সর্বশেষ

» স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ২৬. মার্চ. ২০২১ | শুক্রবার

Manual3 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে সকল ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 

শুক্রবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। রাজধানীতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।

 

Manual8 Ad Code

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যৌথভাবে উদযাপনে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১০ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয় গত ১৭ মার্চ। শুক্রবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে এ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।

 

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের ও সম্মানের। কারণ ১৯৭১ সালে মার্চের এই দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

 

Manual2 Ad Code

তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।

 

রাষ্ট্রপতি বলেন, গৌরব ও ত্যাগের অনুপম বীরত্বগাথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনকারী জাতি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই। জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব- মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।

 

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নতুন প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানা ও বোঝার জন্য জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এই উদযাপনকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম এবং তার নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাভাষা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও যাতে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গের বন্ধু হয়েই থাকেননি, হয়ে উঠেছেন বিশ্ববন্ধু। সারাবিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের আপনজন। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু-ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে’।

 

এ সময় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থনও সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর ও সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। আমি আশা করি অচিরেই অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যুরও সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ নিষ্পত্তি হবে।

Manual1 Ad Code

 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন ও সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাস আমি ভারতে অবস্থানকালে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অভ্যর্থনা ক্যাম্প স্থাপনসহ তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রিফিউজি ক্যাম্পের দেখাশোনার কাজও করেছি। মুজিববাহিনীর (বিএলএফ) সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবেও আমি দায়িত্ব পালন করি। আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত কীভাবে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এক কোটি লোক ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। ভারতের তৎকালীন সরকার ও জনগণ আমাদের এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, বহির্বিশ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে, মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মহানুভবতা ও মানবিকতার ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি নিজে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভারত সরকার ও জনগণকে আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

 

Manual4 Ad Code

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code