পেছনের দরজা দিয়ে নয়, ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭. মে. ২০২২ | শনিবার


Manual6 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনই ক্ষমতা দখলের জন্য পেছনের দরজা ব্যবহার করেনি, বরং তারা সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। আমরা ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছি।

 

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

আজকে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদেরই দাবি ছিল, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটা তালিকা এবং এখনকার ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিতে ভোট দেবে সাথে সাথে  ভোটের রেজাল্ট পাবে। যাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা বলবৎ থাকবে।

 

তিনি বলেন, মানুষ যদি আমাদের ভোট দিতে না চায়, দেবেনা। আমরা আসবো না ক্ষমতায়। কিন্তু জনগণের ভোট প্রয়োগ সত্ত্বেও অতীতে বারবার চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা থেকে দূরে রাখা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন এবং এই সংগঠন মাটি ও মানুষের জন্যই কাজ করে তা আজকে প্রমাণিত।

ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় বসানোয় দলের পক্ষে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এর ফলে (আ.লীগকে ক্ষমতায় রেখে) গত ১৩ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ আ.লীগ এদেশের জনগণ ও এই মাটির  দল।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান আর্মি রুলস এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে এ দেশে ভোট কারচুপির সংস্কৃতিটা শুরু করে। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সব সময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের পার্সেন্টেজের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনো পেছনে ছিলনা। কিন্তু বার বার ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

আর শক্ররা কখনো ক্ষতি করতে পারেনা যদি  ঘরের শক্র বিভীষণ না হয়, এটা হলো বাস্তবতা। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটা সব সময়ই দেখা গেছে। যেটা সব থেকে দুর্ভাগ্য  ও দুঃখজনক বিষয়।

 

শত ষড়যন্ত্রের মাঝেও আওয়ামী লীগ এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করা আর ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য কি কাজ করবো সেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেই আমরা কাজ করেছি। কেননা জাতির পিতার যে ইচ্ছে এদেশের দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো- তা আমাদের পূরণ করতে হবে।

 

’৯৬ সালে সরকারে আসার পর জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকারের ঘরবাড়ির পাশাপাশি গৃহহীণদের জীবন জিবিকার ব্যবস্থা করে দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় পরিবারে পাঁচ জন সদস্য ধরা হলেও প্রায় ৪৫ লাখ লোককে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছে। কোথাও খাস জমি না পেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে এখন জমি কিনেও ঘর তৈরী করে দেয়া হচ্ছে। এই কাজ চলমান রয়েছে এবং  ঈদের আগে আমরা প্রায় ৩৩ হাজার ঘর উপহার দিয়েছি। জুলাই মাসে আরও ৩৫ হাজার ঘর আমরা দিতে পারবো। আর বাকী থাকবে ৪০ হাজারের মত। সেটা করতে পারলে ভূমিহীনদের যে হিসেবে আমরা নিয়েছিলাম সে অনুযায়ী আমরা পুনর্বাসন করতে পারবো।

তিনি এ সময় তালিকার বাইরেও কোথাও কোন গৃহহীন বা ভূমিহীন-গৃহহীন রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে দলের নেতা-কর্মীদের আহবান জানান।  তাহলে সরকার তাদের পুনর্বাসন করবে। কেননা সরকার চায় বাংলাদেশে একজন মানুষও আর ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না।

 

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যাদেরকে যুদ্ধ করে আমরা পরাজিত করেছি সেই পরাজিতদের পদাংক আমরা অনুসরণ করবো না। যদিও জাতির পিতাকে হত্যার পর সে রকম একটি মডেল হিসেবেই এদেশকে তৈরী করার ষড়যন্ত্র হয়। আমরা আমাদের স্বকীয়তা-ঐতিহ্য কৃষ্টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।

Manual5 Ad Code

 

ষড়যন্ত্রকারিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চান কিন্তু জনগণের ভোট চাইতে পারেন না বা সে সামর্থ যাদের নেই, সংগঠন করার সামর্থ নেই কিন্তু আকাঙ্খা আছে তারাই চাইবে এদেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। কারণ সাসরিক জান্তার পকেট থেকে ক্ষমতায় বসে যে সমস্ত দল গঠন হয় তারা গণতন্ত্র দিতেও পারেনা, চর্চাও করেনা, বোঝেও না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দলেরতো একটা নেতৃত্ব থাকতে হয়। তাদের  নেতৃত্ব কোথায়, দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত। একজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতি, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ  বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। আরেকজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। এই নেতৃত্ব নিয়ে চলছে বিএনপি। আর এরসঙ্গে ডান, বাম, অতি বাম এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনেকে গাঁটছাড়া বাঁধতে চেষ্টা করছে। একটা অলটারনেটিভ থাকা উচিত। তারা যদি সুসংগঠিত হতে পারে হোক। তবে, তারা কেবল দেশের বদনাম বিদেশীদের কাছে করে বেড়ায়, যেন তাদের আকাঙ্খা বিদেশ থেকে কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এখনকার বাংলাদেশ আর সেটা নয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়া এবং ঈদ শেষে পুনরায় মানুষ নির্বিঘ্নে ফিরতে পারায় তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

 

তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষের একটা চমৎকার বিষয় যে, যেখানেই থাকুক ঈদে বাড়ি যায় এবং আত্মীয়  পরিজনের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদযাপন করে। আর এই উৎসব উদযাপনের মানসিকতাটা পৃথিবী থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাঙালি সমাজে সেটা এখনো রয়েছে এবং সবাই ছুটে যায়  নিজেদের মাটির টানে।

Manual4 Ad Code

 

তিনি বলেন, এর ফলে গ্রামে যেমন অর্থসরবরাহটা বাড়ে তেমনি মানুষের স্বচ্ছলতাও বৃদ্ধি পায় এবং গ্রামেরও কেনা বেচাটা যথেষ্ট ভাল হয়। আর আল্লাহর রহমতে এখন আর সে দিন নেই যে দারিদ্র্যতার জন্য মানুষ ঈদ উদযাপন করতে পারে না। আর এভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং চাঙ্গা করে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য অর্থাৎ তৃণমূল থেকেই উন্নয়ন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যকে বলবো আপনাদের নিজ এলাকার যেমন খোঁজ রাখতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং এই সংগঠনকে যারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে তাদেরকেও সেভাবে তৈরী করতে হবে। অর্থাৎ দেশকে ভালবেসে দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করলে পরে সে নেতৃত্বই সাফল্য  আনতে পারে।

 

রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কি? কোথায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি?

তাঁর সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছে, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যতা ৪০ ভাগ থেকে ২০ভাগে নামিয়ে এনেছি। এবারের সেন্সাস রিপোর্টেও আপনারা দেখবেন এ্ই দারিদ্র্যতা বা হত দরিদ্র এমনভাবে কমে গেছে যে বিশ্বও বিস্মিত হবে।

 

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জিনিষের মুল্যবৃদ্ধি হলেও তাঁর সরকার কার্যকর ও তড়িৎ পদক্ষেপে দেশে সেভাবে জিনিষপত্রের দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশে^র বিভিন্ন উন্নত দেশে ১০ শতাংশ এবং ইউরোপের কোন দোন দেশে ১৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে, আমেরিকার ধারণা তাদেরও আগামীতে মূল্যস্কীতি ১০ শতাংশ হবে। জিনিষপত্র, ভোজ্য তেল পাওয়া যাচ্ছেনা । লন্ডনে তেল কেনায় রেশনিং সিষ্টেম চালু হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধের ফলে পরিবহন ভাড়া যেমন বেড়েছে তেমনি আমদানীর ওপরও বিরুপ একটা প্রভাব পড়েছে। সবকিছু আমরা উৎপাদন করতে পারিনা কিছু কিছু দ্রব্য বাইরে থেকে আনতে হলেও তাঁর সরকার অনেক কিছুরই এখন দেশে উৎপাদন শুরু করেছে। যেমন পেঁয়াজের কান্না (অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি) আর কাঁদতে হবেনা।

Manual5 Ad Code

 

দেশে এক সময় ভাল বাদাম তেল হতো তা দিয়েই ভাজা-পোড়াটা হতো উল্লেখ করে তিনি ভাল ষরিষা, তিল উৎপাদন হচ্ছে এবং ধানের কূড়া থেকেও তেল হচ্ছে জানিয়ে ভোজ্য তেলের জন্য দেশেই কি ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় যে জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

 

তিনি এ সময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কেননা বিশ্বব্যাপী যে মন্দা তা আরো বাড়তে পারে এবং আমাদের দিকেও আসতে পারে। কাজেই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।

Manual6 Ad Code

 

তাঁর সংগঠন নিয়মিত সম্মেলনের আয়োজন করে এবং আবারো সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সংগঠনের ঘোষণাপত্রটাকে সময়োপযোগী করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যেই আগের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code