সর্বশেষ

ইয়াবা বাণিজ‌্যের কথা জেনে যাওয়ায় সিনহাকে হত্যা : র‌্যাব

প্রকাশিত: ১৩. ডিসেম্বর. ২০২০ | রবিবার

Manual2 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অস্ত্র ও নির্যাতনের সম্রাজ‌্য গড়ে তুলেছিলেন। তার ইয়াবা বাণিজ‌্যের কথা জেনে যাওয়ায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে পরিকল্পতভাবে হত‌্যা করা হয় বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

 

আজ রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যন্ড মিডিয়া পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল  আশিক বিল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘লিয়াকতসহ বাকি আসামিদের নিয়ে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজান ওসি প্রদীপ। তিনি সরকারি অস্ত্র ব‌্যবহার করে অনৈতিক কাজ করেছেন।’

 

আশিক বিল্লাহ বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারি প্রদীপ কুমার দাস। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ওসি প্রদীপ বাকি অভিযুক্তদের সহযোহিতা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আজ আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

 

র‌্যাব জানায়, মেজর সিনহা একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করার কারণে তিনি কক্সবাজার এলাকায় ভিডিও ধারণ করছিলেন। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয়দের সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেসময় ওসি প্রদীপের নির্যাতনের ঘটনা এবং ইয়াবা বাণিজ্য সম্পর্কে তথ্য পান। এই বিষয়ে ওসি প্রদীপের বক্তব্য নিতে সিনহা থানায় যায়। ইতিমধ্যে ওসি প্রদীপ সিনহা সম্পর্কে সবকিছু জেনে যাওয়া তাকে বক্তব্য না দিয়ে উল্টো সরাসরি হুমকি দেন। সেই সঙ্গে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু ওসি প্রদীপের কথা না শুনায় মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়।

 

মূলত দুটি কারণে ওসি প্রদীপ মেজর সিনহাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে মনে করে র‌্যাব। এ ব্যাপারে আশিক বিল্লাহ বলেন, যেহেতু ওসি প্রদীপ টেকনাফে একটি রাজ্য গড়ে তুলেছিলো আর সেটা যাতে কর্তৃপক্ষকে না জানান সেই জন্য ওসি প্রদীপ সরাসরি হুমকি দেয়। কিন্তু সিনহা তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহৃত রাখেন। এই কারণে ওসি প্রদীপ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও তার সহযোগীরা হত্যার মতো ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

 

এর আগে, আজ সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. খায়রুল আলম।

 

অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে এবং একজন পলাতক।

 

দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় পর আলোচিত মামলাটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হলো আজ।

 

প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আদালত এলাকায় এএসপি মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘সিনহা হত্যা মামলাটি আমরা নানাভাবে তদন্ত করেছি। তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো সাজিয়ে চার্জশিট হিসেবে জমা দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার ঘটনা তদন্তে নেমে র‌্যাব এ ঘটনায় ১৫ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপসহ ১৪ জন কারাগারে। সাগর নামের ওসি প্রদীপের এক সহযোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে।’

 

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া ক্যাম্পের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের তিনজন এবং স্থানীয় তিনজনসহ মোট ১৪ জনকে অভিযুক্তের পর গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

গত ৩ জুলাই ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাভেলস শো ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ খবর পৌঁছায় টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমারের কাছে। তখন থেকেই ওসি প্রদীপ অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘ভিডিও পার্টিকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে যেকোনো মূল্যে।’ এরপর থেকেই সিনহাকে নজরদারিতে রাখেন পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত।

 

Manual8 Ad Code

৩১ জুলাই সকালে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর সিনহা রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এ সময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন।

 

ওইদিন (৩১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের দিকে আসার পথে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 

ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। একইভাবে তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে, ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে, যিনি সিনহাকে গুলি করেছিলেন। টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি।

 

Manual1 Ad Code

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গুলি করার আগে লিয়াকত তার সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করেছিলেন। ওসির ‘প্ররোচনা ও নির্দেশনায়ই’ লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন।

 

পরে প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিনহার ‘মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে’ বিকৃত করার চেষ্টা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

 

মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার এসআই দুলাল রক্ষিতকে, যিনি সিনহার মৃত্যুর পর মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র‌্যাব হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন ছাড়াও এপিবিএন এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে।

Manual2 Ad Code

 

আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু হয়। দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মামলা নম্বর সিআর: ৯৪/২০২০ইং/টেকনাফ)।

Manual1 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code