সর্বশেষ

» সিলেট নগরীতে কমছে না ছিনতাই

প্রকাশিত: ০৯. জানুয়ারি. ২০১৭ | সোমবার

Manual3 Ad Code

সাইফুল আলম: নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। কখনও হাঁটা পথে, কখনোবা গাড়ি গতিরোধ করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের জিনিসপত্র। এছাড়া সাধারণ মানুষ রিকশায় যাতায়াতের সময় মোটরসাইকেল থেকে ছোঁ মেরে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও জিনিসপত্রসহ ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। কিছুদিন পূর্বে সিলেট রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা যান এনজিও কর্মী। এছাড়া ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া মানুষের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। আহতদের অনেকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাসায় চলে যান। কিন্তু পুলিশের খাতায় এসব ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে। আবার অনেকে অনেকেই আইনি ঝামেলায় পড়তে চান না, ফলে পুলিশের কাছেও যাচ্ছেন না।

অভিযোগ উঠেছে, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশি টহল বাড়ানো হলেও কমছে না এসব ঘটনা। যদিও পুলিশ বলছে, চুরি কিংবা ছিনতাই ঠেকাতে তারা কাজ করছেন। অভিযানে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ছিনতাই মামলা পুলিশ নিতে চায় না। ছিনতাই মামলার সংখ্যা বেশি হলে এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ধরা হয় বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের জিডি করতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

Manual8 Ad Code

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকাসক্তির কারণে চুরি-ছিনতাই যেমন বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করছে না ছিনতাইকারীরা। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া করে তুলছে। তাদের দৌরাত্ম্যে নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উঠিত বয়সী ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগই মাদকসেবী। মাদকের টাকার জন্যই তারা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। রাত নেমে আসলে এ আতঙ্ক বাড়ে কয়েকগুণ। নগরের কিছু এলাকায় অনটেস্ট বা নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে ছিনতাই করে। এসময় ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পথচারী বা সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সাসহ সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। আর এতে বাধা দিলে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটছে। এসময় ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হচ্ছেন ভিকটিমরা। গুরুতর জখম থেকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

Manual2 Ad Code

গত বুধবার রাত ৯টার দিকে সিলেট রেলস্টেশন থেকে লিংক রোড দিয়ে হুমায়ুন রশীদ চত্বরে রিকশা যোগে যাচ্ছিলেন এনজিও সংস্থা সীমান্তিকের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। এসময় রেল লাইনে অবস্থান করা দুই ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে। তখন আনোয়ার তাদের দু’জনকে জাপটে ধরে। তিনি একজনের হাতে কামড় দিলে আরও দুইজন ছিনতাইকারী এগিয়ে আসে। পরে চারজন মিলে তার গলায়, পিঠে, উরু এবং নিতম্বসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে আনোয়ারকে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী বলেন, রাত অনুমান সাড়ে ১২টায় আমি হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে রিকশাযোগে বাসা ফিরছিলাম। পথিমধ্যে ব্রিজে ওঠার আগেই অন্ধকার জায়গায় দুই যুবক রিকশা আটকিয়ে আমাকে ঘিরে ফেলে। আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিতে চাইলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে চিৎকার করলে আমার হাতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যাই। কিন্তু থানায় এ ব্যাপারে কোনও মামলা করিনি। আর কোনও ঝামেলায় পড়তে চাইনি। এখনও এটা নিয়ে আতঙ্কিত থাকি।

Manual6 Ad Code

গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ছিনতাইয়ে জড়িত অনেকেই মাদকাসক্ত। তারা মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে জড়িয়ে যায় ছিনতাইয়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা সংগ্রহ না হচ্ছে এবং মাদক নিতে না পারছে ততক্ষণ কোনও শান্তি নেই। এই সময় মাদকাসক্ত ছিনতাইকারীরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা পেলেই উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। যা অনেকটাই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের সূত্রগুলো বলছে, নগরের বিভিন্ন এলাকায় স্পটভিত্তিক ছিনতাইয়ের বেশ কিছু জায়গা তারা চিহ্নিত করে গোয়েন্দা নজরদারি করে থাকেন। সাধারণত যেসব এলাকার সড়ক একটু নিরিবিলি ও সড়কবাতি থাকে না সেসব এলাকা ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নেয় ছিনতাইকারীরা। আর ভোরের দিকে সিলেটের বাইরে থেকে বাস, ট্রেন টার্মিনালগুলোকে টার্গেট করে ছিনতাই করে থাকে।

Manual5 Ad Code

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেন, রাতে এবং ভোরবেলা রাস্তা খালি থাকার কারণে ছিনতাইয়ের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ছিনতাই বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিরোধে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে। যেকোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, যদি কেউ মামলা করতে গিয়ে ফেরত আসে তাহলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোন ঘটনায় ভুক্তভোগীরা যাতে থানায় গিয়ে আইনি সহযোগিতা পান সে বিষয়ে এসএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code