» সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে ডায়রিয়া-চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ

প্রকাশিত: ২৮. মে. ২০২২ | শনিবার

চেম্বার ডেস্ক:: সিলেটে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে মোট ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩ জনে। একদিন আগে বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ১৫৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৩ জন, সুনামগঞ্জে ৫৭ জন এবং বাকিরা হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে (শুক্রবার রাত পর্যন্ত) এ বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫জন। একইসঙ্গে চর্মরোগ, জ্বর ও শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬১ জন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের ৪টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলার ১৩টি, সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি, হবিগঞ্জ জেলার ৮টি ও মৌলভীবাজার জেলার ৮টি উপজেলাকে ডায়রিয়া উপদ্রুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। সিলেট বিভাগে ৪২৭টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪০টি, সুনামগঞ্জে ১২৩টি, হবিগঞ্জে ৯০টি ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।

এদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হারে শীর্ষে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এই জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৬৫ জন। সুনামগঞ্জের পরে রয়েছে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলা। হবিগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৫ জন। আর সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৯ জন। অপরদিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৪ জন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ মে থেকে ২২ মে রবিবার পর্যন্ত ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ৩ দিনে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলায় ১৪০টি এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এছাড়া কানাইঘাটে ১২টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, বিশ্বনাথে ১১টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জকিগঞ্জে ১০টি, সদর উপজেলায় ১০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, ওসমানীনগরে ৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৭টি ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য ৩টি টিম রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর দত্ত ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলা সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চর্মরোগ নিয়ে অনেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ছাড়া অন্যান্য রোগের রিপোর্টিং এখনো পুরোপুরিভাবে নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেংগু রিপোর্টিং করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের ৩টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এ ছাড়াও ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন করব, যা আগামী ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, নগরীর বন্যা কবলিত বস্তি এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য সিটি কর্পোরেশেনের পক্ষ থেকে নগরীতে ১ লাখ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, সিলেটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী বাড়ছে। তবে আতঙ্কজনক পর্যায়ে নয়। গ্রামীণ জনপদ নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। তবে সিটি কর্পোরেশন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ নগরীর যেসব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে এর একটা বিশাল জনগোষ্ঠী বস্তিবাসী। এই নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

সূত্র: এবিনিউজ

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031