সর্বশেষ

» সিলেটে ইফতারি ও ঈদের পোষাক না দেয়ায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা!

প্রকাশিত: ০৮. মে. ২০২১ | শনিবার

চেম্বার ডেস্ক:: সিলেটের ওসমানীনগরে এক গৃহবধুর পিতার বাড়ি থেকে পাঠানো ইফতারীতে স্বামীর জন্য আলাদা সাজানো থাল না থাকার জের ধরে সৃষ্ট পারিবারিক বিরোধ ও ঈদুল ফিতরে নতুন কাপড় না দেয়ায় স্বামী ও শাশুড়ীর নির্যাতনে ৭ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় গৃহবুধুর স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ী মিনারা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। মারা যাওয়া শরিফা বেগম (২০) নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্যার ছোট মেয়ে।

আটককৃত স্বামী ও শাশুড়ির দাবি- পরিবারের  সবার অজান্তে শরিফা আত্মহত্যা করেছে। যদিও শনিবার দুপুরে শরিফার স্বামীর বাড়ির নিজ ঘরের বিছানা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর ছেলে আরশ আলীর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয় নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্যার ছোট মেয়ে শরিফার। বিয়ের কিছু দিন পর যৌতুকসহ নানা অযুহাতে স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ী মিনারা বেগম নির্যাতন শুরু করেন গৃহবধূ শরিফার ওপর। নিজে অন্তস্বত্তা থাকায় তাদের নির্যাতন সহ্য করে গর্ভের সন্তানের আলোর মুখ দেখাতে তাদের সকল নির্যাতন সহ্য করেই স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকেন শরিফা। চলতি রমজান মাসে তার পিত্রালয় থেকে ইফতারী দিতে দেরি করায় এবং ইফতারীর সাথে স্বামীর জন্য আলাদাভাবে সাজানো থাল না দেয়ায় অন্তস্বত্তা শরিফার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

শুক্রবার(৭ মে) সন্ধ্যায় শরিফার পিত্রালয় থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজনের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না আসাকে কেন্দ্র করে শাশুড়ীর সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে আরশ আলী ও মিনারা বেগম মিলে মারপিট করেন শরিফাকে। বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শরিফা তার ভাইকে অবগত করে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। এমতাবস্থায় সেহরির সময়ে শরিফার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার ভাই-বোনেরা। আজ শনিবার শরিফার বড় বোন শিপন আক্তার শরিফার স্বামী শাশুড়ীর জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আরশ আলীর বাড়ির (বোনের বাড়ী)উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেই পথিমধ্যে শরিফার ভাশুরের মাধ্যমে খবর পান তার বোন খুবই অসুস্থ। এর কিছুক্ষনের মধ্যে আবার খবর আসে শরিফা আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করছে।

খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

নিহতের বড় বোন শিপন আক্তার ও ভাই মিনার হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার বোনের ওপর তার স্বামী ও শাশুড়ী যৌতুকসহ নানা অযুহাতে নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতনের কারনে আমরা তাকে নিয়ে যেতে চাইলেও গর্বের সন্তানের কথা চিন্তা করে আমার বোন সব কিছু নিরবে সহ্য করে যেত। আমরা গরিব মানুষ লকডাউনের কারণে অভাব অনটনে চলতি রমজান মাসে ইফতারী পাঠাতে দেরি ও আরশ আলীর জন্য আলাদা করে সাজানো থাল না দেয়ায় তার স্বামী ও শাশুড়ী শরিফাকে নানা ভাবে নির্যাতন করে। সর্বশেষ নতুন কাপড় পাঠাতে দেরি করায় তারা আমার বোনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়ে তার গর্ভের সন্তানটিকেও আলোর মুখ দেখতে দিলো না। তারা তাদের বোন হত্যার বিচার দাবি করেন।

ওসমানীগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শ্যামল বনিক বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের স্বামী ও শাশুড়ীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031