সর্বশেষ

» সরকার পতনের পর উগ্র তাণ্ডব: জামায়াত-শিবিরের হামলায় সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাঙচুর

প্রকাশিত: ১২. আগস্ট. ২০২৪ | সোমবার

চেম্বার প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সরকার পতনের পর দেশজুড়ে চরমপন্থীদের সহিংস কার্যকলাপ উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা দীর্ঘ দেড় দশকের অপেক্ষার পর আবার ক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে মুক্তমনা লেখক, বিরোধী মতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিনে অন্তত ৩-৪টি বাড়িতে আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
সিলেটের উপশহরের ডি ব্লকে, আম্বরখানা এবং মোগলাবাজারের কুচাই ইউনিয়ন এ গতকাল সন্ধ্যায় কয়েকজন মুক্তমনা লেখক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালায় জামায়াত শিবিরের কয়েকটি দল। লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলাকারীরা বাড়ির গেট ও জানালা ভেঙে ফেলে। আম্বরখানার ফাজিলচিশত এলাকায় শামসুদ্দিন সাহেদের বাসাতে হামলা চালায় আরেক দল, সাহেদ বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যাপারে লেখালেখি করেন। মোগলাবাজারের কুচাই ইউনিয়ন এর দৈনিক সিলেটের ডাক এর প্রাক্তন কলামিস্ট মুনতাছির মুবিন ছামির বাড়িতে হামলার সময় তারা মুনতাছিরকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয় এবং তাদের লক্ষ্য করে অপমানজনক মন্তব্য করে। মুনতাছিরের পরিবার জানিয়েছে যে, হামলাকারীরা বাড়ির সামনে “তোমার ছেলে আমাদের পেলে বাঁচবে না” বলে হুমকি দেয়।
চরমপন্থীরা একাধিক বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে এবং বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাচ্ছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “তারা লাঠি ও রাম দা সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নিয়ে বাড়িগুলোতে হামলা চালায়, পরিবারগুলো খুব আতঙ্কিত।”
ধর্মীয় সংখ্যালঘু এক পরিবারের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জের একটি গ্রামে এক হিন্দু পরিবারের বাড়ি আংশিক ভেঙে ফেলা হয় এবং তাদের ধর্মীয় স্থাপনাকে অপমানজনক কথা বলা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে জামায়াত-শিবিরের অঘোষিত প্রভাব এই সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। জামায়াত-শিবির দীর্ঘদিন পর আবার রাজনৈতিক ক্ষমতার সুযোগ পেয়ে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
শামসুদ্দিন সাহেদ আমাদের রিপোর্টারকে জানান তার বাসাতে ঢুকে ভাঙচুর এর পাশাপাশি আলমারি ভেঙে টাকা এবং স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায় হামলাকারীর। তার পরিবার থেকে ঘটনার পর একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয়।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মুনতাছির টেলিফোনে বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই মুক্তচিন্তার মানুষ এবং বিরোধী মতাবলম্বীরা ঝুঁকিতে রয়েছে। এই আক্রমণ শুধু আমার বাড়িতে নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের ওপর একটি সামগ্রিক আক্রমণ এবং আমার পরিবার প্রাণের ভয়ে বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকেই এখন প্রাধান্য দেওয়া উচিত।”
স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে সন্দিহান। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে উগ্রপন্থীরা আরও সাহস পাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এটি শুধু সম্পদের ক্ষতি নয়, এটি মানুষের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আক্রমণ।” তারা সরকারের কাছে এই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দীর্ঘমেয়াদী হুমকির মুখে পড়তে পারে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031