সর্বশেষ

» করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হলে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে

প্রকাশিত: ০৯. জুলাই. ২০২১ | শুক্রবার

চেম্বার ডেস্ক:: করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হলে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে খেটে-খাওয়া আড়াই কোটি মানুষের খাবার নিশ্চিত না করে এ কথা চিন্তাও করা যাবে না বলে মত তাদের।

 

এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মেডিভয়েস।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,করোনা থেকে সুরক্ষায় যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রদানের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। এগুলো নিশ্চিতের মাধ্যমেই করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান লকডাউনের পরিবর্তে কারফিউ বা ১৪৪ ধারার মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল এনসিডিসি পরিচালক ও অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

 

তবে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীত মত দিয়েছেন প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।

 

কারফিউ কোনোক্রমেই স্থায়ী সমাধান না জানিয়ে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষকে আটকে রাখবেন? তারা আক্রান্ত হলে কোথায় যাবে? অনেকের হাসপাতালে যেতে হতে পারে। তা ছাড়া অনেক মানুষ না খেয়ে আছে। খাবারের জন্য ওরা কারফিউ ভাঙলে ওদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ বা রোধ করতে গিয়ে তো খুনোখুনিতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। এটাকে অনেকেই সহজ সমাধান মনে করছেন, কিন্তু এটা মোটেও সহজ না। ভাইরোলজিক্যাল অনেক প্রত্যাশা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। অথচ কারফিউর কথা উঠছে। এটা তো মেডিসিন না। লকডাউন, শাটডাউন তারপর কারফিউ। আগে ভাইরোলজিক্যাল চাহিদাগুলো পূরণ করা হোক।

স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরায় গুরুত্ব দিতে হবে। একজনও যেন মাস্কবিহীন না থাকে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, অলিতে-গলিতে কোথাও কেউ মাস্ক ছাড়া থাকতে পারবে না। শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরায় অভ্যস্ত করানো গেলে করোনা প্রতিরোধ-প্রচেষ্টা সফল হবে। সেই সঙ্গে সর্বাধিক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ শনাক্ত হলে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইসোলেশনে নিতে হবে। একই সঙ্গে ওই রোগীর পরিবারকে তিন সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। পরে নেগেটিভ হলে তাদের মাস্ক পরে বের হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এ সময় আশপাশের সবাই মিলে তাদের সাহায্য করবে। প্রয়োজনে বাজার পর্যন্ত করে দিবে। ওষুধ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ করবে। যেন তাদের বের হতে না হয়।

 

করোনা নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রখ্যাত এ ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘আইসোলেশনে থাকা রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই সম্পৃক্ত হবেন। এ রকম ভয়াবহ মুহূর্তে কোন বাসায় কি হলো আমরা কিছুই জানলাম না—এভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সেনা সদস্য, বিজিবি, র‌্যাব সব করে দেবে—আমরা এর মধ্যে থাকবো না, তা হবে না।’

 

রাজধানীতে লকডাউনের তেমন প্রতিফলন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় দুই-তিন জায়গায় লকডাউন দেখলাম। একটা বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর রোড ও যাত্রাবাড়ীর দিকে। আর তো কোথাও লকডাউন নাই। তাতে কি করোনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়ে গেলো?’

 

কারফিউ’র চিন্তার তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘কারফিউ দিলে তো কোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানই দরকার নাই। কারফিউর চিন্তা ভাইরোলজিক্যালি সঠিক নয়। এ চিন্তাকে অপরিণামদর্শী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন কারফিউ খুলে দেওয়া হবে—তখন দেখবেন, হয় তো করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু অনেক বাসায় লাশ পড়ে আছে। তারা না খেয়ে প্রাণ হারাবে। কারণ আমার বাসায় চাল থাকলেও অনেকের বাসায় নাই। খাবারের অভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই বাচ্চারা মারা যাবে। শুধু পানি খেয়ে থাকা সম্ভব না। এসব বিষয় চিন্তা করতে হবে। এক কেন্দ্রীক চিন্তা করলে হবে না। উভয় দিক দেখতে হবে।’

 

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, মানুষকে বেশি দিন আটকে রাখা ঠিক হবে না। একজন রিকশাওয়ালার ঘরে খাবার নাই। সে বিপদে পড়েই ঘর থেকে বের হয়। কারফিউ দিলে যারা দিন আনে দিন খায়—এ রকম দুই-আড়াই কোটি মানুষ, তাদের কি অবস্থা হবে? বরং যে কয় দিন কারফিউ থাকবে সেই দিনগুলোতে তাদেরকে খাবার সরবরাহ করতে হবে, পরিবারের সদস্যদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে হবে। অসুখ হলে হাসপাতালে নেওয়া ব্যবস্থা থাকতে হবে। করোনা ছাড়াও কারও হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, লিভার কিংবা কিডনি ফেইলিউর হতে পারে। এখন হাসপাতালগুলোতে অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। তাদেরকে ঘরে বন্দি রেখে মেরে ফেলা যাবে না। এসবের সুষ্ঠু সমাধান করে কেউ চাইলে কারফিউ দিতে পারেন। তা না হলে কারফিউ দিয়ে লাভ হবে না।

 

ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ বের হলে তাকে গুলি করে মারা যাবে কিনা এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আরামে ঘরে বসে মুখে কারফিউর কথা বলা সহজ। বাস্তবতা কঠিন। এটি উপলব্ধি করতে হবে। বাস্তবের সঙ্গে মিলতে হবে। কারফিউর নিয়ম হলো, কেউ বের হলে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। অনেক লোক পেটের দায়ে বের হচ্ছে, তাদের বক্তব্য হলো: আমরা করোনায় মরবো না। মরলে না খেয়ে মরবো। এসব হাহাকার গণমাধ্যমেও প্রচার হচ্ছে। এ রকম একজন আমার কাছে ক্ষুদেবার্তায় বললো, আপনারা শুধু কথা বলছেন, আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন না। আমাদের একটি ট্যাবলেট দেন, খেয়ে মরে যাই। আমরা না খেয়ে মারাই যাচ্ছি।’

পৃথিবীর অনেক দেশ এ সংকট পাড়ি দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা লকডাউন-কারফিউ উঠিয়ে দিচ্ছে। ব্রিটেনের মতো দেশ উঠিয়ে দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা কোনো দিন যাবে কিনা, জানি না! আমাদের জীবন-জীবিকা সচল রেখে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

July 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031