সর্বশেষ

» প্রোডাক্টিভ রামাদান || আব্দুল হালিম

প্রকাশিত: ১৮. মার্চ. ২০২৩ | শনিবার

আব্দুল হালিম: 
রামাদান মাস হচ্ছে মুসলিম জাতির আমলি বসন্ত। প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম এই
মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। এই মাসে আমলের সওয়াব অন্য
মাসগুলোর আমলের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে এ মাসে
বেশি বেশি আমল করা, আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা।
এমাসে আমাদের কাজকর্ম, পড়াশুনা, পারিবারিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদির পাশাপাশি
অর্ধেক দিন সিয়ামরত অবস্থায় এবং বাকি অর্ধেক সময়ে রাতের ইবাদত এবং কুরআন
তিলাওয়াতও করতে হয়। এটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ।
রামাদান মাসে কীভাবে এত এত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ
থাকা যায়, সে বিষয়েই কিছু কার্যকর কর্মসূচি নিয়ে নিবন্ধে আলোচনা । রামাদানের
প্রস্তুতি, লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও রুটিন বানাতে এই কর্ম সূচি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে
ইনশাআল্লাহ।

শা‘বানের শেষ প্রহরে এসে আমরা এই দু‘আ করছি, ‘দয়াময়! আমাদেরকে সুস্থভাবে রামাযানের কল্যাণ লাভের তাওফীক্ব দাও’। প্রকৃতপক্ষে রামাযান মাস পাওয়া একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ দয়া ও নেয়ামতএকজন মুমিনের কী কর্মসূচি হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু আলোকপাত করা হলো।

(১) দিনে সিয়াম পালন করা : রামাযানের প্রথম ও প্রধান কর্মসূচি হলো সিয়াম পালন করা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মুক্বীম মুসলিম নর-নারীকে ফরয সিয়াম রাখতেই হবে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৩)। আবূ হুরায়রা বলেন, রাসূলুল্লাহ ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় রামাযানে ছিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে’।[1]

(২) রাতে ক্বিয়াম করা তথা তারাবীহ পড়া : রামাযান মাসে রাতে তারাবীহ পড়ার মাধ্যমে আমরা বহু নেকীর অধিকারী হতে পারি। আবূ হুরায়রা বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ছওয়াবের আশায় রামাযানে তারাবীহ পড়বে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে’।

(৩) দান-ছাদাক্বা করা : রামাযান মাসে বেশি বেশি দান-ছাদাক্বা করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ রামাযান মাসে বেশি বেশি দান করতেন। হাদীছে এসেছে, ইবনে আব্বাস বলেন,‘নবী করীম ধনসম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। আর রামাযানে জিব্রাইল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন’।

(৪) কুরআন পড়া : রামাযান কুরআনের মাস। আল্লাহ বলেন,-‘রামাযান মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের জন্য পথ-প্রদর্শন এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং হক্ব ও বাতিলের প্রভেদকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৪)। তাই আসুন! কুরআনের মাসে বেশি বেশি কুরআন পড়ি। ইবনে উমর বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,‘সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। ছিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব, তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’।

(৫) আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা : রামাযান ক্ষমার মাস। তাই রামাযান মাসে একজন মুমিনের অন্যতম কর্মসূচি হবে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে পাপমুক্ত হওয়া। আবূ হুরায়রা বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,ভূলুষ্ঠিত হোক তার নাক, যার নিকট রামাযান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তা পার হয়ে গেল’।

(৬) বেশি বেশি নেক আমল করা : রামাযানে বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। কেননা রামাযানে আমলের ছওয়াব অগণিত। আমরা অনেকেই বলি, রামাযানে একটি সুন্নাত একটি ফরযের সমান আর একটি ফরয ৭০টি ফরযের সমান। আসলে এটি ভুল ধারণা। এই মর্মে হাদীছটি মুনকার/বাতিল।[ প্রকৃতপক্ষে রামাযান মাসে আমলের ছওয়াব এত বেশি যে, ফেরেশতারা নয়; বরং এর প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দেন।

(৭) পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা : রামাযান মাসে আমাদের সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে পারল না, তার খাদ্য ও পানীয় ত্যাগ করাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না’।

(৮) বেশি বেশি দু‘আ করা : রামাযানে বেশি বেশি দু‘আ করা উচিত। আমাদের অনেকে শুধু ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দু‘আ করে, অন্য সময় দু‘আ করে না। আসলে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দু‘আ কবুল করা হয় এই মর্মে হাদীছটি দুর্বল।[9] তাই শুধু ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে নই, বরং ছিয়াম অবস্থায় সারা দিন দু‘আ কবুল করা হয়। আবূ হুরায়রা বলেন, রাসূলুল্লাহ a বলেন‘ তিন ব্যক্তির দু‘আ কবুল করা হয়— ১. সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির, ২. মুসাফির ব্যক্তির এবং ৩. মাযলূম ব্যক্তির’।

(৯) ইফতার করানো : রামাযানের কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম কর্মসূচি হলো অন্যজনকে ইফতার করানো। হাদীছে এসেছে, যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী বলেন, রাসূলুল্লাহ a বলেছেন, ‘কোনো ছিয়াম পালনকারীকে যে লোক ইফতার করায় সে লোকের জন্যও ছিয়াম পালনকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব রয়েছে। কিন্তু এর ফলে ছিয়াম পালনকারীর ছওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না’।[11]

(১০) শেষ দশ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা : রামাযানের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো শেষ দশ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা। আয়েশা বলেন, ‘রামাযানের শেষ দশ দিন রাসূলুল্লাহ a (ইবাদতে) এত বেশি সাধনা করতেন যে, অন্য কোনো সময়ে এরকম সাধনা করতেন না’। এর উদ্দেশ্য হলো যাতে করে ক্বদরের রাত্রিটি ছুটে না যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ বলেছেন,إِতোমাদের নিকট এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো, সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়’।[13] তাই আমাদের প্রত্যেককে শেষ দশ রাতে বেশি বেশি ইবাদতে জোর দিতে হবে, যাতে করে কোনোভাবেই ক্বদরের রাতটি ছুটে না যায়।’পরিশেষে বলবোআল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে রামাযান মাসের মর্যাদা রক্ষা করে তার যথাযথ হক্ব আদায় করার তাওফীক্ দান করুন- আমীন!

[hupso]

সর্বশেষ