সর্বশেষ

» সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩ লাখ, এক দিনে রোগী ভর্তির রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৯. এপ্রিল. ২০২২ | শনিবার

চেম্বার ডেস্ক:: চলতি বছরে সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে মৃত্যুর হিসাব না থাকলেও রাজধানীর মহাখালীতে কলেরা হাসপাতালে মারা গেছেন ২৯ জন।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ২৩৩ জন রোগী। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এক দিনে ৯৯৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে যা একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হওয়ার নতুন রেকর্ড।

আইসিডিডিআর,বি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: মো: ইকবাল হোসেন জানান, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এটার কারণ মূলত বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঢাকা শহরেই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

আইসিডিডিআর,বি’র গণসংযোগ বিভাগ জানায়, সারা বছরই ডায়রিয়া হয়। তবে এ বছরের মার্চ মাস থেকে এর প্রকোপ বেড়ে গেছে। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ৪৩ হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মার্চ মাসে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৫০০। আর চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৩০০’র বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৮ এপ্রিল ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৮২ জন। এখন প্রতি ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে প্রায় ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জন। এরা হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন চারজন।

কলেরা হাসপাতালের প্রধান ডা: বাহারুল আলম জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার পর হাসপাতালের সামনে দুটি আলাদা তাঁবু করা হয়েছে। দুটি তাঁবুতে মোট শয্যা ১৫০টি। আর হাসপাতালে আছে ৪৫০টি। আরো কিছু রোগীকে অতিরিক্ত বেড করে জায়গা দেয়া হচ্ছে। এখন হাসপাতালে সার্বক্ষণিকভাবে কমপক্ষে ৬৫০ জন ডায়রিয়া রোগি ভর্তি থাকছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০’র বেশি রোগী এলেও সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা অনেক রোগীকে ফ্লুইড দিয়ে ‘স্ট্যাবল’ করে ফেলি। এরপর চিকিৎসাপত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিই। আর যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে তারাও চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে এখন আমরা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।’

এই সময়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পঁচা-বাসি খাবার খেয়েই বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান আইসিডিডিআর,বি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: মো: ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন গরম এবং বাতাসে আর্দ্রতা আছে। তাই খাবারে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, এটাও ডায়রিয়ার কারণ।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতেই এখন পানির সংকট চলছে। আবার গ্যাসের সংকট থাকায় ঠিক সময়ে রান্না-বান্না করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই দূষিত পানি পান এবং পঁচা-বাসি খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’

তিনি জানান, সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। কিন্তু এবার প্রাপ্তবয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর কারণ তারা নানা কাজে বাইরে থাকছেন। বিশেষ করে যারা নিম্নবিত্ত তারা এই গরমে বাইরের দূষিত পানি এবং শরবত বা জুস খাচ্ছেন। নিম্নবিত্ত মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তারা রাস্তার পাশে কাজ করেন, কেউ রিকশা চলান। এই গরমে তারা যা পাচ্ছেন তাই খাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ডা: মো: ইকবাল হোসেন সবাইকে পানিয়ে ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন। আর সেটা যে পরিমাণ পানি হোক না কেন বলক ওঠার পর আরো পাঁচ-সাত মিনিট ফুটাতে হবে বলে জানান তিনি।

আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই হাসপাতালে না গিয়ে খাবার স্যালাইন নিয়ম মেনে খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদি বেশি বেশি বমি হয়, চোখ মুখ শুকিয়ে যায়, অবসাদ লাগে তাহলে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নেয়ার পরার্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময়ে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবার একটু বেশি, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। টয়লেট শেষে ঠিকমত হাত ধুতে হবে। এটা পানিবাহিত রোগ তাই বিশুদ্ধ পানি যেভাবেই হোক ব্যবহার করতে হবে।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের সব বিভাগ ও জেলায়ই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি। তাদের হিসেবে ঢাকায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। সূত্র : ডয়চে ভেলে

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

Please continue to proceed