সর্বশেষ

» এই ধরাধামে পরীমনি নামের কাউকে দেখিনি: সিটি ব্যাংক এমডি

প্রকাশিত: ০৯. আগস্ট. ২০২১ | সোমবার

Manual1 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে “ঢালিউড নায়িকা পরীমনিকে গাড়ি উপহার দেওয়ার অভিযোগ” করে প্রকাশিত সংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন।

 

রোববার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে মাসরুর আরেফিন বলেন, তিনি পরীমনিকে চিনতেন না। ‘বোট ক্লাব’ ঘটনার আগে তার নামও শুনেননি এবং তার সঙ্গে কখনো কথাও হয়নি।

নায়িকা পরীমনির সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে হলুদ সাংবাদিকতা

আমেরিকায় বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ রোড শো-তে অংশ নিয়ে আমি এখন ঢাকার পথে। এর মধ্যেই শিকার হলাম এক প্রবল মিথ্যাচারের। ইত্তেফাক লিখে দিল: “একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে পরীমনির অডিও রেকর্ডে একটি গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমনির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথোপকথনে উঠে এসেছে।”

 

আমার কোনোকিছু বলার কোনো ভাষা নেই।

 

Manual1 Ad Code

আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমনি নামের কাউকে দেখিনি। অতএব তার নম্বর আমার কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকী ‘বোট ক্লাব‘ ঘটনার আগে পর্যন্ত পরীমনি নামটাও শুনিনি। আমার তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমনি?

 

আমার কাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাংকিং আর তারপর সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকা। ঢাকার কেউ (যারা ক্লাবে যান তাদের কেউও) বলতে পারবেন না তারা আমাকে কোনোদিন কোনো ক্লাব বা পার্টিতে দেখেছেন (এখানে আমি ক্লাব বা পার্টিতে যাওয়ার নিন্দা করছি না, সেটা যারা যাবার তারা যেতেই পারেন; আমি শুধু বোঝাচ্ছি যে মানুষ হিসাবে আমার টাইপটা কী?)। এতটাই অফিস ও ঘরমুখী এক মানুষ আমি।

Manual3 Ad Code

অতএব বলছি, পরীমনিকে গাড়ি দেওয়ার কথাটা আমার কানে লাগছে মঙ্গল গ্রহের ভাষায় বলা কিছুর কথার মতো।

 

আমার নিজের একটাও গাড়ি নেই। ব্যাংক আমাকে চলার জন্য গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে, তাতেই চড়ি। ব্যাংকের চাকরির শেষে নিশ্চয় কোনো ব্যাংক থেকে কার লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনে তাতে চড়ব।

 

Manual1 Ad Code

কোনো অভিযোগের মধ্যে মিনিমাম মিনিমাম এক সুতো সত্য থাকতে হয়। কিন্তু এ এক ভয়ঙ্কর বিষয় যে, আমি যাকে চিনি না, জীবনে যার বা যাদের সঙ্গে হ্যালো বলা দূরে থাক, যাদের নামটা পর্যন্ত আমি প্রথম জানলাম এই কদিন আগে, সেই নায়িকা বা মডেলকে আমি গাড়ি দিয়ে ফেললাম? কোথায় যোগাযোগ হল আমাদের? ফোন কল? তার নাম্বার কী? কল রেকর্ড আনা হোক।
তাহলে ঘটনা কী? আমি সত্যি জানি না, ঘটনা কী। বুঝি যে, আমাকে নিয়ে (অর্থাৎ এক অর্থে সিটি ব্যাংক নিয়ে) একটা ‘সস্তা’ ষড়যন্ত্র চলছে।

 

ইত্তেফাক-এর খবরে ওরা দ্যাখেন সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যানের নামটা পর্যন্ত লিখতে পারেনি। লিখেছে: “ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমনির গভীর সখ্যের বিষয়টি…।” শওকত রুবেল নামের মানুষটা কে? এই নামে তো কেউ নেই।

 

সাংবাদিক ভাইয়েরা, কী লিখেছেন আপনারা এসব? মানুষ ও তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন আপনাদের কাছে এতই ফেলনা যে, নামটাও ঠিক জেনে লিখবেন না? প্রিয় ইত্তেফাক, আমার ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নাম আলাদা। সেটা শওকত রুবেল না।

 

আমার অনুমান এই যে, ব্যবসায়ী জনাব শওকত আজিজ রাসেল আমাদের ব্যাংক চেয়ারম্যানের ছোট ভাই। একটা গোষ্ঠী তার হয়তো ক্ষতি চায়, এবং তারা তাদের সেই চাওয়ার সঙ্গে তাকে সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যান ভেবে নিয়ে ব্যাংক প্রধান হিসেবে আমাকেও নিষ্ঠুর ও বাছবিচারহীন এক সামাজিক নর্দমার মধ্যে ঠেলে দিতে এক মুহুর্ত দ্বিধা করলেন না।

 

তারা বুঝলেন না যে, ‘আগস্ট আবছায়া‘ (বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপরে চার বছরের গবেষণার শেষে লেখা আমাদের অন্যতম এক প্রধান উপন্যাস), ‘আলথুসার‘ বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড‘ নামের উপন্যাসের লেখকের, বাংলায় ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র‘ কিম্বা ‘হোমারের ইলিয়াড‘-এর এই অনুবাদকের এক পয়সা দুর্নীতির টাকাও থাকতে পারে না যা দিয়ে তিনি নিজের জন্য—ব্যাংক লোন নেওয়া ব্যতিরেকে—একটা বিলাসী বা ভাল গাড়ি কিনতে পারেন। অন্যকে কিনে দেবার কথা বাদই দিন।

 

Manual1 Ad Code

এবার লেখক সত্তার জায়গা থেকে একটা কথা বলি। আইনী বিষয় ও সামাজিক বোঝাপড়ার বিষয়গুলো বেশ তো গুলিয়ে যাচ্ছে! আমার কাউকে কোনো গাড়ি দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমার কাউকে ধরুন ভালো লাগল (যার সম্ভাবনা বাস্তবে কম, কারণ আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে এক সুন্দর সংসার আছে), তখন তাকে যদি আমি আমার সামর্থের মধ্যে দুই বক্স চকলেটও কিনে দিই, সেটা নিয়ে আইন ছাপিয়ে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ছাপিয়ে ‘সমাজের বিচার’ নামের যে-এক ড্রাগন আছে, সে এই সোশাল মিডিয়ার যুগে হাউ-হাউ করে উঠবে।

 

ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্গে নৈতিকতার প্রশ্নকে টেনে টেনে এনে আইনের আরও ‘উর্ধ্বেই’ বা ‘বাইরেই’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দৈনন্দিনের বাছ-বিচারগুলোকে। এরকম সমাজে অনেকের লাভ, কারণ আমরা সাধারণ মানুষেরা তখন ইতিহাসের ল্যাবরেটরিতে কাঁউ-কাঁউ করে বেড়ানো ইঁদুর হয়ে থেকে যাই। আমাদেরকে সেই ইঁদুর হওয়ার বিরুদ্ধে লড়তে  হবে। ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রতি মুহূর্তের একটা “ongoing work”। এই রাষ্ট্র আমাদের  স্বাধীনতাগুলো—স্বাধীনতার যে কাজটুকু অন্যের জন্য ক্ষতিকর না—এভাবে কেড়ে না নিক। বাস্তবেই অনেক ক্ষতিকর কিছু ঘটছে অনেক দিকে, অনেক অবিচার ও আর্তনাদের ময়লা উড়ছে অনেক অনেক কোনায়। সেদিকে চোখ থাকুক আমাদের।

শেষ কথা একটাই, আমি আমার মানব জীবনে এই নায়িকা বা মডেলদেরকে দেখিনি। তাদের সঙ্গে না-দেখা জগতের ফোনের যে-হ্যালো, সেটাও কোনোদিন বলিনি। তারা কারা তাও আমি জানতাম না ‘বোট ক্লাব’ কাণ্ডের আগে।

এখন তাহলে এক ব্যক্তির ওপরে, এক সাধারণ মানুষের ওপরে, এক লেখক ও কবির ওপরে, এক ‘কেউ-না এমন এক মানুষের ওপরে’ অবিচারের মাত্রাটা বুঝুন। বাকি বিচার এই সমাজের, সমাজই যেহেতু আছে বিচারকের ভূমিকায়।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code