সর্বশেষ

» একই পরিবারের চারজনকে হত্যা: বেঁচে যাওয়া শিশুর দায়িত্ব নিলেন ডিসি

প্রকাশিত: ১৬. অক্টোবর. ২০২০ | শুক্রবার

চেম্বার ডেস্ক:: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পেয়েছে চার মাসের শিশু কন্যা মারিয়া। ওই শিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম মোস্তফা কামাল।

 

তিনি ওই শিশুর চিকিৎসা ও বেড়ে ওঠার সব ব্যয়ভার বহন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শিশুটি বর্তমানে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের হেফাজতে রয়েছে।

 

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কলারোয়ায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের জীবিত একমাত্র চার মাসের কন্যা শিশুর দায়িত্ব নিয়ে আপাতত দেখাশোনার জন্য স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে। তাকে সাময়িকভাবে দেখভাল করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে অভিভাবকরা দাবি করলে আইনানুগভাবে সমাধান করা হবে।’

 

বৃহস্পতিবার ভোর রাতে কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামের মৎস্য হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) ও মেয়ে তাসনিমকে (৭) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে ৬ মাসের শিশু কন্যা মারিয়াকে কিছু করেনি হত্যাকারীরা।

 

হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শাহিনুর রহমান মাছের ব্যবসা করতেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এলাকার কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করতে শুনিনি। এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

তিনি আরও বলেন, বাবা-মাকে জবাই করে হত্যার সময় হত্যাকারীদের চিনতে পারায় দুই শিশুকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হত্যাকাণ্ড দেখে পেশাদার খুনি বলে মনে হচ্ছে না। শাহিনুর রহমানকে পা বেঁধে আলাদা একটি ঘরে হত্যা করা হয়েছে। দুই বাচ্চা ও মাকে আলাদা আরেকটি ঘরে হত্যা করা হয়েছে।

 

ময়নাতদন্ত শেষে শাহীনুর, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী ও মেয়ে তাসনিম সুলতানার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই ব্রজবাকসা গ্রামে শাহিনুরের মামা আবদুল কাদেরের পারিবারিক গোরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

 

হেলাতলা ইউনিয়নের ৩নং খলসী ওয়ার্ড সদস্য সোহরাব হোসেন বলেন, হত্যাকারীরা তালা ভেঙে সিঁড়ি দিয়ে প্রবেশ করলেও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বের হয়ে গেলে কিছু নমুনা থাকে সেই রকম কিছুও পাওয়া যায়নি। এ রকম ঘটনা ঘটাতে হলে দুই-পাঁচ জন মানুষ লাগে, সে রকম কোনও আলামত এখানে দেখা যায়নি।

 

তিনি জানান, তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে কিছু লোকের বিরোধ ছিল। তারা ঘটিয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। যে ঘরে এই মর্মান্তিক এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তার ৩০ হাত দূরে নিহত শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামের ঘর।

 

তিনি আরও বলেন, নিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন (৬০) আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। শাহীনুরের তিন ভাইয়ের মেজভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। অপরজন রায়হানুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে দাদি ছাড়া শিশু মারিয়াকে দেখার মতো কেউ নেই।

 

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। লোমহর্ষক এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন নিহত শাহিনুরের শাশুড়ি কলারোয়ার ওফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজির স্ত্রী ময়না বেগম।

 

কলারোয়া থানার ওসি (চলতি দায়িত্বে) হারান চন্দ্র পাল জানান, নিহত শাহিনুরের শাশুড়ির লিখিত এজাহারটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির ওপর দেয়া হয়েছে।

 

সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান জানান, রায়হানুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

 

মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডির পরিদর্শক আকতার হোসেন জানান, নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার কাছে হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে মামলার তদন্তের স্বার্থে সব বিষয় এই মুহূর্তে উপস্থাপন করা সম্ভব না।

 

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মির্জা সালাউদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি একাধিক কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিষয় আলোচনায় এসেছে। নিহতের ভাই রায়হানুল ইসলামকে হত্যা মামলায় আটক করেছে সিআইডি। এর মধ্যে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে। নিহতের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা ছিল। আমরা সব কয়টি বিষয় যাচাই-বাছাই করছি। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কেউ ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

July 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031