সর্বশেষ

» নিষিদ্ধ হলো ছাত্রলীগ, প্রজ্ঞাপন জারি

প্রকাশিত: ২৩. অক্টোবর. ২০২৪ | বুধবার

চেম্বার ডেস্ক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করিল।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হইবে বলেও জানানো হয়।

বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে গঠিত হয় ‘পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ নামে।

সংগঠনটির প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ। সাংগঠনিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করলে এর সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন খালেক নেওয়াজ খান।

পরবর্তীকালে এই সংগঠনের নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। বলা হয়, ছাত্রলীগই একমাত্র ছাত্র সংগঠন যে দলের হাত ধরে গঠিত হয় বৃহত্তর রাজনৈতিক সংগঠন, যেটির নাম আওয়ামী লীগ। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও ছাত্রলীগ থেকেই।

১৯৪৮ সালেই মাতৃভাষার পক্ষে ছাত্রলীগ আপসহীন অবস্থান তৈরি করে। ১১ মার্চ ছাত্রলীগ উর্দুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করে। ১৯৫৬ সালের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়, ’৫৭-এর শিক্ষক ধর্মঘট এবং ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের পালে বাতাস দেয় ছাত্রলীগ। বাঙালির মুক্তির ছয় দফা হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ আন্দোলনে রাজপথের প্রথম সারিতে অবস্থান ছিল ছাত্রলীগের।

ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে ছাত্র গণ-আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এরপর একাত্তরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের প্রায় ১৭ হাজার নেতা-কর্মী শহীদ হন।

১৯৭২ সাল থাকে ১৯৭৫ কালপূর্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। সামরিক শাসনের মধ্যেও ১৯৮৩ সালে শিক্ষা আন্দোলন ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ১০ দফা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরপর বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তর্কোন্দল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলাসহ নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে অবদান রাখলে বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নানান অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, ছিনতাই, শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে মারামারি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা— এমন কোনো অপরাধ নেই, যাতে জড়িত হয়নি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসব অপরাধে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন অনেকে। ফৌজদারি মামলাও হয় অনেকের নামে। কখনো বা কারাগারেও যেতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। তা সত্ত্বেও থামানো যায়নি ছাত্রলীগকে; বরং দিনে দিনে ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণের পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও মদদ ছিলো। অনেক ক্ষেত্রে এলাকায় নিজের দাপট প্রমাণ করতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।

সর্বশেষ ২০২৪ সালে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ডের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্র সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করলো।

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30