সর্বশেষ

» সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় মসজিদের ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ০৯. মার্চ. ২০২২ | বুধবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকায় স্থানীয় একটি মসজিদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসাব চাওয়ায় মসজিদ কমিটির লোকজনের উপর হামলা, প্রাণনাশের হুমকী ও ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে মসজিদের টাকা আত্মসাৎকারী একাউন্ট হোল্ডার সফিক মিয়া ও মনফর আলী সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উক্ত মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১০নং কামালবাজার ইউনিয়নের ক্রোরীগ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। মসজিদের টাকা আত্মসাত ও প্রাণনাশের হুমকীর অভিযোগে ঐ গ্রামের বাসিন্দা মৃত মুক্তার আলীর ছেলে মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে গত ৬ অক্টোবার-২০২১ইং তারিখে সিলেটের মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। দক্ষিণ সুরমা থানার সি আর মামলা নং- ১৮২/২০২১ইং। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিকে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। থানার ওসি ঘটনার সত্যতা পেয়ে এ বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ওসির নির্দেশনায় পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সুমান কুমার চৌধুরী মামলটির তদন্তের দায়িত্ব দেন। তিনি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্তকালে আসামীগণের বিরুদ্ধে ঘটনা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট স্বাক্ষ্য প্রমাণ, স্থানীয়দের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এবং ব্যাংক একাউন্টের হিসেব অনুযায়ী মসজিদ ফান্ডের ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫০০/- টাকা আত্মসাতের সত্যতা খুঁজে পান। একই সাথে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং মসজিদ কমিটির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা, আঘাত-আক্রমণের চেষ্টা সহ তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকিরও প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। আসামীগণের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৪০৭/ ৪২০/ ৫০৬(২)/ ৩৪ ধারায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সুমান কুমার চৌধুরী ৬ ফর্দের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী শুনানী শেষে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩ মার্চ আসামীগণকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য প্রত্যেকের নামে সমন ইস্যু করেন। মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার ক্রোরীগ্রামের মৃত আপ্তাব মিয়ার ছেলে সফিক মিয়া (৪০), মৃত রাশিদ আলীর ছেলে মনফর আলী ছাড়ু (৫৫), মৃত ময়না মিয়ার ছেলে বশির মিয়া উরফে লাল বশির (৫০), মনফর আলী ছাড়ু’র ছেলে ছাদেক মিয়া (৩৬), সাজিদ মিয়ার ছেলে আলা উদ্দিন (৩৫)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কামালবাজার এলাকায় ক্রোরীগ্রাম জামে মসজিদের নামে ১৭ বছর আগে সোনালী ব্যাংক কামালবাজার শাখায় এ/সি-৫৬১৮৪৩৩০০০৬২১ নাম্বারে একটি কারেন্ট একাউন্ট খোলা হয়। যৌথভাবে এই একাউন্টের হোল্ডার ছিলেন সফিক মিয়া, মনফর আলী ও মদরিছ আলী। তারা ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডার থাকা অবস্থায় মসজিদ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ৫ বছর আগে একাউন্ট হোল্ডার মদরিছ আলী মারা যান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কার কাজের প্রয়োজন দেখা দিলে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন একাউন্ট হোল্ডার সফিক মিয়া ও মনফর আলীর নিকট মসজিদের আয়-ব্যয় সহ একাউন্টে জমাকৃত টাকার হিসেব চাইলে তারা হিসেব না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন।

একাউন্ট হোল্ডার সফিক মিয়া ও মনফর আলী মসজিদ ফান্ডের ব্যাংকে জমাকৃত টাকার হিসেব দিতে গড়িমসি করায় পঞ্চায়েতের লোকজনের মনে সন্দেহ হয়। এতে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন মসজিদটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির রক্ষণা-বেক্ষণ ও মসজিদের আয় বাড়ানো সহ সোনালী ব্যাংক কামালবাজার শাখায় মসজিদ ফান্ডের জমাকৃত টাকার নিরাপত্তার লক্ষ্যে মসজিদের নতুন কমিটি গঠন করেন। এরপর মসজিদের নতুন কমিটি ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার ফারুক আহমদের কাছে মসজিদের নামে ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট চাইলে তিনি রহস্যজনক কারণে প্রথমে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। অবশেষে স্থানীয় মুরব্বীদের অনুরোধে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেন।
স্টেটমেন্টের হিসেব অনুযায়ী মসজিদের কোনরুপ উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ ছাড়াই একাউন্ট হোল্ডার সফিক মিয়া ও মনফর আলী তাদের সহযোগী অন্যান্য আসামীগণের সহযোগিতায় মসজিদ ফান্ডের টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে এবং ব্যক্তিগত কাজে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ফান্ডের জমাকৃত উত্তোলন করেন। দীর্ঘ ১৭ বছরে মসজিদের আয়ের ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোঃ মুহিবুর রহমান (৫নং বার হল, সিলেট জজকোট) জানান, মসজিদের টাকা আত্মাসাৎ, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত, কমিটির লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা ও প্রাণনাশের হুমকীর অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীগণের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। শুনানী শেষে আসামীগণের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। কিন্তু আসামীগণ নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত হয় নি। আদালত পরবর্তী ৪ এপ্রিল ফের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

[hupso]

সর্বশেষ