সর্বশেষ

» বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্রলীগ চাই না || মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: ১৮. ফেব্রুয়ারি. ২০২২ | শুক্রবার

মেহেদী হাসান: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির দাপট,অস্থিরতা, সেশনজট দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ভর্তি হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশ, সেশনজট, রাজনৈতিক সংঘাত সবকিছু মিলিয়ে উদ্বেগ থাকায় আমার অভিভাবকরাও তাতে সায় দেন। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ছাত্র রাজনীতি শুরু হয় তাহলে সেই দুশ্চিন্তা আবারও ফিরে আসে। হঠাৎ কী এমন হলো যে এখানেও ছাত্র রাজনীতি, প্রচলিত কমিটি গঠন, এসব করতে হবে ?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি কখনোই সরব ছিল না। সম্প্রতি গণহারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের এই ঘোষণা আমার মত হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। আগে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও গত কয়েক দিনে ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়েছে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর এমন কমিটি দেওয়া শুরু করেছেন তারা। এমনকি সব ছাড়িয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর জোরেশোরে বার্ষিক সম্মেলন করেছে ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট। ছাত্রলীগের এ আয়োজনে সরকারী দল আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা আমরা দেখেছি। এসব দেখে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে উদ্বিগ্ন। আমার মত অনেক শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। কারণ,ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি,চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র আমরা ভয় পাই। অস্ত্রনির্ভর ছাত্ররাজনীতি আমাদের জীবনকে অনিরাপদ করে তুলবে।

আমার আশঙ্কা,বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অন্য দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকতে চাইবে। এতে শিক্ষার পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হবে। ছাত্রলীগ যেখানে ঢুকবে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও প্রবেশ করবে। সব সংগঠনের এক জায়গায় সরব রাজনীতির ফলাফল তো আমরা অনেক বছর ধরেই দেখছি। এক দল কর্মসূচি দেবে, অন্য দল এসে সেটি বন্ধ করবে। এটাই তো চলে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব শুরু হলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কেমন হবে।

পরিবেশের কথা চিন্তা করে টাকা খরচ করে অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সংগঠন যতদিন ছিল না ভালোই ছিল। এখন ছাত্রলীগ শুরু হবে। তারপর বাম-ডান আরও কত কী। একজনের আরেকজনের ওপর দমন-পীড়ন চালাবে। সংগঠনে নাম লেখানোর প্রতিযোগিতা চলবে। এগুলোর জন্য তো আমাদের বাবা-মা আমাদেরকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করায়নি।

আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতির সুস্থ চর্চা তো হয় না। যেটা হয় তা হলো ক্ষমতা প্রদর্শন। আমি এটা স্বীকার করি যে,সুস্থ ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু এখন ছাত্র রাজনীতির নামে যা হয়, সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরব হলে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে আমাদের ওপর আলাদা একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার প্ল্যানের কারণে আমাদের ওপর এমনিতেই চাপ থাকে। তাছাড়া এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ তো আছেই। সেগুলোর সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকি আমরা। এখন এসবের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তৈরি হলে লেখাপড়ার ওপর আলাদা চাপ তৈরি হবে। তাই,আমি একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনঃর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। আমরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে চাইনা-এটা স্বজ্ঞানেই বলছি।

লেখকঃ শিক্ষার্থী,আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

[hupso]

সর্বশেষ