মানিকগঞ্জে সমকামী ও হিন্দুদের ঘর-বাড়িতে হামলার অভিযোগ

সাব্বির আহমদ,মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় সমকামীতার সমর্থক এবং হিন্দু ধর্মালম্বী বিভিন্ন লোকের ঘরবাড়িতে দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগষ্ট রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৮/১০ টি বাড়িতে হামলায় মূলত নেতৃত্ব দিয়েছে উগ্রপন্থীরা।এসব হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

আক্রান্ত এলাকা সফরকালে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়,গত ৫ আগষ্ট গণ-আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পরার পর থানা থেকে সকল পুলিশ পালিয়ে গেছে।আওয়ামীলীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও চলে গেছে আত্বগোপনে।

এ অবস্থায় ৫ আগষ্ট বিকেল থেকে গতকাল পর্যন্ত পুরো সিংগাইর উপজেলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো সদস্যের উপস্থিতি ছিল না। এই সুযোগে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে দূর্বৃত্তের বেশে কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এর পাশাপাশি খুঁজে খুঁজে ইসলাম বিরোধী মতাদর্শে বিশ্বাসী একাধিক ব্যক্তির বাড়িতেও চালিয়েছে তান্ডব।

দূর্বৃত্তদের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকটি পরিবারের সাথে এ প্রতিবেদক কথা বলেছেন।

তাদের মধ্যে হামলার শিকার একজন হচ্ছেন শ্যামল দাস। তিনি হিন্দু ধর্মালম্বী।চরহাটিপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তিনি বলেন,’৬ আগষ্ট রাত ১০ টার দিকে অস্ত্রসহ মোটরসাইকেল যোগে ৬/৭ জন যুবক আমার বাসায় হানা দেয়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এবং আমার ছেলে অসীমকে সমকামিতার অভিযোগে বেদড়ক পেঠায়৷ আমি বাঁধা দিতে চাইলে তারা আমাকেও মারধর করে।একপর্যায়ে তারা আমার ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমি,আমার স্ত্রী ও সন্তানরা কান্না করলে তারা কিছুটা নিবৃত হয়। এবং অসীম সহ আমাদেরকে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করার হুমকি দিয়ে চলে যায়।’

হামলাকারীদের পরিচয় পেয়েছেন কি না-জানতে চাইলে শ্যামল দাস বলেন,’তারা সবাই মুখোশধারী হলেও তাদের পড়নে পাঞ্জাবী এবং টুপি ছিল। তাদের আচরণে মনে হয়েছে নিশ্চয়ই তারা আমাদের সমাজে থাকা কট্রর কোনো ইসলামী গ্রুপের সদস্য।’

চরহাটিপারা গ্রামে দূর্বৃত্তরা আরো যাদের বাড়ি ভাংচুর করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন হিন্দু ধর্মালম্বী সমীর ঘোষ,বিবেকানন্দ দাস ও রবি ঠাকুর। উগ্রবাদীদের হামলায় তাদের বসতবাড়িও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

হিন্দুদের পাশাপাশি ৫ আগষ্টের পর থেকে এই উপজেলার কয়েকটি মুসলিম পরিবারও হামলার শিকার হয়েছে৷ আক্রান্ত পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন চরপল্টন গ্রামের নাসির উদ্দিন,আক্তারুজ্জামান,হেলাল খান,মাসুম আহমদ ও সিরাজ উদ্দিন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,মূলত ধর্ম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এসব পরিবার উগ্রবাদীদের রোষাণলে পড়েছে৷

হামলার শিকার হেলাল খান জানান,’তিনি মুসলিম হলেও ধর্মান্ধ নন। আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে মত প্রকাশ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন৷ এ কারণে হেফাজতে ইসলাম সহ ইসলামপন্থীরা তার ওপর ক্ষোব্ধ ছিলেন৷ ৫ আগষ্টের পর বাসায় হামলা চালিয়ে সেই ক্ষোভের জানান দিয়েছে তারা।’

একইভাবে নিজ বাড়িতে হামলার অভিযোগ করেছেন চরপল্টন গ্রামের আক্তারুজ্জামান নামে একজন নিরীহ ব্যক্তি। তিনি বলেন,’৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবির সবাই একত্রিত হয়ে আমাদের গ্রামে মিছিল বের করেছিল। সে মিছিল থেকে তারা আমার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা ঘরে ঢুকে আমার ছেলে শাখিলুর রহমানকে খুঁজতে থাকে। তাদের অভিযোগ,আমার ছেলে সমকামীতার সাথে জড়িত। ‘গর্হিত’ এ অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ায় সে মুসলিম সমাজে বৈধভাবে চলা-ফেরার অধিকার হারিয়েছে।’

তিনি বলেন,’এ ঘটনাই শেষ নয়। ছেলের সন্ধান দেওয়ার জন্য এখনো আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছেলে দেশে নেই বললেও তারা বিশ্বাস করছে না। তাই,চরম আতংকে রয়েছি।’

এসব বিষয়ে জানার জন্য সিংগাইর থানার নব-নিযুক্ত কমকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,’সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হয়ত একটু সময় লাগবে।’