সর্বশেষ

» আসেন দেখে যান, পদ্মা সেতু হয়েছে কিনা : খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৫. জুন. ২০২২ | শনিবার


Manual5 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: পদ্মা সেতু নির্মাণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ আনা বিএনপির সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আসেন দেখে যান, পদ্মা সেতু হয়েছে কিনা।

শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। সেখানে আরেকটি ফলক উন্মোচনের পর শেখ হাসিনা যোগ দেন মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ঘাটের জনসভায়।

সেখানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলি, তখন তারা বলেছিল, আওয়ামী নাকি কোনোদিন পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আমি খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করি… আসেন.. .দেখে যান… পদ্মা সেতু হয়েছে কি না।’

Manual5 Ad Code

২০০১ সালের মাঝামাঝি পদ্মার নদীর উপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শেষ করে জাপান। স্থান নির্বাচন করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

Manual4 Ad Code

২০০১ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তখন বিএনপি সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণে অনীহা দেখায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামাত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণে অনীহা দেখায়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচায় পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান বর্তমান মাওয়া-জাজিরা প্রান্তকেই বাছাই করে পদ্মা সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।

 

বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১-২০০৬ মেয়াদে এই সেতু নির্মাণের বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে আবার সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এসে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসে।

 

সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ২২ দিনের মাথায় সেতুর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক আলাপ-আলোচনার পর বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক জ্ঞানী-গুনী লোক ছিল, অর্থনীতিবিদ, বড় বড় আমলা ছিলেন। সবাই বলেছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু সম্ভব না। আজকে নিজেদের টাকায় কিভাবে করতে পারলাম। আপনারা.. বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তি সবথেকে বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।

 

বিশ্ব ব্যাংক যখন আবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত তখন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রে নানা মহলে ‘তদবির শুরু করেন’ বলে উল্লেখ  করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

শেখ হাসিনা বলেন, তার তদবিরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেল। তারা অভিযোগ আনল দুর্নীতির। এখানে দুর্নীতি কে করল? যে সেতু প্রাণের সেতু, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেখানে কেন দুর্নীতি হবে? ‘

Manual2 Ad Code

 

শেখ হাসিনা বলেন, তারা টাকা দেয়নি। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র বলে টাকা বন্ধ করল। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম টাকা বন্ধ করেছো ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশ বসে থাকে নাই। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে, অনেক কথা বলেছে..  এ সেতু আমরা করতে পারব না। আমার একমাত্র শক্তি আপনারা, বাংলাদেশের জনগণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের আমরা উপযুক্ত জবাব দিতে পেরেছি।

Manual8 Ad Code

 

শেখ হাসিনা বলেন, এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের অনেক অপমান, অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ছেলে জয়, পুতুল, রেহানার ছেলে ববি, আপনাদের সন্তান আবুল হোসেন (সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন), উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁঞাকেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু আমরা পিছু হটি নাই। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, আমরা এই সেতু নির্মাণ করব। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব। আমরা তা করতে পেরেছি। আপনারা সেই সাহস ও শক্তি দিয়েছেন। আমি আপনাদের পাশে আছি।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাগের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে শিবচরের কাঁঠালবাড়ির জনসভায় ভোর থেকেই দূর দুরান্ত থেকে আসতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। অনেকে পরিবারসহ একনজর দেখতে আসেন পদ্মা সেতু।

দুপুর নাগাদ কাঁঠালবাড়িতে লাখো মানুষের সমাগমে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আয়োজকরা হিমশিম খায় উপস্থিতির সামাল দিতে। দুপুর ১টায় যখন বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠেন প্রধানমন্ত্রী। ততক্ষণে মানুষে থৈ থৈ করছিল পদ্মার ওই পাড়।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দর থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন। সকাল ১০টায় সভা মঞ্চে পৌঁছান তিনি।

কর্মসূচি অনুযায়ী, মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। অংশ নিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, দেশের রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর প্রকাশ করেন। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে টোলপ্লাজার উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নিজ হাতে টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সড়কপথের শুভ উদ্বোধন করেন। সেখানে মোনাজাত শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন।

এরপর সড়কপথে জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু পার হয়ে তিনি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করে আবারও মোনাজাতে অংশ নেন। সেখান থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করেন। কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন। জনসভা শেষ করে শরীয়তপুরের জাজিরার সার্ভিস এরিয়া-২ এর উদ্দেশে সড়কপথে যাত্রা করেন।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code