ইসির সক্ষমতা যাছাইয়ে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিকল্প নেই : ডাঃ শফিকুর রহমান
চেম্বার ডেস্ক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার প্রধান ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাছাইয়ের জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি কার্যকর উদ্যোগ। এছাড়া জনপ্রতিনিধি না থাকায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাগুলোতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসক দিয়ে দায়িত্ব পালন করায় সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘব ও নিবাচন কমিশনের সক্ষমতা যাছাইয়ে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিকল্প নেই। এব্যাপারে বাস্তবতার আলোকে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রধান লক্ষ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। দুনিয়া ও আখেরাতের জবাবদিহীতার ভয় একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তুলে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের, বিশেষ করে জামায়াতের রুকনদের মধ্যে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার মানসিকতা থাকতে হবে। জান ও মালের কুরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে সকল প্রচেষ্টা সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত দিনব্যাপী রুকন শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত শিক্ষাশিবিরে মহানগরের আওতাধিন সকল রুকনগণ অংশ নেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মুহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত বলেন, ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস, ত্যাগ ও কুরবানীর ইতিহাস। আমাদের উপর সীমাহিন জুলুম-নিপীড়ন চালানো হয়েছে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে আটকে রেখে শহীদ করা হয়েছে। নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি শেষ ুপর্যন্ত দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল ছিলাম। যারা ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তারাই বিজয় লাভ করে। ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণেই আমরা বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণাকে কোনভাবেই মুছে দেয়া যাবেনা। অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে সাহস ও ত্যাগের ইতিহাস রচনা করেছে সেটাকে ভুলে গেলে চলবেনা। তাদের আত্মত্যাগকে বিসর্জন দিতে দেয়া হবেনা। অন্যথায় ভবিষ্যতে কেউ জালিমের বিরুদ্ধে বুক পেতে দাঁড়াবেনা। জুলাই গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীতে আমাদেরকে সদা স্বোচ্ছার থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মানে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জনশক্তিকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে হবে। সমাজের বিভিন্ন সংকট ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে সাংগঠনিক গণভিত্তি মজবুত করা সম্ভব। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশত আসনেই প্রার্থীর প্রাথমিক সিলেকশন দিয়েছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদের বিজয়ী করবেন। তাহলে আমরা একটি সুস্থ, সুন্দর, জনকল্যাণমূলক সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হবো।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত শিক্ষাশিবিরে বক্তব্য রাখেন মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, বায়তুল মাল সম্পাদক মুফতী আলী হায়দার প্রমূখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ইকামতে দ্বীনের কাজকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। সংগঠনের লক্ষ্যকে নিজের জীবনের লক্ষ্যে রূপান্তরিত করতে হবে। কুরআন ও হাদীসের অধ্যয়নের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে কুরআন-হাদীস অনুসরণ করতে হবে। আমাদের চরিত্র ও নৈতিক মান যতবেশী উন্নত হবে তত বেশী আমাদের প্রতি জনগণের ভরসা ও আকাঙ্খা বৃদ্ধি পাবে। ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করা আমাদের কর্তব্য আর বিজয় দানের মালিক মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশেও ইসলামী আন্দোলন একদিন বিজয়ী হবে। কারণ এইদেশে ইসলামের শিকড় অনেক গভীরে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, আল্লাহর জমিনে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হওয়া অনেকেরই সম্ভব হয়না। সেইক্ষেত্রে আমরা ভাগ্যবান। আমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেদেরকে শামিল করতে পেরেছি। সীমাহিন জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে দ্বীনের প্রতি অটল রয়েছি। ৫ আগস্টের জুলাই গণ অভ্যুত্থান ইসলামী আন্দোলনের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। জনগণের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরী হয়েছে। জনগণের এই ভালবাসাকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীগণকে বিজয়ী করার পথ প্রশ^স্ত হবে।