম্পাদক
সিলেট রিপোর্ট ডটকম

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031