কোটা পদ্ধতিঃমেধার মূল্যায়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে অন্তরায় || আশরাফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯. জুলাই. ২০২৪ | শুক্রবার


Manual6 Ad Code

আশরাফুল ইসলাম: কোটা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নীতির অংশ (Compensatory principle)-যা চাকরির ক্ষেত্রে মেধার নীতিকে বাদ দিয়ে ক্ষতিপূরণ নীতি অনুসরণ করে করা হয়।

বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিগত কয়েক বছর থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছে। যা সম্প্রতি এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন সচিবের এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত আছে। এসব পদে চালু থাকা কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি); নারী ১০ শতাংশ; জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।

কিন্তু এ কোটা নীতির মধ্যে সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কারণ এটি পরিমাণে অনেক বেশি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখা বলছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৭ জনের নাম বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত হয়েছিল। যা ১৯৭১ সালের দেশের জনসংখ্যার ০.৩ শতাংশের এর কম।বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে সদস্য সংখ্যা দেশের জন সংখ্যার ০.৫ শতাংশের কম হবে। মাত্র ০.৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ চাকরির যৌক্তিকতা নেই।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে কোটা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নীতির অংশ (Compensatory principle) কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা হচ্ছে পুরস্কৃত করার নীতি (Reward principle)। এই পুরস্কৃত করার নীতি সামাজিক ন্যায্যতা বিরোধী, নৈতিকতা বিরোধী এবং সাম্য বিরোধী।

Manual3 Ad Code

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,একদিকে মেধাবীরা চাকরি পাননি, আবার অন্যদিকে ২৮-৩৮ তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তত ছয় হাজার পদ খালি ছিল। এমনকি আলাদাভাবে শুধু কোটা পূরণের জন্য ৩২ তম বিসিএস করা হলেও সেখানে সকল কোটার মোট ১ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সহ অন্য প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা দেখা যায়। আবার আবার একজন মুক্তিযোদ্ধার সকল ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি এই কোটা ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করছেন।এইসব কারণে দিনদিন কোটা ব্যবস্থার বিপক্ষে জনমত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Manual3 Ad Code

কোটাবিরোধী আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কারীদের একজন নাহিদ ইসলাম বলেন, “সরকারি চাকুরির নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কোটা থাকার এখন আর কোনো যৌক্তিকতা নেই ৷ কারণ এখন যারা এই সুবিধা পাচ্ছেন তারা তৃতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সন্তান ৷ মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ওই কোটা ছিলো৷ এখন তো আর দরকার নেই।

Manual6 Ad Code

বাংলাদেশে এখন দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ কোটার সংস্কার দাবি করলে অনেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী’ বা ‘রাজাকার’ ট্যাগ লাগাচ্ছেন। এ ধরনের প্রবণতা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে গত ১৬ ও ১৭ জুলাই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই অপবাদের রাজনীতি বন্ধ না হলে সমাজে নানা সংকট তৈরি হবে।

Manual1 Ad Code

এই কোটা ব্যবস্থার কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারি চাকুরি পেতে সনদ না থাকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীদের ওই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের, সিক্সটিন ভিডিশনের মুক্তিযোদ্ধাদের এবং রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা হওয়াদের উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সনদপত্র না থাকা প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীরা সেরাদের মধ্যে স্থান করে নিয়েও শুধুমাত্র কোটার কারণে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীদের জন্য সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বঞ্চনার দায় কে নেবে ?

আধুনিক গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কোটা নয় মেধাকে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হোক এটাই কাম্য।

লেখকঃ তরুণ কলাম লেখক।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code