সর্বশেষ

» সিলেট ৫ আসন: মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন পুরোদমে নির্বাচনমুখী

প্রকাশিত: ১৮. জুন. ২০২৫ | বুধবার

তাওহীদুল ইসলাম: সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনকে দুয়ারে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নেতাকর্মীরা জানান, সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন পুরোদমে নির্বাচনমুখী।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন তুঙ্গে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে সময়সীমা নির্ধারণ করা বলা হয়েছিল ডিসেম্বর টু জুন। মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।

আবার ঈদ উল আজহার আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া আরেক ভাষণে বলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন নির্বাচন হবে।

অন্যদিকে, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রমজান শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই প্রস্তাবে সতর্কভাবে ইতিবাচক সাড়া দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যদি প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ও আইনগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়, এবং বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, তবে রমজানের আগের সপ্তাহেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য বিএনপি মোটামোটি আশান্বিত।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার কথায় নাখোশ জামায়াতে ইসলামী। তারা বলছেন,একটি বিশেষ দলকে সুবিধে দিতে নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ এমন কথা বলছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)।

প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের পরে যে যৌথ বিবৃতি সেটা যদি সত্যি হয় তবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসকেই নির্বাচনের মাস বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, সৌদি আরবের সরকারি ক্যালেন্ডার উম আল কুরা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে পারে সিয়াম সাধনার মাস রমজান।

৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর মাঠ থেকে আউট আওয়ামী লীগ। বর্তমানে নিবন্ধনহীন এই দল। যে কারণে ভোটের মাঠে তারা ইন হতে পারছে না। আওয়ামীলীগ মনা কেউ যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে এমনও বলা যাচ্ছে না।
এমন অবস্থায় রাজনীতি অনেকটাই বিএনপি-জামায়াত-
জমিয়ত কেন্দ্রিক বলা যেতে পারে।

ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠনের পর একেক সময় একেক বিতর্কের কারণে দলটি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। ভোটের মাঠে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে সরব বিএনপি-জামায়াত,জমিয়ত ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকজন প্রার্থী। আগামী সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন ২৩৩, সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন এখন পর্যন্ত ৫ জন। তাদের মধ্যে কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির ১ম সহ-সভাপতি, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা মামুনুর রশিদ মামুন (চাকসু মামুন), সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী (ভিপি মাহবুব), সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে তাদের দলীয়
প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এ আসনে দলটির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আনওয়ার হুসেন খাঁন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ তাদের দলীয় প্রার্থী আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে দলটি নবনির্বাচিত সভাপতি, কানাইঘাটের সন্তান মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককেই প্রার্থী হিসেবে জনগণের কাছে উপস্থাপন করছে। পবিত্র ঈদ উল আযহার পর কানাইঘাটে বিশাণ দুটি গণ সমাবেশ করে তারই জানান দিয়েছে দলটির নেতাকর্মী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও তাদের দলীয় প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তবে গত ১১ মে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কানাইঘাট উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই কানাইঘাটের সন্তান, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম আবরারকে সংসদে পাঠাতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এতে করে রেজাউল করিম আবরারকেই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

ভোটের মাঠে ইসলামী দলগুলোর একটি ভোট বাক্স করতে ইসলামী দলের নেতারা কাজ করছেন। কোন কোন ইসলামী দল নিয়ে ভোটের একটি বাক্স হবে সেটা এখনও চূড়ান্ত নয় বা অদৌ হবে কি হবে না সেটাও বলা যাচ্ছে না। যদি শেষ পর্যন্ত হয় তবে কোন দলের প্রার্থী এখানে মনোনীত হবেন তা সময়ই বলে দিবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

অন্যদিকে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর সাথে জোটবদ্ধ যে হবে না, সেটা জমিয়ত সভাপতি বিভিন্ন প্লাটফর্মে বক্তব্য রাখছেন। এখান থেকে অনেকে মনে করছেন, জমিয়ত যদি জোট করে তবে বিএনপির সাথে করতে পারে। কেননা, ২০১৮ সালে জমিয়ত বিএনপির সাথেই জোটবদ্ধ নির্বাচন করেছিল। যদি এমন হয় তবে এখানকার প্রার্থী নিয়ে শুরু হবে নতুন করে হিসাব নিকাশ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে এ আসনে নির্বাচন করেন জমিয়ত নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। সে হিসেবে উবায়দুল্লাহ ফারুক দলটির নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে জোট হলে তিনিই মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারেন,এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আগামী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যত প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে ভোটের মাঠে উবায়দুল্লাহ ফারুক পুরনো। তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি খেজুর গাছ নিয়ে ভোট পেয়েছিলেন ৮,৯৪৬ ভোট ও ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ১৫১ ভোট।

তবে, এবার বিএনপির অনেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আগামীর নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করবে ও দল বিজয়ী হতে পারলে সকলকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির অনেক নেতা বলেন, তারেক রহমান এবার কারো সাথেই জোট করবেন না। যারা বিজয়ী হয়ে আসবেন তাদের নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করবেন।
এখানকার বিএনপির নেতারা মনে করেন, সিলেট ৫ আসনে এবার যদি দলীয় প্রার্থী না থাকে তবে কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে অনেকটাই পিছিয়ে যাবে এ দলটি। নেতাকর্মী অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়বে। তাই যেভাবেই হোক বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখতে এ আসনে দলীয় প্রার্থীর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় ৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও টিকেট পেতে মূল লড়াইটা হবে আশিক চৌধুরী বনাম চাকসু মামুনের মধ্যে। বিএনপির স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে এমন তথ্যই জানা যায়। অন্য ৩ প্রার্থীও বিগত সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নিজেদের রাজপথের ভুমিকাকে সামনে রেখে কেন্দ্রে জোর লবিং চালাবেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির ১ম সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমার দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলজুলুম, অত্যাচার,নির্যাতন সহ্য করেছে। আমি ১৭টি বছর তাদের বুকে আগলে রেখে কাজ করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের পরীক্ষিত নেতাকেই এ আসনে প্রার্থী দিবেন।এক্ষেত্রে আমি শতভাগ আশাবাদী আমি দলের মনোনয়ন পাবো। কেননা,২০১৮ সালের নির্বাচনেও দল প্রথমে আমাকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে সিলেক্ট করেছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি আমার সারাটি জীবন মানুষের খেদমতে ব্যয় করেছি, দলের জন্য ব্যয় করেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হটাতে রাজপথের সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি, দেশ ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাইনি। তাই, আমি মনে করি এ আসনে আমিই বিএনপির মনোনয়নের হকদার।

দলের কাছে মনোনয়নে ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী (ভিপি মাহবুব) বলেন, বিগত ১৭টি বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। রাজপথে লড়াকু সৈনিকের মতো ভুমিকা রেখেছি। জীবনবাজি রেখে হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। জনগনের জন্য রাজনীতি করি,তাই জনগণের জন্যই দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো এবং প্রত্যাশাও রাখি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আনওয়ার হুসেন খাঁন বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। আমি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি গণমানুষের কথা শোনার। সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে অনুস্মরণ করেই কাজ করবো এবং এ আসনকে আমরা পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ। এ আসনে অন্য যারা প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন সকলকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সকলে মিলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের দীর্ঘদিনের নতুন বাংলাদেশের যে প্রত্যাশা সেটা আমরা বাস্তবায়ন করবো।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30