সর্বশেষ

» জাতির পিতা ও জাতীয় কবির জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রূপ: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৫. মে. ২০২২ | বুধবার

চেম্বার ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জ্বল। মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি নজরুল। স্বল্পকালীন সৃষ্টিশীল জীবনে তিনি রচনা করেছেন, প্রেম-প্রকৃতি-বিদ্রোহ ও মানবতার অনবদ্য সব কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক।

সরকারপ্রধান বলেন, কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল তার লেখনির মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (১১ জ্যৈষ্ঠ/২৫ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী ও তাঁর অসামান্য বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ উপলক্ষে তিনি তাঁর অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল জন্মেছিলেন এবং বেড়ে উঠেছিলেন একটি পরাধীন সমাজে। পরাধীনতার গ্লানি তিনি উপলব্ধি করেছেন মর্মে মর্মে। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। এ ছাড়াও তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমাদের যুগিয়েছেন প্রতিবাদ প্রতিরোধের অনাবিল প্রেরণা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রূপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনিও দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এবং দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন। মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তাঁর অবিনাশী রচনাবলী জাতির জন্য অন্থহীন প্রেরণার উৎস।

সরকারপ্রধান বলেন, কবি নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত- শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির দীক্ষাস্বরূপ। তাঁর ক্ষুরধার লেখনির স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনি প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক। কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তাঁর গান ও কবিতা সবসময় যে কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন কবির প্রতি একান্ত অনুরক্ত- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহে কবিকে কলকাতা হতে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির সম্মানে অধিষ্ঠিত করা হয়। নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন নজরুলের রচনা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে সকল কূপমুণ্ডকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখি-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম’র ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

[hupso]

সর্বশেষ