সর্বশেষ

» কাল মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯. অক্টোবর. ২০২২ | রবিবার

Manual1 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু আগামীকাল (সোমবার) উদ্বোধন করবেন।দুপুর ১২টায় তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন তিনি।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত।এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কারণ সেতুটি কালনাঘাট থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। কারণ এতে ঢাকা থেকে দূরত্ব হবে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার।

গত ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধ্যে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে ফলে তাদের যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আরও ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করতে হয়। এ সেতুর ফলে এখন আর সেই দূরত্ব করে যাবে।

প্রকল্পের কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ২৭ দশমিক ১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চগতির লেন সাড়ে চার কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।

যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে সহজ করবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের বাসিন্দারা একদিনের মধ্যে ঢাকায় তাদের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে পারবেন। সেতুটি চালু হলে কালনা ফেরি ঘাট হয়ে যেতে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বন্দর উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে, অর্থনীতি চাঙ্গা করবে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করবে।

সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে।

Manual5 Ad Code

তিনি বলেন, এতে দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য ভাবে চাঙ্গা হবে। কারণ, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যানবাহনের ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে।

সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে বলেও জানান তিনি।

সেতুটি পূর্বে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জকে পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এখন মোটরচালিত নৌযানই নদীর দুই পাড়ের মানুষ ও অন্যান্য এলাকার জনসাধারণের জন্য পারাপারের প্রধান মাধ্যম।

মদনগঞ্জের বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী তানিয়া জানান, প্রতিদিন সকালে তাকে পায়ে হেঁটে গুদারাঘাটে আসতে হয় এবং তার কর্মস্থলে যেতে নৌকায় নদী পার হতে হয়।

তিনি বলেন, প্রায়ই বড় জাহাজের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষে যাত্রীদের মৃত্যু হয়। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন নৌকায় করে নদী পারাপার করা আমাদের জন্য ভীতিকর হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে ভয় বেড়ে যায়। সেতুটি চালু হলে আমাদের চলাচল সহজ ও নিরাপদ হবে।’

বন্দর উপজেলার বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইউসুফ আতিক মালিক বলেন, সেতুটি স্থানীয় এবং জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

তিনি বলেন, এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকার যাত্রাবাড়ী রুট ব্যবহার করে পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে যায় অথবা চাষাঢ়া ও সাইনবোর্ড রুট ব্যবহার করে গন্তবে পৌঁছায়।

শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হলে পঞ্চবটি বিসিক শিল্প এলাকা, পঞ্চবটি মোড়, চাষাঢ়া মোড়, সাইনবোর্ড, নারায়ণগঞ্জের চট্টগ্রাম সড়ক বা ঢাকার পোস্তগোলা ও শনির আখড়া রুটে যানবাহনকে তীব্র যানজটের সম্মুখীন হতে হবে না বলে জানান তিনি।

প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়।

Manual1 Ad Code

প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতু নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।

Manual5 Ad Code

ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে- পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। এ ছাড়া  ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করা হচ্ছে।

শীতলক্ষ্যা নদী বন্দর উপজেলা ও সোনারগাঁ উপজেলাকে জেলা সদর থেকে পৃথক করেছে। এ দুটি উপজেলা সরাসরি সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। দুই উপজেলা থেকে জেলা সদরে যেতে কাঁচপুর ব্রিজ (শীতলক্ষ্যা-১ সেতু) ব্যবহার করতে হতো, যার জন্য নৌকায় নদীপথের মাত্র ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো।

বন্দর উপজেলায় বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে কাজের জন্য নৌকায় করে শীতলক্ষ্যা নদী পাড় হয়। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকেও মানুষ নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে বন্দর বা সোনারগাঁও উপজেলায় আসে। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি বন্দর উপজেলা ও জেলা সদরের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে।

সূত্র: বাসস

Manual3 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code