সর্বশেষ

» জাতীয় বাজেটে সিলেট অঞ্চলের কৃষি ফসলের ন্যয্য মূল্যে নিয়ে কিছু ভাবনা:শওকত আখঞ্জী

প্রকাশিত: ২৩. মে. ২০২২ | সোমবার

শওকত আখঞ্জী: 
আসন্ন জাতীয় বাজেট বৃহৎ পরিসরে দেশের প্রত্যেক অঞ্চল ভিত্তিক সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে সম্ভবনাময় প্রতিটি খাতে বিনোয়োগ করে উন্নয়নের মহাসড়কের অগ্রযাত্রার পথ অব্যাহত থাকবে তার সাথে সংকটময় প্রতিটি খাত সমস্যা সমাধানের জন্য নিরসন কল্পে দেশের অর্থনৈতিক খাতে উন্নয়নের সুচক হার বৃদ্ধির প্রয়াস রাখবে।
বাংলাদেশের যে সকল বিভাগ রয়েছে তার মধ্যে সিলেট বিভাগ অন্যতম! সিলেট বিভাগ যে চারটি জেলা নিয়ে গঠিত তা হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ,হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলা।
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেট একটি ভু-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র ধারার এযেন প্রকৃতিগত ভাবে লীলাভূমি আবাস্থল! এর একদিকে পাহাড় ঘেরা! অন্যদিকে হাওর অঞ্চল!আবার কোন কোন জায়গায় টিলা বেষ্টিত! আবার সিলেটের ভেতর দিয়ে যেসকল নদী বহমান সেগুলা হলোঃ সুরমা ও কুশিয়ারা এবং খোয়াই নদী অন্যতম!এখানে উল্লেখ্য যে,প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাতন্ত্র্য মণ্ডিত এই সিলেট অঞ্চল।
বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের একটি অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ভুমিকা রাখে।
বাংলাদেশের আয়ের অন্যতম উৎস হল রেমিট্যান্স আর এই রেমিটেন্স প্রদানকারী সিংহভাগ এই সিলেট অঞ্চলের মানুষজন! এই অঞ্চলের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দেশের অধিবাসী।
বাংলাদেশের আয়ের আরেকটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক খাত হলো চা খাত যা এই সিলেট অঞ্চলের অর্থকরী ফসল, দেশের যার মোট উৎপাদনের ৭০-৮০ শতাংশ ভাগ এই সিলেটেই উৎপাদিত হয়।

সিলেট অঞ্চলের অন্যতম একটি জেলা হলো সুনামগঞ্জ যা হাওর ঘেরা,সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জ জেলার হাওর গুলা থেকে যে কৃষি ফসল উৎপাদিত হয় তা ৯৫ ভাগ ধান! মোট খাদ্য শস্যের ৩০ শতাংশ সরবরাহকারী এই সিলেট অঞ্চল,সেই সাথে আরেকটি অর্থনৈতিক খাত রয়েছে তা হলো মৎস এবং পাথর, বালু তা থেকে উপার্জিত অর্থ জাতীয় আয়ে যোগ হয়। বাংলাদেশের আয়ের অন্যতম আরেকটি উল্লেকযোগ্য খাত এই সিলেট অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে সেটা হলো জ্বালানী খাত তা সিলেটের গ্যাস ও খনিজসম্পদ!
প্রকৃতিগত ভাবে সিলেট অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে কৃষি,মৎস্য,জালানী এবং বালু পাথরের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন খাত গুলা যা দৈনন্দিন কাজেকর্মে ব্যবহার হয় তাই এই অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম সম্ভাবনাময়। সিলেট অঞ্চল পাশাপাশি এই অঞ্চলের অর্থনীতি।
কিন্তু এই উন্নয়নের মহাসড়কে পথে সিলেট অঞ্চলের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলা ও সমাধানের কথা যথাসময়ে ভাবতে হবে । উদাহরণ স্বরুপ যদি বলি যেমন:খাদ্যদ্রব্য ভেজাল,খেটে খাওয়া কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যয্য মূল্যে না পাওয়া! হাওরের শিক্ষার হার খাঙিত হারে বৃদ্ধি না পাওয়া! পরিবেশ বিপর্যস্ততা,সামাজিক অবক্ষয়! তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সেই লক্ষ্যে কাজ করা।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা সুবিধা বঞ্চিত মানুষ যেন সহজে চিকিৎসা সেবা পায় তা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য ব্যবস্থাদি উন্নয়নে দিকে নজর রাখা হলে সিলেট অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে।
সিলেট অঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ্য হলো হাওর অঞ্চল,হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মতে বাংলাদেশের ৩৩৭টি হাওরের মধ্যে ৮০ ভাগ হাওর এই সিলেট অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে।

সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মধ্যে উল্লেখিত হাওর গুলার মধ্যে হলো: ওয়ার্ল্ড হেরি সাইট কর্তৃক ঘোষিত টাংগুয়ার হাওর এবং অন্যতম হাকালুকির হাওর,শনির হাওর,মাঠিয়ান হাওর,কর্চার হাওর দেখার হাওর ইত্যাদি। এই গুরুত্ববহ হাওর গুলির মধ্যে খাদ্যশস্য ধান উৎপাদন করে হাওর অঞ্চলের মানুষজন। অথচ প্রায় বছরেই অকাল বন্যার ফলে কৃষকের সোনালী ফসল নষ্ট হয়ে যায়,তাতে তাদের আয়ের সর্বস্বতা হারায়।
আর যে বছরে কৃষকরা সোনালী ফসল ধান ঘরে তোলে? তখন সেই উৎপাদিত ধানের ন্যয্য মূল্যে কৃষক সময় মতো পায়না!! তাই হাওর পারের কৃষকদের সময়ের দাবী হাওর অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় বাজেটে একটু ভালো করে ভেবে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ রাখার কথা ভাবতে হবে। এই হাওর অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটির মতো রয়েছে,হাওর অঞ্চল দেশের একটি অবহেলিত জনপদের নাম।
হাওর অঞ্চল জনপদের এক মাত্র ফসল বোরো ধান ও মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভর করে একটি পরিবার চলে। কৃষি আয়ে নির্ভরশীল হয়ে কৃষকদের খাদ্য,বস্র,চিকিৎসা, সন্তানাদির লেখাপড়া সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা। এই হাওর অঞ্চলের সমস্যাবলী সমাধানের লক্ষে তার জন্য আসন্ন জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থবরাদ্দ ব্যবস্থা রেখে তার সমাধানে হাওর এলাকাভুক্ত প্রাণবাহ হিসাবে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত নদী গুলা খনন করা,যথাযত সময়ে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় মানুষজনের সম্মিলিত পরামর্শে হাওরের বাধ গুলা নির্মাণ কাজ,হাওর অঞ্চলে প্রায় বিলুপ্ত মাছ ও জলজ সম্পদ রক্ষায় হাওরের বিলগুলার ইজারা পদ্ধতি প্রয়োজনীয় সংস্কার। হাওর এলাকার শিক্ষা,চিকিৎসা, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা,হাওর এলাকার অবহেলিত গোষ্টী নারীদের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন,অত্র অঞ্চলের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকাজ বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়ানো,টুরিজ্যম বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিকল্প শিল্প স্থাপনা প্রতিষ্টা করা।

হাওরের অকাল বন্যার পানি সমস্যাকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করার পাশাপাশি বনায়ন, খনিজসম্পদ, চা শিল্প,পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় আয় বৃদ্ধি সম্ভব তাই এই আসন্ন বাজেট যথাযথ কর্তৃপক্ষর কাছে উল্লেখিত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে বিনীতভাবে অনুরোধ রাখছি।
লেখকঃ
উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031