সর্বশেষ

» ছয় মাসে দেশে ফিরেছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার প্রবাসী

প্রকাশিত: ০৩. অক্টোবর. ২০২০ | শনিবার

চেম্বার ডেস্ক:: গত ৬ মাসে দেশে ফিরে এসেছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ২৯টি দেশ থেকে এসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ফিরেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল আলম জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে যারা ফেরত এসেছে তাদের মধ্যে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৮ জন পুরুষ এবং ১৬ হাজার ৬৪০ জন নারী রয়েছেন। তিনি জানান, বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কাজ না থাকা, কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাশ নিয়েও দেশে ফেরত এসেছেন। ফেরত আসা কর্মীদের অনেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যেতে পারবেন বলে সূত্র জানায়।

দেশে ফেরা কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৪৪ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মী ৪১ হাজার ৪৬০ জন। আর নারী কর্মী ফিরেছেন ৩ হাজার ১৫৬ জন।

সৌদি আরব থেকে ৩৯ হাজার ১৮৮ জন প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩ হাজার ৪১২ জন, আর নারী কর্মী রয়েছেন ৫ হাজার ৭৭৬ জন। সৌদি ফেরত কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে এবং কাজ না থাকায় ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

বিভিন্ন মেয়াদে কারা ভোগ করে আউটপাস নিয়ে ওমান থেকে দেশে ফেরত আসেন ১০ হাজার ৭১৩ জন। করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে কাজ না থাকায় টুরিস্ট নির্ভর দেশ মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৪৮৩ জন প্রবাসী কর্মী। আকামা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন ৯ হাজার ৯৯৭ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন ২ হাজার ৭৯৪ জন। বাহরাইন থেকে ফিরেছেন ৯২১ জন।

কাজ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসেছেন ৭১ জন প্রবাসী। কাতার থেকে ফিরেছেন ১৪ হাজার ৯১১ জন। মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন ৭ হাজার ৫৬৮ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেছেন ১০০ জন। কাজ না থাকায় থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন ৩২ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, জর্ডান থেকে ২ হাজার ১৯৭ জন এবং ইরাক থেকে ফিরেছেন ৮ হাজার ৩২ জন।

কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২১ জন এবং শ্রীলংকা থেকে ৫৪৮ জন।

অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১৫১ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে। এই ১৫১ জন প্রবাসী গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে ইতালি গেলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। পরে দেশে ফিরলে সবাইকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।

এছাড়া লেবানন থেকে ৫ হাজার ৮০১ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, মরিশাস থেকে ৪৫২ জন, তুরস্ক থেকে ৬ হাজার ১৪২ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, হংকং থেকে ১৬ জন, কম্বোডিয়া থেকে ১০৬ জন, জাপান থেকে ৮ জন, লন্ডন থেকে ৫৩ জন, লিবিয়া থেকে ৩১৫ জন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ১২৮ জন প্রবাসীকর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।

বিদেশ প্রত্যাগত এসব কর্মীদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসনে সরকার ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং তাদেরকে পুনঃ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আবারো বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসন ও প্রবাসে কর্মরতদের নিরাপদ অভিবাসনসহ তাদের সার্বিক কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রণালয় গৃহীত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিপদগ্রস্থ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জরুরি খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার জন্য প্রায় ১০ (দশ) কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান, কোভিড-১৯ এ মৃত প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশির পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান; করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিদেশ ফেরৎ কর্মীদেরকে কোয়ারেন্টিন পালন শেষে নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা; বিদেশ প্রত্যাগত অভিজ্ঞ কর্মীদের যথাযথ স্বীকৃতি ও সনদায়নের উদ্যোগ; বিদেশ ফেরত অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র কর্মী ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীর পরিবারের সদস্যদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ দেশে চলমান সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনসহ বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আওতায় কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত কর্মীদের ৪ শতাংশ সরল সুদে বিনিয়োগ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য ২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে সহজ শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঋণ প্রদানের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সাথে ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীরা অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমরা প্রবাসী কর্মীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। তাদের সামগ্রিক সুরক্ষায় সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’

image_print
           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

Please continue to proceed