সংবাদ সম্মেলনে সৎ ছেলেদের বিরুদ্ধে সম্পদ দখলসহ অত্যাচারের নানা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: সিলেট নগরীতে সৎ ছেলেদের বিরুদ্ধে সম্পদ দখলসহ অত্যাচারের নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সত্তোর্ধ্ব এক নারী। গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) বিকাল ৫টায় প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সোনারপারা এলাকার মৃত আজিজুর রহমানের স্ত্রী আয়ারুন নেছা।

লিখিত বক্তব্যে আয়ারুন নেছা বলেন , ১৯৮৪ সালে আজিজুর রহমানের সাথে আমার বিবাহ বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আজিজুর রহমান ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নোবারুন এর সহ প্রতিষ্ঠাতা এবং সহ সভাপতি। ১৯৭৪ সালে আমার স্বামী আজিজুর রহমানের প্রথম স্ত্রী পাঁচ সন্তানের জননী সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।
এরপর বাবা মায়ের সম্মতিতে আমাদের বিবাহ হয়। আমার স্বামী ছিলেন খুবই ধনাঢ্য ব্যক্তি। বিবাহের সময় তিনি আমাকে কাবিন নামার সম্পত্তির অংশ হিসেবে একটি কমার্শিয়াল প্লাজা লিখিতভাবে দিয়েছিলেন। যেটি সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার অবস্থিত।

১৯৮৬ সালে আমাদের ঘরে একজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আমার স্বামীর প্রথম বিবাহের পাঁচ সন্তান ও আমার গর্ভের সন্তান নিয়ে আমাদের সংসার মোটামোটি ভালই চলছিল।
১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার স্বামী আজিজুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। আমার সৎ ছেলে মেয়েরা আমাকে উপেক্ষা করতে শুরু করে। আমার সৎ ছেলেরা ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিল এবং আমাকে আস্তে আস্তে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করতে শুরু করে। এতে করে আমার জীবন ছোট হতে শুরু করে।

২০১৫ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আমার মেয়ে জাহেদা রহমান (৩৬), এবং আমার সৎ ছেলে আকিকুর রহমান (৬৯),সাজ্জাদুর রহমান (৬৬), আবিদুর রহমান (৬১), এবং মেয়ে জাহানারা রহমান (৫৩) তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ও ব্যবসা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মুলত এখান থেকেই তাদের সাথে সত্যিকারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আয়ারুন নেছা বলেন, আমার ২য় সৎ ছেলে সাজ্জাদুর রহমান পারিবারিক এক সভায় প্রস্তাব দেয় আমার স্বামীর দেয়া “প্লাজা” যেন তাদের কাছে শহরের বাইরে কম মূল্যবান ধানের জমির বিনিময়ে দিয়ে দেই। সাজ্জাদ বলেন, একজন মহিলা হিসেবে এটা আমার কোন প্রয়োজন নেই। তারা আমাকে প্লাজার পরিবর্তে ছোট একটা ধানের জমি সরবরাহ করেছিল, যেটা আমি মেনে নেইনি। আমি তাদেরকে বলি এটা ম্যারেজ সার্টিফিকেট অনুয়ায়ী আমার সম্পদ, এটা আমার হক। এটার দালিলিক প্রমাণ রযেছে।

এরপর থেকে আমার সৎ ছেলেরা আমার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। আমার প্লাজা থেকে যে ভাড়া পাই তা ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে নিতে তারা বাঁধা প্রদান করে। এসব নিয়ে মনোমালিন্যতার কারণে তারা আমার সাথে রুঢ় আচরণ করতে থাকে। বাড়ী থেকে বের করে দেয়া এমনকি মেরে ফেলারও হুমকি প্রদান করে।

এক পর্যায়ে আমি অপারগ হয়ে আমার প্লাজা এবং আমার মেয়ের সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এতেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সৎ ছেলেরা।
আমি ক্রেতা পেলে তারা বাঁধা দেয় এমনকি প্লাজা ক্রয়ের জন্য কেউ এলে তাদেরকেও অপমান করা হয় এবং আমাকে লাঞ্চিত করা হয়।

২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একজন ক্রেতা আমার প্লাজা কেনার জন্য খুব আগ্রহ দেখান। ক্রেতাকে নিয়ে যখন আমি সম্পদ দেখাতে যাই তখন আমার সৎ পুত্র সাজ্জাদুর রহমান সেখানে পৌঁছে আমাকে থামিয়ে দেন৷ এটা আমার সম্পত্তি একথা বলার পরপরই সাজ্জাদুর রহমান আমাকে চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। এতে আমি শারিরীক ও মানসিক ভাবে প্রচন্ড আঘাত পাই।

এ ঘটনার পর আমি থানা পুলিশের দারস্থ হলেও সৎ ছেলেরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তারা কোন আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেয়।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার সৎ ছেলেদের কারণে আমার জীবন আজ বিপন্ন। আমার জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। আমার সৎ ছেলেরা খুবই প্রভাবশালী ও দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির লোক।

এ সময় তিনি একজন বিধবা নারী হিসেবে সৎ ছেলেদের এমন অমানুষিক অত্যাচার বন্ধ এবং ব্যক্তিগত সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।