সর্বশেষ

» পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করায় অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে অপরাজেয় বাংলার সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ১১. জুন. ২০২২ | শনিবার

চেম্বার ডেস্ক:: 

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য নতুন ওষুধ ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবন এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত লিভার রোগ বিষয়ে মৌলিক গবেষনার জন্য মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মালয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করায় ‘অপরাজেয় বাংলা’ ১০ জুন শুক্রবার রাজধানীর বনানী ক্লাবে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা প্রদান করে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ দ্বীন মোহাম্মদ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও এশিয়ান এজ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবদুল মাবুদ পিপিএম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক জনাব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক নঈম নিজাম, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ জনাব ফাইয়াজুল হক রাজু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, রাজনীতিবিদ রাশেক রহমানসহ বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ এবং ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বগন।

অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তাগন অধ্যাপক স্বপ্নীলের এই অর্জনের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান এবং তার উত্তোরত্তর সম্মৃদ্ধি কামনা করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন অধ্যাপক স্বপ্নীল চিকিৎসক সমাজে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি আরও বলেন চিকিৎসক হিসাবে অধ্যাপক স্বপ্নীল যেমন সুনামের সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে চলেছেন, পাশাপশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তার এই অর্জনকে তিনি বাংলাদেশের অর্জন বলে অভিহিত করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অধ্যাপক স্বপ্নীলকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং তার সকল গবেষণা কার্যক্রমের সফলতা কামনা করেন।

অধ্যাপক স্বপ্নীল হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ১, ২ ও ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রধান গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন। তার গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ওষুধটি এরই মধ্যে কিউবাসহ একাধিক দেশে রেজিষ্ট্রেশন পেয়েছে এবং বাংলাদেশেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধটির রেসিপি অনুমোদন করেছে।

উল্লেখ্য অধ্যাপক স্বপ্নীল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এম.বি.বি.এস, ১৯৯৮ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে এম.এস.সি. এবং ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোলজিতে এম.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব আয়ারল্যান্ড এবং রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব লন্ডনের ফেলো।

অধ্যাপক স্বপ্নীল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সদ্য-সাবেক চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও মেটাবোলজি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক এবং ভারতের অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেসের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিন-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের ভাইরাল হেপাটাইটিস, এইচআইভি-এইডস, এসটিআই সংক্রান্ত স্ট্র্যাটেজিক এন্ড টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপেরও অন্যতম সদস্য।

বিভিন্ন দেশী-বিদেশী বৈজ্ঞানিক জার্নালে অধ্যাপক স্বপ্নীলের ৩০০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লিভার বিষয়ক ৫টি টেক্সট বই সম্পাদনা করেছেন যার প্রতিটি বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক মেডিকেল প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে ‘লিভার: এ কমপ্লিট বুক অব হেপাটো-প্যানক্রিয়াটো-বিলিয়ারী ডিজিজেজঃ প্রকাশক: এলসেভিয়ের, প্রকাশকালঃ ২০০৯), ‘ক¤িপ্রহেনসিভ টেক্সট বুক অব হেপাটাইটিস বি’, ‘টেক্সট বুক অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ ও ‘হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি প্রেসক্রাইবার’ (প্রকাশকঃ জেপি ব্রাদার্স, প্রকাশকাল যথাক্রমে : ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৬) এবং ‘ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ (প্রকাশকঃ ম্যাকমিলান পাবলিশার্স, প্রকাশকাল : ২০১২)।

অধ্যাপক স্বপ্নীল ২০১৩ সালে আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন’ অর্জন করেন আর ২০১৪ সালে ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশন কর্তৃক ‘অর্ডার অব মেরিট’-এ ভুষিত হন। ভারতের কলিঙ্গ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল ফাউন্ডেশন তাকে ২০১৫ সালে সম্মানসূচক ‘বøুুমবার্গ ওরেশন’ প্রদান করে। ২০১৭ সালের ‘হুজ হু’-তে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি ২০১৮-তে মার্কুইস হুজ হু কর্তৃক ‘এলবার্ট নেলসন মার্কুইস লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড’ এ ভুষিত হন।

অধ্যাপক স্বপ্নীলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন দু’টি হচ্ছে কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবনের জন্য ২০১৯-সালে যৌথভাবে ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’ পদক এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস কর্তৃক ‘বাস গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড ২০২১’ লাভ।

কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় অধ্যাপক স্বপ্নীল ওয়ালটন গ্রুপ কর্তৃক ‘হেলথকেয়ার হিরোজ এওয়াার্ড ২০২০’, বাংলাদেশ-আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক ‘গ্লোবাল বিজনেস সিএসআর এওয়ার্ড ২০২১’, ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস কর্তৃক ‘গ্লোবাল হেলথকেয়ার লিডারশিপ এওয়ার্ড ২০২১’, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক ‘কোভিড-১৯ হিরো’ এবং নারীকন্ঠ ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘কোভিড হিরো’ এওয়ার্ডে ভূষিত হন।

বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠন এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের তিনি পরপর সাতবার নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি এলুমনাই এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ফোরাম ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

পাশাপাশি তিনি ইউরোএশিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের সাধারণ সম্পাদক, এশিয়ান প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অব দ্যা লিভারের কার্যকরী সদস্য এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর স্টাডি অব দ্যা লিভারের ইন্টারন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর। অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশ স্টেম সেল এন্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ইন্টার-একাডেমি পার্টনারশিপের রিজেনারেটিভ মেডিসিন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং পাট্রির সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ১২ জন সদস্যের অন্যতম।

অধ্যাপক স্বপ্নীল বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি ট্রান্স-আর্টারিয়াল কেমো-এম্বোলাইজেশন (টেইস)-এর পুরোধা। পাশাপাশি তিনি লিভার ফেইলিওরে অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, প্লাজমা এক্সচেঞ্জ ও লিভার ডায়ালাইসিসেরও পথিকৃত।

অধ্যাপক স্বপ্নীল ১৯৭০ সালে সিলেট শহরের কালিঘাটে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন।

[hupso]

সর্বশেষ