সর্বশেষ

» কি আছে প্রথম ডোজগ্রহীতা ৮২ হাজার জনের ভাগ্যে! : সহসা মিলছেনা করোনা ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ১৩. জুন. ২০২১ | রবিবার

বিশেষ প্রতিবেদক : সহসা মিলছেনা করোনা ভ্যাকসিন। টিকার মজুদ শেষ হওয়ায় গত ২০ মে থেকে সিলেটে বন্ধ রয়েছে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রম। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আমদানী করা করোনা ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের মজুদ শেষ হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় সিলেটের করোনা টিকা কর্মসূচী। টিকা সংকটের কারণে ২৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় প্রথম ডোজ। ফলে নিবন্ধিত হয়েও প্রথম ডোজের জন্য সিলেটে অপেক্ষমান আছেন ৭৪ হাজার ৯৭৪ জন। আর বিভাগে বিভাগে ৮১ হাজার ৯১৯ জন এখনো দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়। প্রথম ডোজের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ না নিলে প্রথম ডোজের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েও সিলেটে করোনা ঝুঁকিতে আছেন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষমান টিকা গ্রহণকারীগণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সিলেট বিভাগে নিবন্ধন করেন ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ জন। এর মধ্যে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ডোজ নেন ৩ লাখ ৪৪২ জন। প্রথম ডোজের জন্য এখানো অপেক্ষমান আছেন ৭৪ হাজার ৯৭৪ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৫২৩ জন। এখনো দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অপেক্ষমান থাকতে হচ্ছে ৮১ হাজার ৯১৯ জনকে। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিশিল্ডের নতুন টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে। ফলে ৮১ হাজার ৯১৯ জনের ভাগ্যে কি আছে তা নিয়ে সন্দিহান দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমান সবাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন নিবন্ধন করেন। এর মধ্য থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। ২৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় প্রথম ডোজের কার্যক্রম। ফলে নিবন্ধিত ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৮১৪ জন প্রথম ডোজ বঞ্চিত হন। এরপর থেকে দেশে শুধু দ্বিতীয় ডোজ প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বুধবার (৯জুন) পর্যন্ত দেশে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৩৪ হাজার ২৮ জন। এখন পর্যন্ত দেশে দ্বিতীয় ডোজের বাকী রয়েছেন ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭ জন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমান এই প্রায় ১৬ লাখ মানুষের ভাগ্যে কি আছে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেনা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল সরকার। গত নভেম্বরে সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল। এরপর জানুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় ১ হাজার তিনশ’ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত ৩ কোটি ডোজ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চুক্তির পর সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দু’টি চালানে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে গত জানুয়ারি এবং ফেব্রæয়ারি মাসে। এরপর থেকে ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে এলেও চুক্তি অনুযায়ী আর কোনও টিকা পায়নি বাংলাদেশ। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে টিকা রফতানি বন্ধ করে রেখেছে ভারত। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের সাথে করোনা ভ্যাকসিন আমদানী করতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীন থেকে উপহার স্বরুপ সিনোফার্মার ৫ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামীকাল রোববার চীন থেকে আরো ৬ লাখ ডোজ টিকা আসছেছ। এই টিকা এলে দেশে পুনরায় টিকাদান কর্মসূচী শুরু হবে। তবে সেরাম থেকে কেনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কোন আশার বাণী শোনাতে পারেনি সরকার কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের তথ্য মতে, সিলেট জেলায় ১ লাখ ৫২ হাজার ২৬১ জন নিবন্ধন করেন। এরমধ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার ১১ জন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। আর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেন ৮৪ হাজার ৫৬১ জন। সিলেট জেলায় দ্বিতীয় ডোজ পেতে বাকী ২৯ হাজার ৪৫০ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় ৭২ হাজার ২ জন নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নেন ৬১ হাজার ৭৯০ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেন ৪০ হাজার ৬৫৫ জন। সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় ডোজের বাকী ২১ হাজার ১৩৫ জন। হবিগঞ্জ জেলায় ৭২ হাজার ৯৩৯ জন নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নেন ৫৭ হাজার ৬৬৮ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেন ৪০ হাজার ৭১০ জন। হবিগঞ্জে দ্বিতীয় ডোজের বাকী ১৬ হাজার ৯৫৮ জন। মৌলভীবাজার জেলায় ৭৮ হাজার ২১৪ জন নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নেন ৬৬ হাজার ৯৭৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নেন ৫২ হাজার ৫৯৭ জন। মৌলভীবাজারে দ্বিতীয় ডোজের বাকী ১৪ হাজার ৩৭৬ জন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেট সিটি এলাকায় ৬৯ হাজারের বেশী লোক নিবন্ধন করেন। এরমধ্যে ৬১ হাজার ১ম ডোজ নেন এবং ২য় ডোজ নেন ৪৬ হাজার ৯০০ জন। সিটি এলাকায় দি¦তীয় ডোজ পেতে বাকী ১৪ হাজার ১০০ জন। নগর এলাকায় প্রথম ডোজ শুরু হয় ৭ ফেব্রæয়ারী এবং ২য় ডোজ শুরু হয় ৮ এপ্রিল থেকে। এই দিক থেকে ফেব্রæয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজারের বেশী লোক আছেন যাদের ৮ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের বলা হয়েছে প্রথম ডোজের পর ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের ভিতরে দ্বিতীয় ডোজের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের বিশ^াস এই সময়ের মধ্যে সেরাম থেকে আমদানী করা টিকা দেশে আসবে এবং দ্বিতীয় ডোজের বাকী সবাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা পাবেন। এজন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা: মোহাম্মদ নুরে আলম শামীম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে করোনা টিকার জন্য বহুমুখী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা আশাবাদী সরকার সময় মতো টিকার ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয় ডোজের জন্য কারো প্রথম ডোজের কার্যকারিতা নষ্ট হতে সরকার দিবেনা। সুতরাং দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কাউকে চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

July 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031