সিলেটে প্রবাসীর স্ত্রীকে অপহরণ, ধর্ষণের পর হত্যা: মাছের ফিশারি থেকে বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট |
সিলেটে এক প্রবাসীর স্ত্রী ইমরানা আক্তার রুমা (২৫) অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ ভোর ৫.৫০ মিনিটে সিলেট শহরের সবুজবাগ এলাকার একটি মাছের ফিশারির জলাশয় থেকে তার বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত রুমার স্বামী মো. ফখরুল হাসান তাপাদার বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার কিছু আগে রুমা তার শ্বশুর আব্দুল লতিফ তাপাদারের সঙ্গে পারিবারিক আইনজীবী এ কে এম আজাদ রহমানের সঙ্গে দেখা করে জকিগঞ্জ উপজেলার মাতার গ্রামে স্বামীর গ্রামের বাড়িতে একটি প্রাইভেট কারের মাধ্যমে ফিরছিলেন। রুমার স্বামী মো: ফখরুল হাসান তাপাদার কানাডায় যাওয়ার পর পরই তার মালিকানাধীন ১৯ শতক জায়গার উপর নির্মিত “তাপাদার ভিলা” নামক একটি মার্কেট স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে নিয়েছেন বলে পরিবার দাবি করেছে। সেই মার্কেট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে এবং তার স্বামীর প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিয়ে আইনজীবীর সহায়তা নিতে তারা তাদের আইনজীবীর চেম্বারে গিয়েছিলেন।

বাড়ি ফেরার পথে অনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগরে পৌছালে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য জায়গীরদার মসজিদের পাশে (সিলেট জকিগঞ্জ রোডে) গাড়ি থামিয়ে গাড়ি চালক ও শ্বশুর নামাজ পড়তে গেলে রুমা গাড়িতে একা ছিলেন। নামাজ শেষে ফিরে এসে গাড়ি চালক ও তার শশুর দেখতে পান যে রুমার ব্যানেটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন গাড়ির সীটে পড়ে আছে কিন্তু রুমা অনুপস্থিত। তাকে না পেয়ে শ্বশুর আব্দুল লতিফ তাপাদার সিলেটের শহরে অবস্থানরত তার ছেলে জাহরুল হাসানকে ফোন দিয়ে বিষয়টি সিলেট কোতোয়ালি থানায় জানানোর অনুরোধ করেন, এবং আব্দুল লতিফ সাহেব নিকটস্থ বিয়ানীবাজার থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১৫২৯) করার পাশাপাশি সারা সিলেট জেলায় মাইকিং ও সম্ভাব্য সকল উপায়ে খোঁজ শুরু করেন। ভোর আনুমানিক ৫.৫০ এর দিকে কোতোয়ালি থানা থেকে খবর আসে যে সিলেট শহরের সবুজবাগ এলাকার একটি ফিশারিতে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ পাওয়া গেছে। দ্রুত পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের শ্বশুর, মা আফিয়া বেগম ও দেবর জাহরুল হাসান লাশটি ইমরানা আক্তার রুমার বলে শনাক্ত করেন।

নিহতের দেবর জানান, তার ভাই মো. ফখরুল হাসান তাপাদার ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিলেটের একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। ব্যাংক থেকে একটি বড় ঋণ অনুমোদন করতে সহযোগিতা না করায় স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর রোষানলে পড়েন এবং একাধিকবার তাদের হামলার শিকার হন এবং ক্রমাগত জীবননাশের হুমকি পেতে থাকেন। প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি আত্মগোপনে যান এবং জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের সবার পরামর্শে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কানাডায় ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করেন এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কানাডা চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর থেকে পুরো পরিবার ওই প্রভাবশালীদের টার্গেটে পরিণত হয়।

প্রভাবশালীদের নাম জানতে চাইলে নিহতের দেবর অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, “প্রশাসনের সবাই জানে কারা জড়িত। আমার ভাই একাধিকবার তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। তারা বিগত সরকারের আমলেও প্রভাবশালী ছিল, এখনো আছে। তাদের ভয়ে আমার ভাবী দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। গত সোমবার (৩০ জুন) তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলে বাবার দাফন কাফনের জন্য উনার বাবার বাড়িতে আসেন, গতকাল আমার ভাইয়ের অনুরোধে আমার বাবাকে সাথে নিয়ে এডভোকেট জনাব আজাদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করে আমাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন, কিন্তু আমার ভাবীর আর বাড়ি ফেরা হলোনা, দেখেন ওই যে লাশ পড়ে আছে। আজ যদি ওদের নাম আপনাকে বলি তাহলে কাল আমার বা আমার পরিবারের অন্য কারো লাশ পড়বেনা তার গ্যারান্টি কে দিবে?”

নিহত রুমার মা আফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়েটা গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে ছিল। গত সপ্তাহে তার বাবা হৃদরোগে মারা যান—শুধু মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের চিন্তায়। বাবাকে শেষ দেখা দেখতে বাড়ি এসেই নিজে হত্যার শিকার হলো। আমি গত সপ্তাহে স্বামীকে হারালাম, আজ মেয়েকে। আমি এই নির্মম হত্যার সঠিক বিচার চাই।”

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জিয়াউল হক জানান, “প্রাথমিক আলামত অনুযায়ী মনে হচ্ছে, রুমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানা যাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর। পুলিশ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং প্রমাণ অনুযায়ী জড়িত ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”