সর্বশেষ

» অনলাইন জুয়ার খপ্পরে তরুণ সমাজ

প্রকাশিত: ১৪. সেপ্টেম্বর. ২০১৮ | শুক্রবার

চেম্বার প্রতিবেদক: অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পাতা হয়। লোভ দেখানো হয় এক দিনেই লাখপতি হওয়ার! এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন দেশের উঠতি বয়সি তরুণ, বেকার যুবকেরা। ঘরে বসেই যদি লাখ লাখ টাকা উপার্জন করা যায় তবে ক্ষতি কি! এমন ধারণা থেকেই এসব জুয়া খেলার সাইটে যুক্ত হয়ে সর্বস্ব হারাতে হচ্ছে। জুয়ার সাইটে যুক্ত হতে প্রথমেই দিতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। সেই টাকায় ডিজিটাল কয়েন কিনে ধরতে হয় ‘বাজি’। প্রথম দিকে বাজির টাকায় যখন দুই তিন গুণ টাকা ফেরত আসে, তখন বাড়তে থাকে লোভ। যেভাবেই হোক আরো টাকা জোগাড় করে আবার ধরা হয় বাজি। কিন্তু হেরে গেলে সব টাকাই জলে! তখন টাকা উদ্ধারের জন্য আবারো আরো টাকা জোগাড় করে বাজি ধরার চক্রে পড়ে নিঃস্ব হতে হয়।

এসব অনলাইন অ্যাপগুলোর টার্গেট থাকে মূলত দেশের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থী ও বেকার জনগোষ্ঠীর ওপর। দেশ জুড়ে রয়েছে এদের বিশাল এজেন্ট। এসব এজেন্টের কাজ হলো সাইটে কাজের জন্য গ্রাহক জোগাড় করা। জুয়া খেলার জন্য প্রতি গ্রাহক যে পরিমাণ টাকা প্রদান করেন এবং লাভের ওপর নির্দিষ্ট অংশ এজেন্টরা কমিশন হিসেবে পেয়ে থাকেন। যখন এমন জুয়ার অ্যাপের কথা একটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন এজেন্টকে আর তেমন কাজ করতে হয় না। কারণ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে জুয়া খেলার অ্যাপটির কথা। বন্ধুর মাধ্যমে বন্ধু জানতে পারে অ্যাকাউন্ট খুললেই লাখ লাখ টাকা ইনকাম করার সুযোগ। দেশের তরুণ যুবকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এভাবে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
একজন তরুণ তখন জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। জুয়া খেলার জন্য যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করে। সেটা হতে পারে বাসায় মিথ্যা কথা বলে টাকা নেওয়া, এমনি নিজের ঘরে চুরি পর্যন্ত। জুয়া খেলা মাদকের থেকেও ভয়ংকর। জুয়ায় জিতলে আরো কীভাবে জিতা যায় সেই চিন্তা থাকে সবসময়। হারলে আসল টাকা উঠানোর জন্য জুয়া খেলা চলতে থাকে। দেশের গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা, শহরে এই জুয়ার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। জানা যায়, এই জুড়ার ফাঁদে পড়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে, কেউ জমি বিক্রি করে হয়েছে সর্বস্বান্ত। জুয়ায় বাজি ধরলে টাকা আসবেই, এমন লোভে অনেকে অন্যের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে। সেই ঋণের টাকায় খেলে বাজি। কিন্তু বাজিতে হারলে লাভের অর্থ তো দূরে থাক, ঋণের টাকাও শেষ। এভাবে আরো ঋণ করতে থাকে। একসময় নিঃস্ব হয়ে মানুষের বঞ্চনা আর হতাশায় ডুবে অনেকে মৃত্যু ছাড়া আর বিকল্প পথ দেখেন না। এই জুয়া যেন এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদ। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী আগামীর ভবিষ্যৎ। বর্তমানের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। জুয়ার ফাঁদে পড়ে দেশের তরুণ একটি অংশ নিজেদের জীবন নষ্ট করলে দেশেরই ক্ষতি। তাই সরকারকে এই ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেরটি কমিশন (বিটিআরসি) জুয়ার অসংখ্য ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে। রিপোর্ট জানিয়ে বন্ধ করা হয়েছে বেশকিছু অ্যাপ। বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭-এর ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ঘর, তাঁবু, কক্ষ, প্রাঙ্গণ, প্রাচীরবেষ্টিত স্থানকে জুয়ার স্থান বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহারের ফলে জুয়ার ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি ডিসি সম্মেলনে এ ধারাটি পরিবর্তন করে ডিজিটাল জুয়ার আইন যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যারা দেশের ভেতর এসব জুয়ার অ্যাপ বা সাইট পরিচালনা করছে তাদের সমূলে উৎপাটন করতে হবে। দেশ ও সমাজকে নষ্টের হাত থেকে রক্ষায় কঠোর আইন করতে হবে। জুয়ার মূল হোতাদের ধরতে পারলে সমাজ বিনষ্টকারীদের মেরুদ- ভেঙে দেওয়া যাবে। সর্বোচ্চ আইন করে এদের শাস্তির বিধান করতে হবে। যেন আর কেউ এসব জুয়ার সাইট খোলার সাহস না পায়। দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

[hupso]

সর্বশেষ

আর্কাইভ

September 2018
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930