সর্বশেষ

» ৭ মার্চের ভাষণ: ঐশ্বরিক ক্ষমতার স্পর্শে উচ্চকিত ভাষণ

প্রকাশিত: ০৬. মার্চ. ২০২১ | শনিবার


Manual6 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিল এই ভাষণ।

Manual7 Ad Code

অন্যদিকে এই ভাষণটি তথাকথিত পরিশীলিত বাচন ভঙ্গিতে না গিয়ে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের ভাষা থাকায় গোটা দেশের মানুষকে আপ্লুত এবং মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ফলে এই ভাষণ স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এরকম মন্তব্য করেছেন দেশের সাংস্কৃতিক-নাট্য এবং ভাষা বিশেষজ্ঞরা।

বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন ইতিহাসে তার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না। আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ এড্রেস’ বা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় চার্চিলের ভাষণসহ অন্য কোন ভাষণের সঙ্গে এ ভাষণের তুলনা চলে না।

এই দেশের মাটি মানুষ নিঃস্বর্গ প্রকৃতি এবং জীবনধারায় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই ভাষণটি মনে হয় যেন বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী সাধনায় ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে ভাষণটি প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন। এমনো মনে হয়, বাঙালির হাজার বছরের দুঃখ-বেদনা, বঞ্চনা এবং ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার ইতিহাস, কৃষক, কৈবর্ত, উপজাতিদের বিদ্রোহ প্রভৃতির বারুদ ঠাঁসা উপাদানে তাঁর সচেতন এবং অবচেতন মনে এই ভাষণটি তৈরি হয়ে প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়েছিল।

৭ মার্চ কি এক অলৌকিক মুহূর্তে সেই ভাষণটি অমন অসাধারণ ভাষা, ভঙ্গি ও আঙ্গিকগত স্বতন্ত্রে বাঙ্গময়তার সঙ্গে প্রকাশিত হলো, যা মনে হয় যেন এক ঐশ্বরিক ক্ষমতার স্পর্শে উচ্চকিত ভাষণ। যে ভাষণ মানুষকে তার মর্মমূল থেকে গভীরভাবে উদ্দীপ্ত এবং জাগ্রত করে তুলেছিল।

এতে করে এই ভাষণের পরতে পরতে যুক্ত হয়ে থাকা দ্রোহের বাণী মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে, এমনকি প্রয়োজনে লড়াকু মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকায় উত্তীর্ণ করে তোলে। এই জন্যই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতার বীজমন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের অর্নিশেষ প্রেরণা এবং বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে আধুনিক ইতিহাসের একটি অনন্য রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা এবং আন্দোলনের দলিল হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এতে ভাষাগত যে উৎকর্ষ আছে তা রীতিমত বিষ্ময়কর।

Manual2 Ad Code

তিনি বলেন, কলকাতা কেন্দ্রিক ভাষার বাক্য প্রকরণ রীতির বিপরীতে পদ্মা পাড়ের ভাষা ও বাক্য প্রকরণ রীতির উন্মেষ ঘটেছিল এই ভাষণের মধ্যে। এতে করে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা হচ্ছে-বাংলা ভাষা একটি সুনির্দিষ্ট দিকে বাঁক নেয়, যা পোশাকী ভাষার বিপরীতে ভাটি বাংলার মৃত্তিকা সংলগ্ন ভাষা। এ কারণে এটি শুধু রাজনৈতিক দলিল নয়, একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল এই ভাষণ।

তিনি বলেন, ভাটি বাংলার খরস্রোতা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ধ্বনি এবং ভঙ্গি এই ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল। যার কারণে সারাদেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত এই ভাষণ শুনেছে-যার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে যুগ যুগ ধরে।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, সেদিনের ভাষণ পাঠ করলে বিভিন্নভাবেই স্বাধীনতার মর্মার্থ অনুধাবন করা যায়। ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো ছিল একটি চূড়ান্ত লড়াইয়ের নির্দেশ।

ভাষণে সবকিছুকে ছাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এর পরেই অকুতোভয় বাঙালি এবং সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তির চূড়ান্ত লড়াইয়ে।

Manual8 Ad Code

ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তি কত যে প্রচ- হতে পারে তা দখলদার বাহিনী তো বটেই সারাবিশ্বের মানুষও দেখেছিলেন অবাক বিষ্ময়ে।

বিশিষ্ট জনেরা মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সবাইর মধ্যে সচেতনতা এবং প্রেরণা সৃষ্টি করেছিল। আর সে কারণে মানুষ নির্দ্বিধায় প্রাণ বিসর্জন দিতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত কণ্ঠে যে বজ্র বাণী সেদিন উচ্চারিত হয়েছিল সেটিই ছিল আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code