যে ৫ কারণে জিতেছেন বাইডেন

প্রকাশিত: ০৮. নভেম্বর. ২০২০ | রবিবার

Manual4 Ad Code

চেম্বার ডেস্ক: যে ধরনের প্রচারণা ও নির্বাচন এবার যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে গেল সেটি ছিল নজিরবিহীন। কয়েক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারি আর দেশজুড়ে দীর্ঘ সামাজিক সহিংসতার মতো অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন।

 

যাতে এমনই একজন জো বাইডেনের প্রতিপক্ষ ছিলেন যিনি মার্কিন রাজনীতির প্রথাগত রীতির অনুসারী নন।

 

Manual1 Ad Code

জো বাইডেন প্রায় ৫০ বছর ধরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার দীর্ঘদিনের। অবশেষে তৃতীয়বারের চেষ্টায় সফল হলেন তিনি। পাঁচটি কারণ জয়ে সাহায্য করেছে।

 

কোভিড, কোভিড, কোভিড
জো বাইডেনের জয়ের পেছনে সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ যা সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। একই সাথে বদলে দিয়েছে মার্কিন মানুষের জীবন ও রাজনীতি। উইসকনসিনে নির্বাচনী র‌্যালিতে কোভিড-১৯ সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ফেক নিউজে সব কিছুই কোভিড, কোভিড, কোভিড, কোভিড’।

 

মহামারি সম্পর্কে তার যে অবস্থান, যেভাবে তিনি বিষয়টি সামলেছেন সেটি শেষপর্যন্ত তার বিপক্ষেই গেছে।

 

অপরদিকে জো বাইডেন ক্যাম্প কোভিড ইস্যুতে যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেটি তাকে এগিয়ে দিচ্ছে এমনটাই দেখা গিয়েছিল গত মাসে করা এক জনমত জরিপে।

 

যাতে জো বাইডেন ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারিতে যে ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা কৌশলকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

 

মহামারি ও এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই যেভাবে লক্ষ্যচ্যুত হয়েছেন, বিজ্ঞানকে প্রশ্ন করেছেন, একদম হুট করে এলোমেলোভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পক্ষপাতমূলক আচরণ এই বিষয়গুলো জো বাইডেন ক্যাম্প সফলভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে কাজে লাগিয়েছে।

 

হিসাব কষে ধীরগতির প্রচারণা
জো বাইডেন তার দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে ভুল বক্তব্য ও অসমীচীন কাজের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিলেন। যেসব ভুল তাকে প্রায়শই বিপদগ্রস্ত করেছে। ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে এমন ভুল তার হারের কারণ ছিল।

 

২০০৭ সালে আবার যখন তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন সেবার তার তেমন একটা সম্ভাবনাই ছিল না। কিন্তু তৃতীয়বার যখন ওভাল অফিসের জন্য লড়েছেন তখন তিনি বক্তব্য দেবার সময় যথেষ্ট কম হোঁচট খেয়েছেন।

 

এর একটি বড় কারণ হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে তার লাগামহীন অসামঞ্জস্যপূর্ণ নানা বক্তব্যের কারণে নিয়মিত খবরের উৎস ছিলেন।

 

Manual6 Ad Code

তাছাড়া বৈশ্বিক মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময়ের সহিংস বিক্ষোভ এরকম জাতীয় পর্যায়ের বড় ঘটনার দিকে সমাজের মানুষের মনোযোগ বেশি ছিল।

Manual2 Ad Code

 

এর বাইরে এবার বাইডেন ক্যাম্প খুব হিসেব কষে এগিয়েছে। বাইডেনকে যতটা সম্ভব কম জনসম্মুখে আসতে দেখা গেছে।

 

প্রচারণার গতি এমন ছিল যাতে প্রার্থী ক্লান্তি থেকে অসাবধানতাবশত কিছু না করে বসেন। বাইডেন ক্যাম্প বরং ট্রাম্পকে তার মুখ খোলার সুযোগ দিয়েছে যা শেষ পর্যন্ত কাজে লেগেছে।

 

আর যেই হোক ট্রাম্প নয়
নির্বাচনের দিনটির এক সপ্তাহ আগে জো বাইডেন ক্যাম্প তাদের সর্বশেষ টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করে। গত বছর জো বাইডেন প্রার্থী হিসেবে যখন মনোনীত হন এবং যেদিন তার প্রচারণা শুরু করেন সেসময়কার বক্তব্যের সাথে এই বিজ্ঞাপনের বক্তব্যে বেশ লক্ষণীয় সাদৃশ্য ছিল।

 

এই নির্বাচনকে উল্লেখ করা হয় ‘যুক্তরাষ্ট্রের আত্মা রক্ষার যুদ্ধ।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরকে বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলার সময়কাল বলে উল্লেখ করা হয়।

 

ট্রাম্পের সময় যে মেরুকরণ হয়েছে, যে ধরনের বিতর্কের জন্ম তিনি দিয়েছেন মার্কিন জনগণ তা থেকে মুক্তি চেয়েছে।

 

তারা শান্ত ও অবিচল একজন নেতা চেয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই বলেছেন তারা ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্পের আচরণে রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ।

 

বাইডেন ক্যাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে এই নির্বাচন যেন দুই প্রার্থীর মধ্যে যোগ্য একজনকে বেছে নেবার নির্বাচন নয়।

 

এটি যেন ট্রাম্প সম্পর্কে একটি গণভোটের মত বিষয়, এমন কৌশল ছিল বাইডেনের প্রচারণায়। জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নন, এমন বার্তা দেয়া হয়েছে ভোটারদের।

 

মধ্যপন্থী অবস্থান
প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবার লড়াইয়ে জো বাইডেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স, যিনি বামপন্থী হিসেবে পরিচিত। আর একজন ছিলেন এলিজাবেথ ওয়ারেন। যার ক্যাম্পেইনে বেশ ভালো অর্থের জোগান ছিল।

 

এই দুজনের যে কোনো সভায় রক গানের কনসার্টের মতো মানুষ জড়ো হতো। কিন্তু জো বাইডেন উদারপন্থীদের চাপের মুখেও মধ্যপন্থী অবস্থান বজার রেখেছেন।

 

তিনি সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা, বিনামূল্যে কলেজ শিক্ষা ও ধনীদের জন্য বেশি কর আরোপ করার নীতিগুলোতে সমর্থন দেননি। এর ফলে তিনি মধ্যপন্থী ও অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদের কাছে টানতে পেরেছেন। কমালা হ্যারিসকে রানিং মেট হিসেবে বেছে নেবার সিদ্ধান্তে এটি প্রকাশ পেয়েছে।

Manual4 Ad Code

 

বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেনের সাথে শুধু একটি জায়গায় মতের মিল ছিল বাইডেনের। আর তা হলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা।

 

এই ইস্যু দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করেছেন তিনি যাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

বেশি অর্থ, কম সমস্যা
এই বছরের শুরুতে জো বাইডেনের প্রচারণা তহবিল প্রায় শূন্য ছিল বলা যায়। ট্রাম্পের বিপক্ষে তার সীমাবদ্ধতা ছিল এটি। ট্রাম্পের প্রচারণা ছিল শত কোটি ডলারের বিষয়। কিন্তু এপ্রিল মাসে এসে তহবিল গঠনে জোরালোভাবে লেগে পড়ে বাইডেন ক্যাম্প। অন্যদিকে ট্রাম্পের পদ্ধতি হচ্ছে বাড়াবাড়ি অপচয়।

 

নির্বাচনী প্রচারণার শেষের দিকে এসে ট্রাম্প ক্যাম্পের চেয়ে বড় তহবিল গড়েছিলেন বাইডেন। অক্টোবর মাসে ট্রাম্পের চেয়ে ১৪৪ মিলিয়ন ডলার বেশি ছিল বাইডেনের তহবিলে। যা ব্যাবহার করে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে রিপাবলিকানদের জর্জরিত করে ফেলা হয়। কিন্তু শুধু অর্থ দিয়েই সব হয় না। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনও বড় তহবিল গড়েছিলেন।

 

কিন্তু এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে একদম মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা অনেক কমিয়ে দিতে হয়েছে। মানুষজন অনেক বেশি সময় ঘরে কাটিয়েছে তাই গণমাধ্যমের প্রতি তাদের মনোযোগ অনেক বেশি ছিল।

 

ভোটার আকর্ষণ করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গণমাধ্যমে বার্তা দিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

           

সর্বশেষ

আর্কাইভ

November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code