একটি অনুন্নত অবহেলিত জনপদ কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়ন ||মীম সালমান
মতামত বিভাগ:
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একটি অবহেলিত ও অনুন্নত ইউনিয়ন হচ্ছে ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়ন। এটি একটি প্রাচীন জনপদ হলেও এর উন্নয়ন সব সময়ই পিছনে পড়েছে। আর বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো হয়েছে বাধাগ্রস্ত।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো ইউনিয়নবাসী পায়নি তার ন্যায্য অধিকার। ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নয়নের জয়জয়কার হলেও রাজনৈতিক মারপেঁচের কারণে যুগ যুগ ধরে ইউনিয়নের জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ইউনিয়নের পুর্ব ও উত্তরে ভারতের সীমান্ত, এবং দক্ষিণে সেতুহীন সুরমা নদীর কারণে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জনসংখ্যার ইউনিয়নটি একটি জীবন্ত কারাগার হিসেবে ধরে নেয়া যায়।
প্রতি বছর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বিরোধী দলের চেয়ারম্যান হওয়ার দরুণ।
দেখা গেছে বিএনপি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, তখন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান। আবার আওয়ামীলীগ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তখন বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব পালন করে আসছেন।
বর্তমানে ও বিরোধী দল -সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান জনাব ডাক্তার ফয়াজ উদ্দিন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সঙ্গত কারণেই ইউনিয়নে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে খবর মিলছে। ফলে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ইউনিয়নে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলেও এই ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো।
ইউনিয়নবাসীর অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে লক্ষণীয় হলো এই ইউনিয়নের রয়েছে লোভাছড়া পাথর কোয়ারী, লোভা চা-শিল্প, পানের বাগান, ও মৌসুমি ফলের ওপর নির্ভরশীল। সরকার প্রতি বছর এসব থেকে কোটি কোটি টাকা টেক্স আদায় করে। দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় হলো! এসবের বিনিময় কি পাচ্ছে এই ইউনিয়নের মানুষ? সেই হিসাব মেলাতে গেলে মাগার মাথায় কাজ করেনা। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো টেক্সট নিয়েছে সরকার, এর অর্ধেক যদি এই ইউনিয়নের জন্য ব্যয় করা হতো, তাহলে ইউনিয়ন একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু কে শুনবে? এই হতদরিদ্র ইউনিয়নবাসীর বেঁচে থাকার আর্তনাদ??
ইউনিয়নে বর্তমানে শিক্ষার হার আগের চেয়ে বেশি হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অসন্তোষজনক। রাস্তা-সড়কের রয়েছে বেহালদশা। পাকা সড়ক নেই বললেই চলে। যা আছে সেটা সিসি ঢালাই ফাঁড়ি রাস্তার কিছু অংশ বিশেষ। কাঁচা রাস্তায় ছোট যান চলাচলে চরম অসুবিধা নিত্যদিনের। বর্ষা মওসুমে জনগণের ভাগ্যে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধ না থাকায় এলাকাবাসী এর সেবা থেকে দূরে রয়েছে। স্যানিটেশন কার্যক্রম এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। একটি পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন থাকলেও সে বিষয় নেই কোন পদক্ষেপ। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নেই কোন নেটওয়ার্ক সংযোগ। সামাজিক অপরাধ দমনে নেই সক্রিয়তা। বেকারত্ব যুবকদের কাছে মাদক চোরা চালানি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
দীর্ঘ একযুগ ধরে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনটি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দখলে থাকলেও এই ইউনিয়নের প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেখাতে দেখিনি কোন সাংসদকে। যেহেতু ইউনিয়নটি বিরোধী দলের ভোটারদের দখলে। একটি ইউনিয়নের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কার্যক্রম ঘটাতে হলে অবশ্যই সেখানে স্থানীয় সাংসদ ভুমিকা নিতে হয়। শুধু চেয়ারম্যানের উপর নির্ধারিত বরাদ্দ দিয়ে কখনো একটি ইউনিয়ন মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ার কোন সাবকাশ নেই। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি অবহেলিত ও অনুন্নত ইউনিয়নের জনগণের আর্তনাদগুলো কর্ণকুহরে নিতে সক্ষম হবেন স্থানীয় সাংসদ জনাব আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার সাহেব।
মীম সালমান
১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পুর্ব ইউনিয়ন
কানাইঘাট, সিলেট।