সর্বশেষ

» মেজর সিনহা হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল কমিটি

প্রকাশিত: ০৭. সেপ্টেম্বর. ২০২০ | সোমবার


Manual8 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

 

তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।

 

এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তদন্ত কমিটির সদস্যরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আসার পর তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিটির প্রধান।

 

চার সদস্যের এ কমিটির অন্যরা হলেন- সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।

 

এ সময় ৮০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিও জমা দেয়া হয়।

 

Manual3 Ad Code

সিনহা হত্যায় বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। তবে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজতে ফৌজদারি তদন্তের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ ও সুষ্ঠু তদন্তে একটি যৌথ বাহিনী গঠনসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

 

ঘটনার দিন পাহাড়ে মেজর সিনহার দীর্ঘ সময় অবস্থান করাকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। বলা হয়, সিনহা কেন মারিশবুনিয়া পাহাড়ে গিয়েছিলেন? সেখানে পাহাড়ের দৃশ্য ভিডিও করার জন্য চার ঘণ্টা সময় লাগার কথা না। তাই অস্বাভাবিক এ বিষয়টি ফৌজদারি তদন্তে অনুসন্ধান করে দেখা যেতে পারে।

 

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান রোববার রাতে বলেন, ঘটনার কারণ, উৎস, পুনরাবৃত্তি রোধ ইত্যদি নিরূপণে কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা উৎস ও কারণ বের করেছি। আমাদের মতামত দিয়েছি।

 

এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে ১৩টি সুপারিশ দিয়েছি। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির মূল প্রতিবেদন হল ৮০ পৃষ্ঠার। এর সঙ্গে ছবির অ্যালবাম আছে ২১ পৃষ্ঠা। এছাড়া সংযুক্তি কাগজ আছে ৫৮৬ পৃষ্ঠা। তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে।

 

এসব বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিটির সব সদস্য সর্বসম্মতভাবে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কী আছে সে বিষয়ে আমরা বাইরে বলতে পারব না। মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। আপনারা সেখান থেকে জানতে পারেন।

 

খসড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডাকাত আসার তথ্য সঠিকভাবে ভেরিফাই (যাচাই) না করেই অভিযান শুরু করা হয়। অভিযান শুরুর আগে অতিরিক্ত ফোর্স নেয়া হয়নি।

 

পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত শুধু কৃতিত্ব পাওয়ার আশায় গুলিবর্ষণের মতো হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিনা সেটা ফৌজদারি তদন্তে বের করে আনতে হবে।

 

নিছক আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছিলেন কিনা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা তাও ফৌজদারি তদন্ত করে বের করতে হবে।

Manual2 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

মেজর (অব.) সিনহা গাড়ি থেকে নামার সময় অস্ত্র নিয়ে নেমেছিলেন নাকি পুলিশ সদস্যরা তার হাতে অস্ত্র দিয়েছিলেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি প্রতিবেদনে।

বলা হয়, এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকায় তা ফৌজদারি তদন্তে বের করতে হবে। পাহাড়ে ডাকাত উঠেছে বলে গ্রামের লোকদের মাইকিং এবং পুলিশকে ডাকাতের তথ্য দেয়ার বিষয়েও স্পষ্ট করে তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু বলা হচ্ছে না।

Manual2 Ad Code

 

এ বিষয়ে বলা হচ্ছে- এলাকাবাসী কি ভুলক্রমে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তা ফৌজদারি তদন্ত ছাড়া বের করা সম্ভব নয়।

 

সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়, সিনহার গাড়ি থেকে উদ্ধার করা ইয়াবা ও গাঁজা পুলিশ পরিকল্পিতভাবে দিয়েছিল।

 

এ বিষয়ে সিনহার সহযোগী সিফাতের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এত গাঁজা গাড়িতে থাকার কথা নয়।

 

ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার ও একাধিক সাক্ষীর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে- ঘটনার পর মেজর সিনহার গলায় পা দিয়ে চাপ দেয়া হয়েছে। এতে গলায় দাগ পড়ে গেছে। তবে সিনহার গলায় কে পা দিয়ে চাপ দিয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

 

ঘটনার পর সিনহাকে কেন দেরি করে হাসপাতালে পাঠানো হল? এটা ইচ্ছাকৃত কিনা তা ফৌজদারি তদন্তে বের করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

 

এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। গাড়ি পেতে দেরি হওয়ার কারণে সিনহাকে হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হয়েছে।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুপারিশমালায় আরও আছে, ঘটনার ক্রাইম সিন সংরক্ষণে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দিতে হবে।

 

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা বেশি হওয়াতে ছোটখাটো ঘটনাতে অস্ত্র ব্যবহারে বাহিনীর সদস্যরা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকেন।

 

এটা বন্ধ করতে হবে। গুলিবর্ষণের নির্বাহী তদন্তের সময় নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের ভূমিকা কি থাকে তা তদন্ত করতে হবে বলে প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হচ্ছে।

 

৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ায় এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহত হন। ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

 

পরে কমিটি পুনর্গঠন করে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানকে এর প্রধান করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সরকার ৭ কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দিলেও তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়।

 

এদিকে সিনহা নিহত হওয়ার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে।

 

৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

 

এ মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

 

এদের মধ্যে ৭ জন পুলিশ, তিনজন পুলিশের করা মামলার সাক্ষী এবং অন্য তিনজন হলেন এপিবিএনের সদস্য। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেককেই র‌্যাব হেফাজতে দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়।

 

এরই মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দ দুলালসহ ৮ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code