সর্বশেষ

» জুয়া’র ফাঁদে নিঃস্ব যুবসমাজ

প্রকাশিত: ১৫. মার্চ. ২০১৭ | বুধবার

  • সাইফুল আলম: প্রয়োজন নেই ক্লাবের। লাগে না সাজসজ্জা কিংবা নিরাপত্তার। নেই খেলার সরঞ্জামও। নির্দিষ্ট সময়েরও প্রয়োজন হয় না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়। শুধু আয়োজকের ভূমিকায় থাকে একটি ওয়েবসাইট। এ সাইটগুলো নেট দুনিয়ায় ‘বেটিং সাইট’ ও অনলাইন ‘ক্যাসিনো’ নামে পরিচিত। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লীগ খেলাকে কেন্দ্র করে বেটিং তথা বাজি ধরা চলে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নেটেলার এবং স্ক্রিল নামক দুটি সাইট। এসব ‘বাজিকর’দের বেশির ভাগই শিক্ষিত শ্রেণির।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রীড়া বাজির সাইট ‘বেট-৩৬৫’ ডটকম এবং দেশী অ্যাপস ‘নাইন এক্সচেঞ্জ’। ‘বেট-৩৬৫’ মূলত ক্রীড়াবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক বেটিং (বাজি ধরার) সাইট। ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সের যে কেউ খেলা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাজি ধরতে পারেন। ১০ টাকায় ৭০০ টাকা, ২০ টাকায় ১৪০০ টাকা; অর্থাৎ প্রতি টাকার বদলে ৭০ গুণ লাভ হয়। এমন আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সিলেটের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকরা। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড। এখন সেটাও সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁঁকে পড়ে অনলাইন জুয়ার দিকে।

জুয়াড়িদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রথমে এসব সাইটে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হয়। পরে জুয়ায় অংশ নিতে অর্থ পরিশোধ করা হয় ক্রেডিট কার্ডে। যাদের ক্রেডিট কার্ড নেই অথবা যেসব সাইটে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যায় না সেখানেও আছে বিকল্প ব্যবস্থা। দেশে এসব জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘এজেন্ট’। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তা ডলারে রূপান্তরিত করে জুয়াড়িদের অ্যাকাউন্টে জমা করে। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা আদান-প্রদান করে থাকে। সিলেটের বিপুল সংখ্যক জুয়াড়ি এখন ব্যস্ত এ জুয়া নিয়ে। এদের অনেকে এই খেলায় আসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

নগরের মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন আলী খেলেন বেট-৩৬৫ তে। তিনি বলেন, বেট-৩৬৫ দিয়ে তিনি বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ডলার তুলে নেই অ্যাকাউন্টে। এরপর ক্রিকেট, ক্লাবের ফুটবলে বাজি ধরি ডলারে। আর জিতলে আবারও সেই ডলার এজেন্টের মাধ্যমেই বিক্রি করে দেই। একই অবস্থা শহীদ করিমের। তিনি বলেন, বন্ধুদের দেখে এখানে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকেই এখন বড় বাজিকরে রূপান্তরিত হয়েছি। এই জুয়ায় জড়িয়ে বড় ধরনের ধরা খেয়েছি অনেকবার। বর্তমানে তিনি মোবাইল অ্যাপসে ৪টি একাউন্ট দিয়ে জুয়া খেলেন।

অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিলেটে বেট-৩৬৫ নামক আন্তর্জাতিক সাইটটিতে সবচেয়ে বেশি বেটিং করা হয়। সাইটটিতে বেটিংয়ে অর্থের ক্ষেত্রে দুটি মুদ্রা ব্যবহৃত হয় ‘ইউএসডি (মার্কিন ডলার) ও ইউরো’। অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড হওয়ার পর এবং নিজের অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করার পর বাজি ধরা যায়। যেকোনো খেলার লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালে বাজি ধরা যায়। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ম্যাচ, বল, ওভার, খেলোয়াড় ভিত্তিক বিট করা যায়। কোন দল জিতবে, কে কত রান করবে, কোন ওভারে কত রান হবে বাজিগুলো সাধারণত এমন হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাসিনো বা পোকারের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময়েও বাজি ধরা যায়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বলেন, অনলাইন জুয়াড়িদের ধরতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাজি বা জুয়ার সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031