লকডাউনে কোম্পানীগঞ্জে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত: ২২. এপ্রিল. ২০২১ | বৃহস্পতিবার


Manual8 Ad Code

আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ: 
অদৃশ্য এক অশুভ শক্তি গ্রাস করেছে সমগ্র পৃথিবীকে। কোভিড-১৯ নামক প্রলয়ের সাথে লড়াই করছে পুরো বিশ্ব। চিন থেকে গুটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীর কাছে মুখ থুবরে পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতি। ২১ শতকের এই বৈজ্ঞানিক যুগেও প্রায় দেড় বছরে আবিষ্কার হয়নি এর প্রতিষেধক। প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আর আক্রান্তর সংখ্যা কয়েক লক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রথম দিকে ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। আর এই লকডাউন বাস্তবায়ন করতে করতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সকল প্রকার জান বাহন চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ডাক্তার, আইনজীবী ও পথচারীর সঙ্গে পুলিশের বাকবিতন্ডায় ও হাতাহাতির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুভমেন্ট পাস দেওয়া হলেও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় তা ব্যবহৃত হচ্ছে না। কঠোর লকডাউনের কারণে মানুষের কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকায় দিশেহারা দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গেল বছর করোনার লকডাউনের সময় স্থানীয় পর্যায়ে সাহায্য সহযোগিতা করা হলেও এবার কিন্তু তা আর কেউ করছেন না। যার ফলে এসব মানুষ তাদের পেটের দায়ে লকডাউনের নিয়মনীতি ভাঙ্গতে বাধ্য হচ্ছেন।

Manual3 Ad Code

এদিকে সরকারের আদেশ বাস্তবায়ন করতে মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে ঘরে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য বলছে। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ লকডাউন কার্যকর করতে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল চলাচলের উপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। রাস্তা থেকে এসব গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক ব্যতীত প্রায় সব এলাকার রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচল করতে হয়। ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেলের প্রায় বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা নিজেদের সব সম্বল বিক্রি করে কিস্তিতে ক্রয় করেছে। কিস্তি পরিশোধ করার আগ পর্যন্ত গাড়ির সেল রিসিট দেয়া হয় না শোরুম থেকে। তাই তারা গাড়ির কাগজও করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ি থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। করোনার এই লকডাউনে পরিবারের খাবার যোগাড় করতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে কিস্তি পরিশোধ করে আবার ব্যাংকে রোড পার্মিটের জন্য টাকা জমা দিয়ে বেশিরভাগ চালকেরা থানা থেকে গাড়ি নিয়ে আসতে পারবে না। শুধু মোটরসাইকেল নয় সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাকে রাস্তা থেকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাড়ি থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই পুলিশের সিগ্ন্যাল না মেনে দূর্ঘটনার কবলে পতিত হচ্ছে। ২১ এপ্রিল বিকাল ৩.৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ইসলামপুরে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে টহল দিচ্ছিল। এমন সময় কোম্পানীগঞ্জ (থানা বাজার) থেকে টুকের বাজারগামী একটি ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাকে সিগ্ন্যাল দেয় পুলিশ। গাড়ি থামালে থানায় নিয়ে যাবে এমন ভয়ে পঞ্চাশোর্ধ চালক সিগ্ন্যাল অমান্য করে যেতে চাইলে পুলিশের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে গাড়িতে আঘাত করে। চালক গাড়িটি রানিং অবস্থায় ডানদিকে মোড় দিতেই ব্যাটারীচালিত অটোরিকশাটি উল্টে যায়। একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলও অটোরিকশার সাথে ধ্বাক্কা লাগে। এতে গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ ৪জন আহত হোন। ৩ জন কোম্পানীগঞ্জ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গেলেও সমাদ আলী নামের পঞ্চাশোর্ধ এক যাত্রীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় থাকে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে তার মাথায় ও পায়ে ৯ টি সেলাই রয়েছে। ডান চোখের নিচে আঘাত পাওয়ায় চোখ অস্বাভাবিক ফুলে গেছে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে থাকে সিলেটে পাঠানো হবে। এ ঘটনার খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মুজিবুর রহমান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রুগীকে দেখে যান।
এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কর্ম হারিয়ে হয়েছেন দিশেহারা। স্থানীয় ও সরকারি কোন সহযোগিতা না পেয়ে পেটের দায়ে বাহিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয়দের দাবি যেহেতু কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে কোন করোনা ভাইরাসের রুগী সনাক্ত হয়নি তাই কোম্পানীগঞ্জে বাহির থেকে কোন গাড়ি প্রবেশ করতে না দিয়ে অভ্যন্তরীণ গাড়িগুলো চলাচলে যেন সুযোগ দেয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হয়।

Manual4 Ad Code

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code