সর্বশেষ

» স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৯|| ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’

প্রকাশিত: ১৩. এপ্রিল. ২০২২ | বুধবার

Manual3 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: বছর ঘুরে আবার এলো বাংলা নববর্ষ। তবে এবারের নববর্ষ এসেছে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। বিশেষ করে টানা দুই বছর করোনা অতিমারির কারণে একরকম গৃহবন্দিত্বের পর এলো এবারের নববর্ষ।

 

এবারের নতুন বছর এমন সময়ে এলো যখন অফিস–আদালত সব খোলা। করোনার প্রভাবে প্রায় নিস্তব্ধ হয়ে আসা রাজপথে এখন গাড়ির চাপে আগের স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও অনেক বেশি ট্রাফিক জ্যাম। গত দুই বছরে যেমন ভাবতে হতো আবার কবে স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাফেরা করা যাবে। এখন সেই জায়গায় ভাবতে হয় কবে ট্রাফিক জ্যাম যাবে। গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় এই রমজানে স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরাও।

রাজধানীতে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রাও হচ্ছে এবার। পার্বত্য চট্টগ্রামে উদযাপন হয়েছে বৈশাবি উৎসবও।

 

Manual6 Ad Code

সব মিলে করোনার যাঁতাকলে পড়ে যে দিনের আশায় দিনগুনছিলাম আমরা, সেই ‘আবার জমবে মেলা/বটতলা হাটখোলা’ সেই দিন যেন ফিরে এসেছে। প্রত্যাশা করার সময় এসেছে ‘অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে/সোনার বাংলা ভরে উঠেবে সোনায়/ বিশ্ববাসী চেয়ে রবে’ বলার।

Manual4 Ad Code

তবে বৈশাখ জুড়ে যেমন নববর্ষ বা হালখাতার রেশ থাকে, তেমনি থাকে কালবৈশাখীর শঙ্কা। একইভাবে প্রাকৃতিক করোনাকাল শেষ হয়ে আসলেও আমাদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ফিরে আসে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। এই পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখেই সম্প্রতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি কখনো টিপকাণ্ড, কখনো হিজাব নিয়ে বাড়াবাড়ি আবার কখনো বিজ্ঞান ও ধর্মকে মুখোমুখি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আয়োজন।

 

Manual7 Ad Code

তবুও নববর্ষকে স্বাগত জনিয়ে পয়লা বৈশাখের নতুন সূর্যকে সামনে রেখে আমরা গাইবো ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। কারণ, পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে আবার জাগ্রত হোক সেই বোধ।

 

বাঙালির এক সার্বজনীন লোকউৎসব চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ। দিনগুলো আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জানান দেওয়া হয়। বিগত দিনের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ। এদিন দেশের সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি থাকে। দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দেবেন। নববর্ষকে সামনে রেখে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বুধবার (১৩ মে) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে অনলাইন ও প্রিন্ট গণমাধ্যম এবং টেলিভিশন-রেডিওগুলোতে থাকবে বিশেষ আয়োজন।

 

বাংলা নববর্ষ এক সময় পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। যখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরবর্তীতে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়। হিজরি চন্দ্র সন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন বাংলা সন।

এক সময় বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল অর্থনৈতিক বিষয় হালখাতা। ব্যবসায়ীরা গ্রামে-গঞ্জে নববর্ষের শুরুতে তাদের পুরানো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন।

 

Manual3 Ad Code

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে যা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তবে এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

 

বৃটিশ শাসনামলের পর পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায়। বিশেষ করে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে নববর্ষ উদযাপনের জন্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দেওয়া হয় বৈশাখী বোনাস।

 

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

 

ঢাকাপ্রকাশ-এর পক্ষ থেকে দেশে–বিদেশে আমাদের সব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা, শুভ নববর্ষ।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code