ঈদোত্তর বাংলাদেশে করণীয় || অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ২৫. মে. ২০২২ | বুধবার

Manual3 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: দারুণ একটা রোজা আর জ্যামহীন, ঝামেলাহীন লম্বা একটা ঈদ কাটিয়ে আমরা সবাই এখন আবারও ব্যস্ত যে যার কাজে, যে যার মতো। স্বাভাবিক বলয়ে ফিরেছে জীবন আর জীবিকার সন্ধানে ছুটে বেড়ানোদের ছন্দ। স্বাভাবিক জ্যামে জর্জরিত আবারও ঢাকার রাজপথ। কোভিড আপাতত ব্যাকফুটে। দিনের পর দিন আমরা পার করছি কোভিডে মৃত্যুহীন এক একটা দিন। নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ঠেকতে ঠেকতে শেষমেশ গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে। পুরো জাতি এখন তাকিয়ে আছে নতুন কোভিড রোগীবিহীন অনাগত সেই দিনটির প্রত্যাশায়। এরই মধ্যে সুখবর জুগিয়েছে নিক্কে ইনডেক্স। তাদের পর্যালোচনায় কোভিড সামলানোয় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সোনার পদকটি এখন বাংলাদেশের কব্জায়। আর পুরো পৃথিবীর মেডেল তালিকায় আমাদের অবস্থান এখন পাঁচে।

 

Manual8 Ad Code

তবে যতটা স্বস্তিতে আমরা, স্বস্তির জায়গায় ঠিক ততটা নেই পৃথিবীর অনেকেই। জাপানে এই কদিন আগেও প্রতিদিন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছিল গড়ে পঞ্চাশ হাজার করে। এখন সেখানে পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে গড়ে বিশ হাজারের মতো নতুন রোগী! আমেরিকার পরিস্থিতিও অনেকটাই সেই রকম। বাদ যাচ্ছে না দক্ষিণ কোরিয়া আর ইতালির মতো উন্নত দেশগুলোও। যে চীন থেকে কোভিডের উৎপত্তি, লকডাউন-টকডাউন করে তারা শুরুর দিকে কোভিডকে ভালই সামাল দিয়েছিল। তবে হালের পরিস্থিতি ভিন্ন। কোভিডের তা-বে তাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র সাংহাইতেই এখন ঝুলছে তালা। আর যে উত্তর কোরিয়া এতদিন কোভিড নেই বলে কদিন পরপর মিসাইল ছুড়ে উল্লাস করছিল, সে দেশে অল্প কদিনের ব্যবধানে কোভিড রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখে। আফ্রিকায় নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স।

Manual4 Ad Code

প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যত কেমন? উত্তরটা কিন্তু একেবারে সরল সোজা নয়। সাধারণত একটা ভাইরাসের যত বেশি মিউটেশন হয় এবং তৈরি হয় নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট, সেই ভ্যারিয়েন্টগুলোর রোগ তৈরির সক্ষমতা ততটাই কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে ভাইরাসটা আরও দুর্বল হয়ে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ডেল্টা থেকে যখন কোভিডের ওমিক্রনে উত্তরণ, তখন আর দশজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর মতন আমরাও দারুণভাবে আশাবাদী হয়ে উঠছিলাম যে, ওই বুঝি শেষটা দেখা যাচ্ছে সামনে। কিন্তু এই যে আবারও কিছু কিছু জায়গায় কোভিডের বাড়াবাড়ি, সেটা কিন্তু ভ্রƒটাকে কিছুটা হলেও কুঞ্চিত করছে। কারণ, ভাইরাসটা যদি এভাবে ছড়াতে থাকে তাহলে এর খারাপ চেহারাটা আবারও বেরিয়ে আসার ঝুঁকি থেকে যায়। এই যে ওমিক্রন এত বেশি ছড়ায়, কিন্তু ক্ষতিটা করে কম, এর কারণ কিন্তু একটাইÑ আর তা হলো ওমিক্রন গলা থেকে নিচে ফুসফুসের দিকে নামে কম। ফলে, ওমিক্রনে ফুসফুসটা তেমন একটা আক্রান্ত হয় না বললেই চলে। কিন্তু এই ছবিটাই বদলে যাবে যদি ওমিক্রন আরও নিচের দিকে নেমে আসার সক্ষমতা অর্জন করে বসে। বিজ্ঞানীরা আরও দু’একটা বিষয় নিয়ে একটু অস্বস্তিতে আছেন। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের শরীরের নানা রসে, এমনকি স্পাইনাল ফ্লুইডেও কোভিড ভাইরাসের ট্রেস থেকে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখান থেকে ভাইরাসটি আবার নতুন করে ঝামেলা পাকাতে পারে কি না। এ সব প্রশ্ন অবশ্য একেবারেই হাইপোথিটিক্যাল। যার উত্তরগুলো আমাদের এখনও পুরোপুরি জানা নেই। তবে মাস্ক ছুড়ে ফেলে ঘুরে বেড়ানোর সময়টা যে এখনও আসেনি, এ নিয়ে বোধ করি কোন পাল্টা হাইপোথিসিস নেই।

ঈদোত্তর পৃথিবীতে আমরা অস্বস্তিতে আরও একটা কারণেও। শ্রীলঙ্কার ধসের পর প্রশ্ন উঠেছে আমাদের নিয়েও। আমরাও ধসে পড়ার দাঁড়প্রান্তে কিনা? এ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আর লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। পড়েছি আর লিখেছি আমিও। সবার মত আমারও মত যে, যাই হোক আর নাই হোক বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার মতো ভেঙ্গেচুরে পড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, অর্বাচীনের মতো কারও ঋণের ফাঁদে পা দেইনি আমরা। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ চীনের কোন ডেবট ট্রাপে অর্থাৎ ঋণের ফাঁদে নেই। অতীতে যাই হোক আর নাই হোক, চীনকে আমরা আমাদের বন্ধু বলেই মনে করি। অতএব চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আমরা আস্বস্ত হতেই পারি যে, শ্রীলঙ্কায় তারা যাই ঘটিয়ে থাকুক না কেন, তাদের কারণে বাংলাদেশের বিপদে পড়ার কোন শঙ্কা নেই।

Manual2 Ad Code

তবে আমাদের জন্য সমস্যা পাকাচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের উটকো ঝামেলাটা। ঠিক যেমন তা কম বেশি ঝামেলা করছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বেলায়ও। লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে বাড়ছে গম, সয়াবিন আর পেট্রোলসহ যাবতীয় অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের দাম। আর তা বাড়ছে গোটা পৃথিবীতেই। তারচেয়েও যা বড় সমস্যা আমাদের দেশে একদল লোক ওতপেতে বসে আছে সুযোগটার সন্ধানে। তারা দিবাস্বপ্নে বিভোর, কখন বাংলাদেশটা শ্রীলঙ্কা হবে আর তারা আওয়ামী লীগের পতনোৎসবটা উদ্যাপন করবে। অপদার্থরা বোঝে না যে, গদিটাই যখন তাদের কাছে সব, তখন শেখ হাসিনার বাংলাদেশের গদির পেছনে না ছুটে, রাজাপাকসে পরিবারের শ্রীলঙ্কার মতো ভাঙাচোরা গদির পেছনে ছুটে লাভটা কি?

সে যাই হোক, ইদানীং অবশ্য শঙ্কাহীন রাতই কাটাচ্ছি। পতন অত্যাসন্ন জেনেও রাজপাকসে পরিবার যখন রোমের রাজা নিরোর বাঁশিটি ধার করে তা কলম্বোয় বসে ফুঁকে চলছেন, তখন আমাদের নেতৃত্বের অবস্থানটা একেবারেই উল্টো। তারা কোন রকম ঝুঁকিই নিতে নারাজ। এডিবির মতো ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান আস্বস্ত করেছে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার হওয়ার শঙ্কা নেই। তারপরও আমরা সচেতন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঋণ প্রকল্পগুলো পুনঃমূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন প্রয়োজনে কিছু মেগাপ্রজেক্ট স্থগিত রেখে হলেও সচল রাখতে হবে কৃষিখাতে ভর্তুকি। এরই মাঝে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সরকারী, আধা সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। শোনা যাচ্ছে, সামনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্যসব আমদানিতে এলসি মার্জিন করা হবে শতভাগ। এসব কিছুই একটি দূরদর্শী সরকারের সতর্ক পদক্ষেপ আর পরিস্থিতির ওপর সজাগ নজরদারির প্রমাণ দেয়। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, কোভিড আর ইউক্রেন মিলিয়ে গোটা পৃথিবীর মতো আমাদেরও গলার ভেতর একটুখানি খচখচানি রয়েই যাচ্ছে। আমাদের দূরদর্শী সরকারপ্রধান আমাদের ভাল রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটাই করেছেন, করছেন এবং করবেনও। আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু মাস্কটা ভুলে না যাওয়া আর সবাই মিলে ওই গদিপিপাসুদের একটু সাইজে রাখা।

লেখক : ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

 

Manual4 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code