সর্বশেষ

» এশিয়ার শক্তিধর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশীদের সমস্যা সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৯. ডিসেম্বর. ২০২০ | বুধবার


Manual6 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি:: বাংলাদেশসহ মোট ১৬টি দেশ থেকে কর্মী নেয় এশিয়ার ৪ নং শক্তিধর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। বিভিন্ন পেশায় সচ্ছতার নিরূপণে নিয়োগ দেওয়া হয় রিক্রুটমেন্ট পয়েন্ট সিস্টেমের ভিত্তিতে। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় অনলাইনে। আবেদনকারী কোরিয়ান ভাষা, কর্মদক্ষতা, শারীরিক যোগ্যতা বৃত্তিমূলক কাজের যোগ্যতা, প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ ও চাকরির অভিজ্ঞতা- ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়নের ভিত্তিতে পয়েন্ট পান। সেসব পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম দফা প্রার্থী বাছাই করা হয়। এরপর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট ভিত্তিক দক্ষতা পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার কর্মী বাছাই হয়। দুই রাউন্ড মিলিয়ে সর্বাধিক নম্বর পাওয়া ব্যক্তিদের চূড়ান্ত করা হয়। কোরিয়ার নিয়োগ দাতাদের এসব তথ্য সরবরাহ করে উপযুক্ত কর্মী খুঁজে পেতে সহায়তা করা হয়। পরীক্ষা, যাচাই বাছাইয়ের পরে কর্মীদের এই তালিকা দেয়া হয় দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। সেখান থেকে তাদের চাহিদা মতো কর্মী বেছে নেন। বাছাইকৃত কর্মীদের মেয়াদ থাকে দুই বছর। এর মধ্যে কোরিয়ান কোম্পানি তাদের বেছে না নিলে পুনরায় পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানার মালিকদের বিভিন্ন এসোসিয়েশন রয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডাটাবেজ থেকে বিভিন্ন মালিকরা তাদের প্রয়োজন বা চাহিদা মত কর্মী নেন। অনলাইন ডাটাবেজ এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) স্কিমের আওতায় কোরিয়ান মালিকপক্ষ বাংলাদেশ থেকে বা অন্য যেকোন দেশ থেকে কর্মী নিতে পারে। আর এর পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।
আর সিস্টেমকে EPS তথা employee permit system বলা হয়।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া প্রথম শুরু হয় এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশের কর্মীর সংখ্যা অন্যান্য দেশ থেকে অনেক বেশী ছিলো। কর্মীদের কর্ম যোগ্যতা নৈপুণ্যেতা দেখে তখনকার সময় অনেক নিয়োগ দাতা শুধু বাংলাদেশীদের নিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করতেন। এই খানে আরেক বিষয় উল্লেখ করতে হয় কোরিয়ান ভাষা দিক দিয়েও বাংলাদেশীরা অন্যান্য দেশ থেকে এগিয়ে ছিলেন। দ্রুত আয়ত্ব করতে পারতেন কোরিয়ান ভাষা। এই কারনে নিয়োগ কর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার আগ্রহ বেশী ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশীদের কোটার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কোটা কমে যাওয়ার পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমরা সবাই কিছু না কিছু দায় কর্মীদের উপর বর্তায়।
এক ইপিএস কর্মী মাহবুব আব্দুল্লা জানান, তিনি পাঁচ বছরের মধ্যে চার বার চাকরী পরিবর্তন করেছেন। পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথমত কোম্পানিতে খাবার এর সমস্যা, কোরিয়ান খাবার দ্বিতীয়ত সিনিয়র ভাইদের দ্বারা কাজের জায়গায় মানসিক নির্যাতনের স্বীকার। মালিকদের কাছে জুনিয়র ভাইদের নামে বদনাম করা। আরো অনেক অসুবিধা আছে চাকরি পরিবর্তন কারন। একেক জনের একেক কারন। এ তো গেলো কর্মীদের সমস্যা।
অন্যদিকে এই বছরের শুরুর দিকে চীন থেকে আসা ছোঁয়াচে অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে পুরো বিশ্ব যখন স্তব্ধ তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় কোরিয়াও অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন অনেক ছোট খাট থেকে বড় শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ধ্বস নেমে আসে অর্থনৈতিক ভাবে। অনেক ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো কর্মী ছাঁটাই করা শুরু করে। মালিক কতৃপক্ষ সব কিছু সামাল দিতে না পারায় কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সময় উপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। যা এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা আজও চলমান। তবে বর্তমানে শীত আসার সাথে সাথে করোনার ভাইরাসের আক্রমণ খুব বেশী লক্ষ করা যাচ্ছ। যা আমরা প্রতিদিন আমাদের মোবাইল মেসেজ অনশনে নটিফিকেশন আপডেট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এইদিকে এই করোনার ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে অনেক কমিটেড কর্মী দেশে গিয়ে প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস আটকে পড়ে আছেন। তবে ছুটিতে তাদের বেশিরভাগই আসতে সক্ষম হয়েছেন। তবে কিছু কিছু কর্মী আসতে পারছেন না প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্যের অভাবে এবং ফ্লাইট জটিলতার কারনে। অনেকের ভিসার ও ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়।
এই দিকে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার শ্রম মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য মন্তনালয় এক বিবৃতিতে নতুন করে ভিসা প্রদানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।এর ফলে বাংলাদেশের কমিটেড কর্মী হিসাবে যারা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তারা সবাই আটকে পড়ে আছেন।
সাম্প্রতিক কালে আটকে পড়াদের ফেরাতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কথা হয়েছে। আটকে পড়া কর্মীদের ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদও কোরিয়ার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্ত এখন সবকিছুকে ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে জামানত ইস্যুর বিষয়টি। জামানত বিষয়ে কোরিয়ায় বসবাসরত ইপিএস কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অধিকাংশ ইপিএস কর্মীরা জামানতের বিলুপ্তি চান।
বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশী ইপিএস কর্মী থেকে প্রাপ্ত জামানত বিষয়ক নির্দেশিকা ২০২০ জারী করে। তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি ইপিএস সাধারণ কর্মীদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা এবং দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশি রি-এন্ট্রি কর্মীদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা জামানত হিসেবে পে-অর্ডার বোয়েসেল বরাবরে দিতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে এ জামানত কেন এবং কি কারণে নেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রবাসী কর্মীরা তাদের রক্ত আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে সেখানে এ ধরনের একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে ইপিএস কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার জম্ম দিচ্ছে।

Manual4 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

করোনার কারণে বাংলাদেশী ইপিএস কর্মীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। যেখানে আগে ছিল ১৩ হাজার, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৯ হাজারে। দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশী শ্রম বাজারে যেখানে ইপিএস কর্মী বাড়ানো দরকার, সেখানে জামানতের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বাজার হারানো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

Manual6 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code