» সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ২০. মে. ২০২২ | শুক্রবার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। তবে নতুন করে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তিনটি উপজেলার সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। গতকাল সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের একটি পাকা সেতু ঢলের পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে পড়লে দোয়ারাবাজারের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ছাতক উপজেলা সদরে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ২১৮ মিলিমিটার। এ কারণে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে।

এ দিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে পূর্ব পাগলা, জয়কলস, পাথারিয়া, দরগাপাশা, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম রয়েছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে দুই দিনের মধ্যে পুরো উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে যাবে। সদর উপজেলার কুরবাননগর, মোল্লাপাড়া, রঙ্গারচর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে প্রশাসন শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। ছাতক উপজেলায় ৬টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১১০টি পরিবার। দোয়ারবাজার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে দুটি। এখানে ১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জে ১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল। এতে গত শনিবার থেকে জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বন্যাকবলিত উপজেলার মধ্যে জেলা ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি আক্রান্ত। এসব উপজেলায় প্রায় সাত হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

ছাতক শহর থেকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সিলেট যাতায়াত করে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার মানুষ। কিন্তু বন্যার পানিতে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের পেপার মিল, হাসনাবাদসহ কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। একইভাবে জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর, বালিজুরীসহ আরও কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান জানান, পুরো উপজেলাই এখন বন্যাকবলিত। ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরের পুরোটাই প্লাবিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত পরিবারকে সহায়তায় ৩০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৬ লাখ টাকা ও ২ হাজার বস্তা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করছে।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031