সর্বশেষ

» প্রেমের সম্পর্ক ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতিঃ অবৈধ সন্তানের ঘটনায় বাড়িতে হামলা, আহত মা হাসপাতালে

প্রকাশিত: ২২. এপ্রিল. ২০২৫ | মঙ্গলবার

বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট জেলার ওসমানীনগর থানার দয়ামীর গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ও আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে। যেখানে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং জন্ম নেওয়া একটি সন্তানের কারণে একটি পরিবারকে চরম সামাজিক ও শারীরিক নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়েছে।

জানা গেছে, সুবেনা বেগম নামের এক নারী, যিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ২০২৩ সালে এমদাদুল নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে ইউকে যান। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও মানসিক অস্থিরতার কারণে তারা এক পর্যায়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। এই অবস্থায় সুবেনার পরিচয় ঘটে আব্দুল আলীম নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে, যার সঙ্গে গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ প্রেমের সম্পর্ক এবং পরবর্তীতে তারা দৈহিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন।

এই সম্পর্ক থেকে সুবেনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং সম্প্রতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই সুবেনা ও তার শিশুকে ঘিরে শুরু হয় নানা রকম সামাজিক এবং পারিবারিক হুমকি-ধামকি। তার স্বামী এমদাদুল ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে চাপ ও হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ হুমকি আসে সুবেনার নিজের পরিবারের দিক থেকে। তার মা, মামা এবং চাচারা তাকে “পরিবারের সম্মানহানির” অভিযোগে হত্যার হুমকি দিতে থাকেন।

ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে, স্থানীয় মসজিদের এক ইমামের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী লোকজন এবং এলাকার তথাকথিত ‘তৌহিদি জনতা সুবেনার পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে গতকাল হামলা চালায়। বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে বাড়ি পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় সুবেনার মা গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়েছে কিনা, বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি ওসমানীনগর থানায় যোগাযোগ করলে, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এই ব্যাপারে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।

তবে এমন ঘটনায় নারী নিরাপত্তা, পারিবারিক সহিংসতা, এবং ধর্মীয় উস্কানির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

স্থানীয় এক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধির ভাষ্য অনুযায়ী, “ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা কখনোই কারও বিচার করার বা সহিংসতার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার লাইসেন্স হতে পারে না। এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

আমাদের প্রতিনিধি দয়ামীরের প্রভাশালী ব্যক্তি মোঃ নজরুল ইসলামের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান।

সুবেনা বেগম ও তার সন্তানের নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30