সর্বশেষ

» কানাইঘাটে গৃহ শিক্ষিকার হাতেই নির্মমভাবে খুন হয় শিশু মুনতাহা, গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ১০. নভেম্বর. ২০২৪ | রবিবার


Manual6 Ad Code

তাওহীদুল ইসলাম: মার্জিয়া আক্তার শামিমা। এক ভয়ংকর নারীর নাম। নানা অপরাধের সাথে রয়েছে যার সম্পৃক্ততার অভিযোগ। নারী পাচারকারী দলের একজন সদস্য। সে ছিল মুনতাহার গৃহ শিক্ষিকা। মার্জিয়া আর মুনতাহার বাড়ি একবারে কাছাকাছি। মুনতাহা মার্জিয়ার ঘরে গিয়ে পড়ত। এতে সখ্যতা গড়ে উঠে মুনতাহার। মুনতাহাকে নিয়ে পরিবারের অজান্তে প্রায়ই মার্জিয়া চলে যেত বাজারে। এটা ভাল চোখে নেয়নি মুনতাহার পরিবার। মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ এক পর্যায়ে মার্জিয়ার কাছে পড়ালেখা বাদ দিয়ে দেন।

মার্জিয়া তার মা ও নানিকে নিয়ে সরকারি একটি খাস জায়গার উপর ঘর নির্মাণ করে বসবাস করতো। মার্জিয়ার পরিবার আর্থিকভাবে ছিল অস্বচ্ছল। তার মা ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। একদিন মুনতাহার কিছু কাপড়চোপড় ঘর থেকে চুরি করে নিয়ে যায় মার্জিয়া। এতে করে দুই পরিবারের মধ্যে একটু মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
মুলত প্রাইভেট পড়া থেকে মার্জিয়াকে বাদ দেয়া ও কাপড় চুরির দৃশ্য দেখা ফেলাই কাল হল মুনতাহার৷ এ ঘটনার জের ধরেই মুনতাহাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মার্জিয়া। পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী স্থানীয় ওয়াজ মাহফিলকে টার্গেট করে মার্জিয়া।
গত ৩ নভেম্বর, রোববার বীরদল মাদ্রাসার এনয়ামী জলসার দিন পরিবারের লোকজন যখন ওয়াজ মাহফিলকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন তখন মার্জিয়া মুনতাহাকে অপহরণের ছক আঁকে। ছক অনু্যায়ী ঐ দিন সন্ধ্যায় মুনতাহাকে ঘরে নিয়ে পৈশাচিক কায়দায় গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ কাজে সহযোগিতা করেন মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবি ও স্থানীয় ইসলাম উদ্দিন।
সাবেক গৃহ শিক্ষিকাই পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যার পর মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা।

Manual4 Ad Code

আজ রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে মাটিতে পুঁতে ফেলা লাশ তুলে মুনতাহার সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী নানার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে গৃহশিক্ষিকার মাকে আটক করেন স্থানীয়রা। এ সময় গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মুনতাহার লাশ দেখতে পান স্বজনরা।

Manual1 Ad Code

এ ঘটনায় শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও পাশ্ববর্তী বাড়ির নাজমা বেগম ও ইসলাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কানাইঘাট (সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়াকে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে মার্জিয়ার বাড়িতে মুনতাহার সন্ধানে তল্লাশি চালান স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালানোর এক পর্যায়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তাকে আটকাতে চাইলে তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয়রা কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। পরে মার্জিয়ার মাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, মুনতাহার নিখোঁজের পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। থানা পুলিশ হেফাজতে নিলে মুল রহস্য বেরিয়ে আসে।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধাকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার লাশ দেখতে পান। আটকের পর তিনি জানান, লাশ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার পার্শ্ববর্তী বাড়ির নানা মটর মিয়ার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন স্থানীয়রা দেখে ফেলেন

স্থানীয়রা জানান, মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী। একসময় ভিক্ষা করতেন মার্জিয়ার মা ও নানী। মুনতাহাকে বাড়িতে পড়াতেন মার্জিয়া। মার্জিয়াকে তার স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন। ফলে বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন মার্জিয়া। সম্প্রতি মার্জিয়ার পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল বলে জানতে পেরেছি।

কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, মুনতাহার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির পাশে প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তার ও তার মা আলীফজান মিলে তাকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, মুনতাহাকে গত রোববার (৩ নভেম্বর) অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়। ওইদিনই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাঁদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়। রোববার ভোরে আলীফজান বেগম মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় মর্জিয়া, তার মা ও ও স্থানীয় নাজমা বেগম, ইসলাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আলীফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন।

মুনতাহার বাড়িতে এসে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মা বাবা ও আত্মীয় স্বজনকে শান্তনা দিয়ে বলেন, ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে। এ ঘটনার সাথে আরো যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরও গ্রেফতারে করা হবে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। এরপর মুনতাহা প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে যায়। বিকেল ৩টার দিকে তাকে খুঁজতে গিয়েও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। খেলার সাথীরাও মুনতাহার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি।

Manual3 Ad Code

সে সময় ছোট্ট শিশু মুনতাহার সন্ধান দাতাদের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন অনেকেই। মুনতাহার সন্ধান এবং ‘অপহরণকারীকে’ ধরিয়ে দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন কয়েকজন প্রবাসী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা এ ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ফারমিস আক্তার নামের সিলেটের এক নারী সমাজকর্মী মুনতাহার সন্ধানদাতার জন্য একটি স্বর্ণের চেইন পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। তখনই পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করেছিলেন, মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে।
মুনতাহা হত্যার ঘটনায় কানাইঘাট থানায় আটককৃত ৪ জনের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা নং ৬।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code