সর্বশেষ

» প্রতিটি উপজেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১. মার্চ. ২০২১ | বৃহস্পতিবার

চেম্বার ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় এ সেন্টার স্থাপন করবে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার আধুনিকায়নের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় এই সেবা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা পর্যায়ক্রমে করে দেব। ইতোমধ্যে আরো ১১০টি ভিশন কমিউনিটি সেন্টার স্থাপনের বিষয়েও চিন্তা করছি এবং সে পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি। এর জন্য মনে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’

 

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৫টি বিভাগের আওতাধীন ২০টি জেলার ৭০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি ভিশন সেন্টার’-এর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগারগাঁওস্থ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

 

সরকারপ্রধান বলেন, কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত দুইজন সিনিয়র নার্স উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে রোগীর যাতীয় তথ্য প্রেরণ করেন এবং রোগীর সঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।

 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তার সরকার চক্ষু রোগীদের যেমন চোখে ছানি পড়া, গ্লুকোমা বা ডায়াবেটিস, রেটিনোপ্যাথি বা শিশুর চোখে আঘাত জনিত চিকিৎসা, পাওয়ার চশমার ব্যবস্থাপনা সরকারিভাবে দেয়ার উদ্যাগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় ৫কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আধুনিক চক্ষু সেবার আওতায় আসা সম্ভব হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো.আব্দুল মান্নান এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

 

অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম এবং রেফারেল ব্যবস্থার বিষয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়।

 

অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের ৫টি বিভাগের ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল যেমন- রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জের কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সিএমএমসি) এবং কুমিল্লা মেডিকেল হাসাপাতালকে বেজ মেডিকেল হাসপাতাল ধরে ২০টি জেলার ৭০টি উপজেলায় ৭০টি আই ভিশন সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে রয়েছে দক্ষ নার্সবৃন্দ। তাঁরা কোন রোগী চিকিৎসার জন্য এলে আধুনিক যন্ত্রাংশের সাহায্যে তার চোখের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার সম্পূর্ণ ফলোআপ বেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং ওষুধ সেবা প্রদান করে থাকেন। পরে রোগীকে ঐ ওষুধগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের নার্সবৃন্দ সেবন বিধি বুঝিয়ে দেন। এভাবেই বাড়ির নাগালে থাকা কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা বিশেষজ্ঞ চক্ষু সেবা যেন পেতে পারেন সেজন্যই এই সেন্টার চালু করা হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানের সঙ্গে রংপুরের পীরগাছা উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কমিউনিটি ভিশন সেন্টারগুলো ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল।

 

প্রধানমন্ত্রী পরে এসব স্থানের উপকারভোগী জনগণ, জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্ধজনে আলো দেয়ার চেয়ে বড় কাজ হতে পারে না। অন্ধত্ব মানুষের জীবনকে অর্থহীন করে তোলে। এই চিকিৎসার ফলে তারা সুস্থ হবেন। দেখতে পাবেন। জীবন হবে অর্থবহ। মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা সেবাটা দিচ্ছি।’

 

বাংলাদেশকে সুস্থভাবে গড়ে তুলতে হলে সুস্থ মানুষ দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মান্ধতা দূর করার জন্য প্রসূতি মাকে চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছি। প্রসবের আগে ইনজেকশন দিয়ে দেয়া হয়। যার কারণে এখন আমরা ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি। জন্মান্ধতা কমে গেছে।’

 

তিনি বলেন, তার সরকার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, কৃমির ওষুধ দিচ্ছে, ডিপিটি, বিসিজি সহ বিভিন্ন টিকাগুলো দেয়া হচ্ছে অর্থাৎ সার্বিকভাবে মানুষ যাতে সুস্থ থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের চক্ষু হাসপাতাল চেইন অরবিন্দ হাসপাতালের সঙ্গেও চুক্তি হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তাদের পরামর্শও আমাদের কাজে লাগছে। এজন্য অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতাল কতৃর্পক্ষকেও প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে আমাদের দেশের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে যদিও টিকা দান শুরু হয়েছে তারপরেও আমি বলবো মাস্ক পরে থাকা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কিছুক্ষণ পর পর ভাল করে হাত পরিস্কার করার যে স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে তা মানতে হবে।

 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় টিকাদানের ক্ষেত্রে সকলের নাম রেজিন্ট্রৈশন করায় গুরুত্বারোপ করে টিকাদান কেন্দ্রের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ও আহ্বান জানান।

 

তিনি বলেন, ‘টিকা দেওয়ার সময় আমি একটা কথা বলবো প্রত্যেকের নাম রেজিস্ট্রৈশন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন করে সেন্টারে যাবেন এবং আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। যখন সময় আসবে আপনাদের ডাকবে তখন আসবেন। এখানে কোনরুপ বিশৃঙ্খলা করবেন না। এ ধরনের ঘটনা অতীতে ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও যেন না ঘটে সেদিকে সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন।’

 

দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব শিক্ষা-দীক্ষায় ও স্বাস্থ্যসেবায় এবং মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের পর স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি ও লুটপাটকারীরা ক্ষমতায় আসে। যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে এটা আশা করা যায় না। আমরা ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলাম। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এগুলো বন্ধ করে দেয়।’

 

বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার কারণে আমি ভিডিও কনফারেন্সে আপনাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কথা বলছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ব্রডব্যান্ড লাইনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছি। মুজিববর্ষে কেউ সেবা বঞ্চিত হবে না। কেউ গৃহহীন থাকবে না। এজন্য সারাদেশে ঘর করে দিচ্ছি। নদী ভাঙাদের ঘর করে দেয়ার জন্যও আলাদাভাবে বাজেটে ১শ’ কোটি টাকা রেখেছি।’

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

July 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031