সর্বশেষ

» গান রিভিউ: মন ভরে যায় || শাহজাহান শাহেদ

প্রকাশিত: ২২. জানুয়ারি. ২০২৩ | রবিবার

শাহজাহান শাহেদ:: 

নান্দনিক শব্দের ঝংকার, বাক্যে বাক্যে অনুভূতির সমাহার এবং মোহনীয় সুরের আলিম্পনে যখন মনের মিনারে এক অপার মুগ্ধতার ঢেউ বিরাজ করে, তখনই তো একটা গীত পূর্ণতা লাভ করে। নিঃসন্দেহে ‘মন ভরে যায়’ এমন একটা গীত।
গানটির গীতিকার-সুরকার আলিফ নূর। যিনি তার সৃজনশীল নৈপুণ্য দিয়ে ইতিমধ্যে ইসলামি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘মন ভরে যায়’ ছাড়াও তার লিরিক-টিউনে সম্প্রতি রিলিজ হওয়া ‘খালিক আল্লাহ মালিক আল্লাহ’ এবং ‘ইয়া আল-বাক্বী’ দর্শকমহল বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

গানের শিল্পী হুমায়রা আফরিন ইরা। শুদ্ধ সংস্কৃতি অঙ্গনে শিশুশিল্পীদের মধ্যে দর্শকনন্দিত একটি কন্ঠ। সাংস্কৃতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ইরামণি তার গায়কী দিয়ে দর্শকমহলে সমাদৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ গানের গায়কীও তার ব্যতিক্রম নয়। তার অন্যান্য গানের তুলনায় এ গানে আরো বেশি হৃদয় থেকে গেয়েছে বলে মনে হয়েছে। সে যে একসময়ের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী হাসনাহেনা আফরিনের মেয়ে তথা শিল্পী মায়ের শিল্পী কন্যা— সেটা গানে আরো প্রস্ফুটিত হয়েছে।

গানটির অডিও-ভিডিও নির্মাণে ছিলেন তরুণ সাউন্ড ডিজাইনার ও নির্মাতা তানভির খান। উদীয়মান এ কম্পোজার রুচিশীল কাজের মাধ্যমে দিনদিন নিজেকেই যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার হাতের স্পর্শে নান্দনিকতা আর রুচিশীলতার চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন।

▪️লিরিক পর্যালোচনা :
প্রথমত, এ গানে গীতিকার তার মনের মাধুরি মিশিয়ে দারুণ দারুণ শব্দালংকার দিয়ে উপমা প্রয়োগ করেছেন। ‘কুঞ্জ’, ‘মালঞ্চ’, ‘দূরবাসী চাঁদ’, ‘বাহারা’, ‘কারু’— এমন চমৎকার চমৎকার শব্দের স্বার্থক ব্যবহার করেছেন। যা তার চিত্তাকর্ষক শব্দচিন্তার পরিচয় বহন করে।

দ্বিতীয়ত, গানের দৈহিক গঠন দেখে এটা প্রচলিত ছন্দ-মাত্রাহীন লিরিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আলিফ নূর একজন ছন্দ-মাত্রা সচেতন গীতিকবি। তার বেশিরভাগ গান-কবিতা সে আলোকেই সৃজিত হয়েছে। কিন্তু এখানে তিনি সেটা করেননি। আর সেই না করার কারণ হচ্ছে, গানটা সুরের উপর ভিত্তি করে লেখা। যদিও কথার উপর ভিত্তি করে সুর করাটাই ব্যাকরণসিদ্ধ নিয়ম। আলিফ নূর কেবল গীতিকার হলে এটা দোষনীয় বলা যেতো। কিন্তু তিনি গীতিকারের পাশাপাশি একজন সুরকার ও শিল্পী— সেহেতু তার এ পন্থাকে ভুল-অশুদ্ধ বলাও যাচ্ছে না। কারণ, যে গড়তে পারে তার ভাঙারও স্বাধীনতা থাকা উচিত। তাছাড়া এরকম সুরাশ্রিত লিরিক আলিফ নূর যে প্রথম করেছেন, তা কিন্তু নয়। মেইন স্ট্রিমের জনপ্রিয় সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শওকত আলী ইমনসহ অনেকেই সুরের উপর ভিত্তি করে লিরিক লিখে থাকেন।

তৃতীয়ত, যদিও সুরের উপর ভিত্তি করে গান রচনা হয়েছে বা হচ্ছে— তাই এখানে ছন্দ-মাত্রা নিয়ে আর কথা না বাড়ালেও অন্ত্যমিল নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা দরকার। গীতিকার অন্তত অন্ত্যমিলে আরেকটু নজর দিতে পারতেন। ‘সারা’র সাথে ‘নাড়া’, ‘কুঞ্জে’র সাথে ‘মালঞ্চে’, ‘বাহারা’র সাথে ‘গড়া’ এবং ‘কারুতা’র সাথে ‘সবিতা’— এগুলো দুর্বল অন্ত্যমিল। আর দু’টি অন্তরা’র ব্রিজলাইন সমাপনীতে (কত উপমায়, কত মহিমায় তারই গড়া) একটি লাইন-ই ব্যবহার করেছেন— যা একজন গীতকারের জন্য সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়াটাই কাম্য।

▪️টিউন পর্যালোচনা :
সুরারোপে সুরকার যেন এক অমীয় সুধা ঢেলে দিয়েছেন। বারবার শোনার খোরাক প্রোথিত করেছেন। গানের স্থায়ী, অন্তরা এবং ব্রিজলাইন ভিন্ন-ভিন্ন সুরের ব্যঞ্জনা প্রয়োগে সুরকার শতভাগ সফল হয়েছেন। সুরকারের এ স্বতন্ত্র সুরের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তিনি আরো বিশাল পরিমন্ডলে সমাদৃত হবেন নিঃসন্দেহে।

পরিশেষে, গানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করে ‘গান রিভিউ’ -এর সমাপ্তি টানছি। আমার জ্ঞানগত দুর্বলতার দরুণ ব্যাখ্যায় কিংবা তথ্যে কোনো ভুল পরিলক্ষিত হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

~ শাহজাহান শাহেদ
সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মী, সিলেট।

গানের লিংক-

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

Please continue to proceed