সর্বশেষ

» দুর্যোগ সাংবাদিকতা বিকশিত হলে বাইশের বন্যার পুনরাবৃত্তি হবে না: সেমিনারে বক্তারা

প্রকাশিত: ০২. ফেব্রুয়ারি. ২০২৩ | বৃহস্পতিবার


Manual6 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: 
সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গকারি বাইশের প্রলয়ংকারী বন্যার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ।

পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে ঘন ঘন আঘাত হানা বাইশের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতো। পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে যেকোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, এমনকি দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই সহজে করা যায়- এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমকর্মী, গণমাধ্যম কর্মকর্তা ও ভয়াবহ বন্যার প্রত্যক্ষদর্শীরা একটি সেমিনারে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বাভাস প্রদানে যেমন ব্যর্থ হয়েছিল তেমনি বাইশের বন্যার ব্যাপারে গণমাধ্যমে পূর্বাভাস, সচেতনতামূলক ও সতর্কতামূলক কোন সংবাদ ছিল না।

Manual4 Ad Code

তারা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল একটি বন্যাপ্রবণ এলাকা। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

তারা আরো বলেন, মূলধারার গণমাধ্যমসহ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে দুর্যোগ সাংবাদিকতা তুলনামূলক কম গুরুত্ব পায় বলে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের কথা যেভাবে গণমাধ্যমে উঠে আসার কথা সেভাবে আসছে না। দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি, সচেতনতা ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত সংবাদ খুব একটা দেখা যায় না। দেশের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে দুর্যোগ সাংবাদিকতা গুরুত্ব পেলে বাইশের ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি হবে না।

Manual5 Ad Code

বন্যাসহ যেকোনো দুর্যোগ প্রতিরোধ ও পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে দুর্যোগ সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে সেমিনারে বক্তারা মূলধারার গণমাধ্যমে দুর্যোগ সাংবাদিকতার জন্য বিশেষায়িত বিট অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানান।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ‘‘বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে দুর্যোগ সাংবাদিকতা’’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর জিন্দবাজারের একটি হলরুমে। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেকের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এই গবেষণার প্রধান গবেষক সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি গবেষক এহসানুল হক জসীম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তা মো: ফাইম সিদ্দিকী।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান এবং সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ আব্দুল হাই আল হাদী।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলিনা রহমান পলিন, বাসসের শুয়াইবুল ইসলাম, ওমর ফারুক, এডভোকেট আসাদুল আলম চৌধুরী, এডভোকেট সাব্বির আহমদ প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ২০২২ সালের বন্যা কেবলই অতিবৃষ্টির কারণে হয়নি; নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, সুরমা নদীর উপর একাধিক জায়গায় ব্রীজ নির্মাণ, কিশোরগঞ্জে হাওরে অলওয়েদার রোড নির্মাণ এবং আরো বিভিন্ন কারণে হাওরের পানি যথাযথভাবে নিষ্কাষিত না হওয়া ইত্যাদি কারণও দায়ী।

তিনি বলেন, সুরমা নদী ছাতক থেকে শুরু করে এই নদীর শেষ পর্যন্ত তলদেশ অনেক ভরাট হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ড্রেজিং করতে হবে। সিলেট নগরী ও অন্যান্য স্থানের ছড়া ও জলাশয়গুলো রক্ষা ও উদ্ধার করতে হবে। নানা ব্যবস্থা না নিলে বাইশের ভয়াবহ বন্যার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে আবার হতে পারে।

এই পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, এই ধরণের বন্যা যাতে আর না হয়, সেজন্য গণমাধ্যম বিশেষ অবদান ও মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। যেসব কারণে ভয়াবহ রূপ নেয়, সেই কারণগুলো নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীর মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেমন করাঘাত করতে পারে গণমাধ্যম, তেমনি জনগণকে সচেতন ও পুর্বপ্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে দুর্যোগ সাংবাদিকতাকে মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

জলাবদ্ধতা ও বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তিনি সিলেট নগরীর ছড়া-নালা রক্ষার তাগিদ দেন।

অধ্যাপক আশরাফুর রহমান অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

শুয়াইবুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসে সংঘটিত বন্যার সময় তিনি কমপক্ষে ৬০টি মৃত্যুর সংবাদ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন এবং নিশ্চিত হয়েছেন। কিন্তু এই ৬০টির কোন একজনেরও মৃত্যুর ঘোষণা আসেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। বন্যায় অসংখ্য মানুষ মারা গেছেন, পানিতে ভেসে গেছেন, যা হিসেবে আসেনি এবং গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়নি।

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এবং অন্য বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ‍দুর্যোগ সাংবাদিকতার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার যাতে দুর্যোগের পূর্বে গণমাধ্যমে রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারে।

মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, বাংলাদেশে দুর্যোগ সাংবাদিকতা এখনো সেভাবে বিকশিত হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রাকৃতিক এবং মানুষের তৈরি দু-রকমের দুর্যোগেরই শিকার হচ্ছে এই দেশ। এসব দুর্যোগের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানুষকে ব্যাপকভাবে সচেতন করতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ফলে গণমাধ্যমে দুর্যোগ সাংবাদিকতাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

Manual4 Ad Code

তিনি জানান, সিলেট অঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতা বিবেচনায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বন্যার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণে এ গবেষণা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সন্ধ্যার পর সিলেট নগরীতে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের আগে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা দুপুরে সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।

Manual4 Ad Code

সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজুর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক এহসানুল হক জসীমের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ আবু সাদেক। মো: ফাইম সিদ্দিকী, কাজী ওমর খৈয়াম, গবেষক আলী আহমদ প্রমুখও বক্তব্য রাখেন।

সুনামগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা ২০২২ সালে সংঘটিত পর পর তিনটি বন্যার বিষয়টি সরেজমিন যা দেখেছেন এবং এই সংক্রান্ত রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। বন্যাসহ দুর্যোগের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে গণমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়ে তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code