সর্বশেষ

» কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিলেটের দুই শিক্ষিকার চাকরি হারানোর অভিযোগ

প্রকাশিত: ১২. এপ্রিল. ২০২৩ | বুধবার


Manual5 Ad Code
  • সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

চেম্বার ডেস্ক:: কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চাকরি হারালেন সিলেটের দুই শিক্ষিকা। তারা হলেন নগরীর কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার সুমি ও রুনা সুলতানা।
আজ বুধবার (১২ এপ্রিল) সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দুই শিক্ষক এমন অভিযোগ করেন।
এসময় তাদের পাশে ছিলেন,সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষিকা রুনা সুলতানার উপস্থিতিতে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার সুমি।

Manual4 Ad Code

এসময় তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত কাজী জালাল উদ্দিন বালিকা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ঝর্নারপাড়, কুমারপাড়া সিলেট এ অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে শিক্ষকতা করে আসছি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে আসছি একজন নন এমপিও অর্থাৎ খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে।

তিনি উল্লেখ করেন গত ২২/০৩/২০২৩ তারিখে বিদ্যালয়ে পবিত্র রমজানের ছুটি হয়ে যায়। ছুটির পর বাসা থেকে ডেকে এনে জোরপূর্বক আমি মাহমুদা আক্তার ও রুনা সুলতানার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে অব্যাহতি চিঠি গ্রহণ করান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল খালিক।

তিনি বলেন, আমরা হঠাৎ অব্যাহতিপত্র পেয়ে আমাদের দোষ খুঁজতে থাকি এবং মানসিকভাবে হতভম্ব হয়ে পড়ি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করি আমাদের দোষ কি? তখন তিনি বলেন আপনাদের কোন দোষ নেই, এনটিআরসিএ থেকে দুইজন শিক্ষক আসতেছে, সেজন্য অতিরিক্ত দুজন শিক্ষক দরকার নেই। আমরা বললাম কেন? ঐ দুই শিক্ষক একজন হিন্দু ধর্মের বিষয়ের শিক্ষক অন্যজন পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। আমরা দুজন তো এই বিষয়ের শিক্ষক নই। তারা আসতেছে বিদ্যালয়ের খালি পদে।
শিক্ষিকারা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল খালিক ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে আমাদের দুইজন শিক্ষককে অব্যাহতি দেন।

তিনি বিদ্যালয়ের কোনো নিয়ম মানতে রাজি নন, যে শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ৬ মাসের জন্য আসছেন তাদেরকেও অব্যাহতি দিতেন।

শিক্ষিকা সুমি দাবি করে বলেন, একটা নিয়ম অনযায়ী যারা জুনিয়র তাদের থেকে অব্যাহতি দিতেন তাও দেননি। অভিভাবক থেকে টাকা নিয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

তিনি আবার অভিভাবক প্রতিনিধি গর্ভনিং বডির সদস্য। এক ব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারেন কিভাবে? তাঁর পিঠ বাচানোর জন্য পুলিশের স্ত্রী ও উকিলের স্ত্রী নিয়োগ দেয় তার ইচ্ছা মতো। কোন কারণ দর্শানো ছাড়া সরাসরি অব্যাহতি দেয়া যায় না? তিনি তাও করেছেন? আরো যে, তিন মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে অব্যাহতি দিবেন তাও তিনি করেননি।

লিখিত বক্তব্যে সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার সুমি বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন চরিত্রহীন নারী লোভী, লম্পট, অযোগ্য ও উগ্রমেজাজি একজন ব্যক্তি। তিনি শিক্ষক জাতির জন্য কলংক, তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যে গুনাগুন থাকা দরকার তার কোনোটাই তার মধ্যে নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল খালিক আমাদের দুইজন শিক্ষক মাহমুদা আক্তার ও রুনা সুলতানাকে দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।

তার প্রস্তাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে হিংসা ও শত্রুতার কারণে আমাদের দুইজনকে সহাকারী শিক্ষক পদ থেকে অব্যাহতি দেন। স্কুল শিক্ষক আরোও প্রয়োজন থাকা স্বত্ত্বেও তিনি আমাদেরকে অব্যাহতি দেন। তার কারণ কি? তিনি আমাদের নিয়োগের সময় আশা দিয়েছিলেন আমাদের দুইজনকে স্থায়ী করবেন ও ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতিতে বেতন পরিশোধ করবেন তাও করেননি। আমাদের নিয়োগ স্কুলের প্রাইমারী সেকশনে। ৫/৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন এরা সবাই খন্ডকালীন। এদের সাথে এমপিও ভূক্ত শিক্ষক দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, নিয়মিত স্কুলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাইলে আমাদের স্কুলে আরো শিক্ষক নিতে হবে। কারণ আমাদের রুটিনের বাহিরে প্রতিদিন প্রক্সি ক্লাস নিতে হয়। এজন্য বিদ্যালয়ে আলাদা প্রক্সি খাতা রয়েছে। তাই আমাদের কেন এই অব্যাহতি দেওয়া হলো।

তিনি বলেন,আমার সহকর্মী রুনা সুলতানাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল খালিক বিভিন্ন উপায়ে যৌন হয়রানী করেন।

তিনি বলেন গত মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। মূলত রুনা সুলতানা নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য মান সম্মানের জন্য প্রধান শিক্ষককে হাত দিয়ে সরান। এই মূহুর্তে প্রধান শিক্ষকের আস্থাভাজন কিছু লোক ক্যামেরার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়। এলাকার কিছু অভিভাবক মুরব্বিয়ান লোক আমাদের পক্ষে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। সেদিনের ঘটনার পর স্কুলের অফিস কক্ষে একালাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে ওয়াদা করেন এসমস্যা সমাধান করবেন ও চাকুরি পূর্ণবহাল করে দিবেন। কিন্তু তিনি সমাধান না দিয়ে গোপনে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন আমাদের বিরুদ্ধে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন,
আমরা সম্মানের জন্য নামমাত্র বেতনে কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সততার সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের দুইজনকে অনেক ভালোবাসে। স্কুল ও আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের কাছে সন্তুষ্ট ছিলেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিজ্ঞানমেলা, স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সকালের সমাবেশে জাতীয় সংগীতের নেতৃত্বে দেওয়া সহ সবকিছুতেই আমরা পরিচালনা করে আসছি। এখন আমাদের এই চাকরীচ্যূত আমাদেরকে মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যন্ত করে ফেলেছে।

Manual6 Ad Code

শিক্ষিকারা বলেন, প্রধান শিক্ষকের উদ্দ্যেশ্য চরিতার্থ না হওয়ায় তিনি এই রমজান মাসে ০৯/০৪/২০২৩ তারিখে সিলেবাস দেওয়ার কথা বলে সকল শিক্ষার্থীকে ডেকে কৌশলে মাববন্ধন করেন আমাদের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষক বলেন তোমাদের উপবৃত্তির সুবিধা দিবো, মানববন্ধনে না গেলে পরিক্ষার খাতায় নাম্বার দিবো না, তোমরা ফেল করবে, তোমাদের জীবন শেষ। আমি মাহমুদা আক্তার সুমি ও রুনা সুলতানা আমাদের দুইজন শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না আমরা স্কুলে ঢুকতে চেষ্টা করলে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে বাধাঁ প্রদান করে এতে মানবাধিকার লঙ্গন হচ্ছে বলে আমি মনে করি। আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে আমাদের বিচার চাইতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের নামে কুৎসা রটনা করে তাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে।

প্রধান শিক্ষক একজন দুর্নীতিবাজ লোক। বিগত ৭ বছর ২০১৫-২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি কর্তৃক বরখাস্ত ছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। অন্যায়ভাবে আবার ২০২১ সালে স্কুলে জবরদস্তি করে স্থান দখল করেন। তিনি স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, বর্তমানেও তিনি স্কুলের ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষকদের নানাভাবে নির্যাতিত করেন। প্রধান শিক্ষক স্কুল চলাকালে আজ পর্যন্ত কোনো দিন ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে থাকেন না। সারাদিন বাহিরে থাকেন।

মাঝে মধ্যে স্কুলে এসে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে আমাদের সাথে রাগান্বিত করে বাহিরে চলে যান। তিনি ২/৩ দিন স্কুলে না এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেন। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

প্রধান শিক্ষক ২০২১ সালে স্কুলে আসেন এই ওয়াদা করে যে, ভালো হয়ে চলবেন। কাউকে বরখাস্ত করবেন না। তিনি এসেই দুইজন স্কুল শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। এমনকি সহকারী প্রধান শিক্ষককে অবসরে যাওয়ার একদিন আগে তিনি বরখাস্ত করেন। প্রধান শিক্ষক পূর্বের শত্রুতার কারণে এদের পেনশনের কাগজপত্র আটকে রেখেছেন। পরবর্তীতে আমাদের দুইজনকে অব্যাহতি দেন। পরস্পর শুনতে পাই তিনি পূর্বের সকল শিক্ষককে পরিবর্তন করে স্কুলকে নতুনভাবে সাজাবে। প্রধান শিক্ষকের সাথে ম্যনেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশ আছে সব ব্যাপারে।

Manual6 Ad Code

তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক গোপনে কিছু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর কাছে তিনি নিজে হেনস্তা হয়েছেন রুনা ম্যাডামের দ্বারা এই মর্মে প্রচারণা চালান। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষিকাদের বিভিন্ন ভাষায় গালাগালি করে। তিনি ছোট ছোট কোমলতী বাচ্চাদের ইমোশনালী ব্লাকমেইল করেন কান্নাকাটি করে মানববন্ধনের নাটক সাজায়।

Manual1 Ad Code

শিক্ষকরা বলেন,আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, এলাকাবাসী, সিলেটবাসীর কাছে বিচার চাই, আমাদের কি অপরাধ যে, ১৬ ও ১৩ বছরের চাকুরী করার পর বিনা নোটিশে আমাদেরকে অব্যাহতি দেন।

আমরা এই প্রধান শিক্ষককের অপসারণ ও শাস্তি চাই। আমাদের চাকুরী ফেরত চাই। মানবাধিকার চাই। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনতিবিলম্বে এই প্রধান শিক্ষককের অপসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে।

এ সময়, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অভিভাবক শিবলী রাণী দাস, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার তাহিয়া, এলাকাবাসীর পক্ষে খালেদ আহমদ মামুন, মো. আরিফ, মোবারক হোসেন ফাত্তাহ প্রমুখ।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code