সর্বশেষ

» স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রক্তাক্ত বাংলাদেশ,দুষ্টু রাজনীতির বলি সাধারণ জনতা

প্রকাশিত: ০২. এপ্রিল. ২০২১ | শুক্রবার

গোলজার আহমদ হেলাল:২০২১ সালের ২৬শে মার্চ। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার গৌরবের ৫০বছর পূর্তির দিন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন। স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন ছিল। রাজনৈতিক ,সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে এবং সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। পুরো দেশ ছিল উৎসবমুখর ও উৎসবের আমেজের মধ্যেই ছিল গোটা জাতি। যদিও সরকারী অনুষ্ঠানমালায় সাধারণ জনগনের খুব একটা সম্পৃক্ততা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য সত্য যে, এ দিবসটি ছিল আমাদের আবেগের, আমাদের আনন্দের, আমাদের প্রেরণার ও আমাদের ভালবাসার। আমরা যারা সুবর্ণজয়ন্তী পেয়েছি, আমরা সত্যিই আনন্দিত, গর্বিত ও উদ্বেলিত।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয়ভাবে দশদিনব্যপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল। বাংলাদেশের এরকম এক গৌরবময় দিনের অনুষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সরকার। মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠান মালার দশম দিন ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল ২৬মার্চ। স্বাধীনতার ৫০বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা সম্বলিত প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সাজানো হয়েছিল এ দিনের কর্মসূচি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় জনমনে। এদেশের বাম, ডান, উত্তর ও দক্ষিণ পন্থী এবং ইসলামী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে মোদীকে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ না করানোর জন্য। এ নিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন,প্রগতিশীল ছাত্র জোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ সহ বেশ কয়েকটি দল মিছিল মিটিংও করেছে। বাকী দলগুলো বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ ছিল।

ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারতের শক্তিশালী অর্থনীতি ভিত রয়েছে। বাণিজ্যিক ভাবে আমরা বহুলাংশেই তাদের উপর নির্ভরশীল। আমাদের উপরও তারা নির্ভরশীল। একথা ভূলে গেলে চলবে না, ভারতের শুধুমাত্র পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হলে ৩০টাকার কেজি ২৫০টাকায় উঠে। এরকম আরো কত কিছু।সর্বোপরি প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রকে সুবর্ণজয়ন্তীতে আমন্ত্রণ করাটাই যুক্তিযুক্ত। তার উপর ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দেশকে অনেক সহযোগীতা করেছে।অস্বীকারের জো নেই।

আমাদের সরকার সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অতিথি বক্তা হিসেবে রাখে। মোদী যথারীতি বা়ংলাদেশে আগমন করেন। রাষ্ট্র যথাযথভাবে নিরাপত্তা প্রদান করে। এমন কি ২৭মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক সভা, মিছিল, মিটিং সীমিত করে নির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশের মুল ধারার সকল রাজনৈতিক দলগুলো পূর্বে মোদী সফরের প্রতিবাদ জানালেও ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন কোন কর্মসূচি বা বিবৃতিও প্রকাশ করে নি। রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সরকারের কার্যক্রম কে সম্মান জানায়। সহনশীল রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।তাদের এ সংযত আচরণে তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

অপরদিকে ২৬শে মার্চ কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা হঠাৎ করে জুমার নামাজের পর ঢাকায় জেগে উঠে এবং মোদী বিরোধী বিক্ষোভ ও মিছিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যা ছিল স্বাধীনতা দিবসে অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।ঐদিন অন্যান্য দলের মতো হেফাজতের কোন কর্মসূচীনা থাকলেও তারা (হেফাজত) নতুন কর্মসুচী ঘোষণা করলো।গরম মাঠ কাঁপানো কর্মসূচী।সৃষ্টি হয় সহিংসতা। হেফাজতের এ সহিংসতায় পুলিশ নড়েচড়ে বসে। বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের কর্মসূচি পালনকালে এ পর্যন্ত ১৯জন মানুষ প্রাণ হারায়। হেফাজতের এ কর্মসূচি বা তান্ডবলীলা সৃষ্টির কোন প্রসব বেদনা নয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে হেফাজতের এরকম লীলাখেলায় মেতে উঠা কারো প্রত্যাশিত ছিল না। মানুষ কথা বলবে, মিছিল, মিটিং করবে। এটা তার নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এটি রাজনৈতিক অধিকার। এ অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বাক স্বাধীনতাকে হরণ কেউ করতে পারে না। তাই বলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কলংকিত করা কিংবা বিতর্কিত করা কাম্য নয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় নরেন্দ্র মোদী এক সাম্প্রদায়িক প্রতীকের দন্ডমূর্তি। নরেন্দ্র মোদী একজন ভিলেন। কিন্তু তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বিরোধী বিক্ষোভ করতে গিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান মালা বা দিবসকে বিতর্কিত করা শুভ কাজ হতে পারে না। আপনার মুখের অধিকারের ক্ষমতাকে সুবর্ণজয়ন্তীকে কলংকিত করার কাজে ব্যবহার কেউ আসলেই চায়নি।এই বিক্ষোভ অন্য সময় করতে পারতেন। সে সুযোগ ও সময় ছিল বটে। সস্তা আবেগি রাজনীতি না করে দেশের স্বার্থে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মসূচি গ্রহণই ছিল শ্রেয়। তাই বলে মানুষ হত্যা কে জায়েজ করা যায় না। বিক্ষোভ দমন করতে পাখির মত গুলি করে মানুষ হত্যা করবেন, এ রাজনীতি যেমন সুখকর নয়, তেমনি সমর্থনযোগ্যও নয়। আন্দোলন, বিক্ষোভ, মিছিল, মিটিং দমন করার প্রকৃতপক্ষে আর কোন উপায় কি ছিল না? সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

মোদীবিরোধী বিক্ষোভ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো হেফাজতের আন্দোলন কে তান্ডবলীলা, উগ্রতা, সহিংসতা ও জঙ্গী কর্মসূচি বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি আসলেই জটিল। সময়ে সময়ে জটিল সমীকরণের আবির্ভাব হয়। বরাবরই দুষ্ট রাজনীতির কবলে পিষ্ট হয় সাধারণ জনগণ। রাজনীতি না বুঝেই মিছিলের জনতা হয় সাধারণ মানুষ ও নিরীহ ছাত্ররা। এ কেমন রাজনীতি? এ থেকে বেরিয়ে আসা সময়ের অপরিহার্য দাবী। বিকলাঙ্গ,উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও আবেগপূর্ণ ক্ষীণকায় রাজনীতি অস্পৃশ্য ও অকল্যাণকর।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বুলেট ও বেয়নটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হল দেশ। রক্তাক্ত হলো প্রিয় বাংলাদেশ। দুষ্টু রাজনীতির বলি হল উনিশটি তরতাজা প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হলো রাষ্ট্রীয় অনেক সম্পদ ও স্থাপনা। এর দায় কার?অতি উৎসাহী হয়ে কারা নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের উস্কিয়ে দিল, কারা স্বাধীনতা দিবসে উগ্র কর্মসূচি হাতে নিল, অতি উৎসাহী হয়ে কারা নিরীহ ছাত্রদের নির্বিচারে গুলি চালালো? এগুলোর জবাব চায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে হাহাকার চলছে।গরীব, ধনী ও মধ্যবিত্ত সকলের ঘরে।চালের কেজি আকাশ চুম্বী।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অসহনীয় মাত্রায়।সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীজীবিদের মধ্যে বেতনের তীব্র বৈষম্য।পূঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে পিষ্ট জনতা।এর মধ্যে করোনার মরণ ছোবল।পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর এ নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথা নেই।আজ যদি সুবর্ণজয়ন্তীর এ সময়ে প্রশ্ন উঠতো স্বাধীনতার ৫০ বছরের এ দিনে মানুষ ভিক্ষা করছে কেন?এখনো সিংহভাগ লোক দারিদ্রসীমার নীচে কেন?চালের কেজি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে কেন?জনগণের পয়সায় পালিত সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে জনগণ নেই কেন?শুধু শাসকদলই কি উৎসব করবে?তা না করে কতিপয় রাজনৈতিক দল বাঁকা পথের কর্মসুচী দিল এবং লীলাখেলায় মারা গেল সাধারণ জনগণ।এরকম সস্তা এবং ক্ষমতা দখলের রাজনীতি আর কতদিন?মানুষ এ থেকে মুক্তি চায়।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জনকল্যাণমুলক গণমানুষের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হোক সকলের।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই শাসকদল ও প্রধান বিরোধীদল সবসময় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে থাকে।এটা এদেশের রাজনীতির দীর্ঘদিনের গড়ে উঠা কালচার।এ সময়েও আমরা তাই দেখছি।ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও ক্ষমতার বাইরে বড় দল বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মুখে রাজনৈতিক বক্তব্যের সুর স্রেফ স্ট্যান্টবাজির মতো।আমরা সেদিকে না গিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল সমুহের দিকে আলোকপাত করছি।

স্বতন্ত্র জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাধীনতা দিবসে ছাত্রহত্যা: এমন সূবর্ণজয়ন্তী চায়নি বাংলাদেশ।তারা বলে, বাংলাদেশের সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয় গুজরাটের দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। যার বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরেই সারাদেশে প্রতিবাদ চলছিল। এসময় সরকার এসব প্রতিবাদকে নোংরা হাতে দমন করবার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা দিবসে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে মিছিল বের হলে তাতে হামলা করা হয়। এই হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসায় মিছিল বের হলে সেখানে নৃশংস হামলা চালানো হয়। গুলিতে অন্তত তিনজন ছাত্র ও একজন দর্জি নিহত হন। প্রতিবাদে অংশ নিতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও একজন নিহত হন। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বহু প্রতিবাদকারী আহত হন। যাত্রাবাড়ি মাদানিয়া মাদ্রাসায় হামলা ও গুলি চালানো হয়।এসব ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত, লজ্জিত এবং শোকাহত। সরকার বরাবরের মত জনগণের পক্ষ না নিয়ে ভারত সরকারের তোষণে মনযোগ দিয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। স্বাধীনতা দিবসে নাগরিক হত্যা এই দেশের ছাত্রসমাজ ও জনগণ মেনে নেবে না। আমরা নিহত ও আহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয় ভিভিআইপিদের নিয়ে। যাতে সাধারণ মানুষের উৎসব পালনের তেমন কোন সুযোগ রাখা হয়নি। ভিভিআইপিদের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর ওপর রাষ্ট্রীয় অতিথি কে হবেন তা নিয়ে জনগণ মত প্রকাশ করতে চাইলে ব্যাপক দমন চালনা করা হয়। যা স্পষ্ট বার্তা দেয়, বাংলাদেশের সরকার এই দেশের জনগণের চেয়ে ভারত সরকারকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুরোপুরি দমন করবার জন্য সবসময় প্রস্তুত। তারা এর নিন্দা জানান।
স্বতন্ত্র জোট সরকারের এসব অপচেষ্টাকে রুখে দিতে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসবার আহ্বান জানায়। প্রতিবাদে আহত সকলের চিকিৎসার ব্যায়ভার সরকারকে নিতে হবে। নিহত ছাত্র ও পেশাজীবির পরিবারকে সরকারের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদেরকে শাস্তি দিতে হবে।

বামপন্থী প্রগতিশীল সংগঠক মাহিন আহমদ লিখেছেন,হেফাজতের রাজনীতি আমার রাজনীতির জন্য হুমকি। হেফাজতের রাজনীতি স্বৈরাচারের ঢাল। হেফাজতের রাজনীতি ওপার বাংলায় মোদীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। অস্বীকার করার কিছুই নাই। কিন্তু হেফাজতের এই রাজনীতি হেফাজতের মাঠপর্যায়ের নাবালেগ শিশুর রাজনীতি না। ও স্রেফ এই রাজনীতির সরাসরি ভিক্টিম। ও স্বৈরাচারের ক্ষমতা টিকানোর কৌশলী রাজনীতির হাতে প্রাণ দেওয়া শহিদ।
আপনার মনে রাখতে হবে, এই খেলার রাঘববোয়াল কারা। তারা বসেই ঠিক করে দেশে ঠিক কতটুক হেফাজতি বাতাস ছড়াইলে মোদী সাহেবের এজেন্ডা ওইপারে ঠিকঠাক সার্ভ হবে আর এই বাতাসের উপর ঠিক কতটুক চড়াও হইলে মোদীকে পর্যাপ্ত চাটা হবে। এইসবের উপর নির্ভর করে মোদী তারে কতদিন এই বাংলার মসনদে বসায় রাখবে। আপনার জন্য এইটাও মনে রাখা জরুরী, এইপারের সাম্প্রদায়িক হুঙ্কার ওইপারে পদ্মফুল হয়ে ভোটব্যাংকে ভোট বাড়ায়।
হেফাজতি নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রকাঠামোর বাইরের কেউ না। অয় অর পুরা ক্ষমতা ব্যবহার করবে ক্ষমতাকাঠামোর জন্য। আর এই খেলার বলি হবে ওর মাঠপর্যায়ের কর্মীরা। প্রাণ যাবে নাবালেগ মাদ্রাসা ছাত্রের। মনে রাখা জরুরি, মাদ্রাসার এই ছাত্রগুলা প্রত্যেকে মজলুম, নিপীড়িত। ও যে কাঠামোর মধ্যে আছে সেই কাঠামো দ্বারা ব্যবহৃত এবং একইসাথে এই রাষ্ট্র দ্বারা নিপীড়িত।
আপনারা যারা সাম্প্রদায়িকতার জুজু দেখায় রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন জায়েজ করতে চান, তারা হয় মূর্খ নয় অন্ধ নাহয় ধুরন্ধর। সাম্প্রদায়িকতার জুজু দেখায় শিশুহত্যা, ছাত্রহত্যা, মানুষহত্যা জায়েজ করতে পারেন না। আর যখন এই পুরা বিষয়টাই রাষ্ট্রদ্বারা পরিকল্পিত এবং নিয়ন্ত্রিত তখন এই চিন্তা আসাও রাষ্ট্র তোষণ ছাড়া আর কিছুই না।
লড়াই করার সময় সাবধানতা অবলম্বন জরুরী৷ আপনি ম্যালা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বুলে আওড়ায়ে যদি শেষমেশ আসল ক্রিমিনালরে ছাইড়ে দিয়ে নির্দোষ একটা শিশুর হত্যা জায়েজ করতে আসেন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইয়েও আপনারে সাথে নিবো না।
আজকে আপনি স্বৈরাচারের পালে হাওয়া দিচ্ছেন কালকে প্রয়োজন পড়লে গদি রক্ষায় আপনাকেও বলিদান করতে কুন্ঠাবোধ করবেনা। মিত্র হোক, শত্রু হোক – গুলী করার রাজনীতি সমর্থন কইরেন না। হত্যার রাজনীতি সমর্থন কইরেন না। মানুষ মারার রাজনীতিরে জায়েজ কইরেন না। আজকের স্বৈরাচার এই রাজনীতি ছাড়া কিছু বোঝেনা। একটা নাবালেগ শিশুর জীবনও এই রাজনীতির অংশ। মাথায় রাইখেন।

২০ নাগরিকের বিবৃতিতে মিলিট্যান্ট বা লেফট স্যেকুলারেরাও মাদ্রাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে বর্বর রাষ্ট্রশক্তির শক্তির বলপ্রয়োগের ঘটনাতে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ করেছে । তারা কী বলেছে দেখুন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসার প্রতিবাদ করার অধিকার বাংলাদেশের নাগরিকদের রয়েছে। … হাটহাজারীতে এমন একটি ঘটনায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন মাদ্রাসাছাত্রের নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ….‘আমরা মনে করি, এসব হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার উৎসবকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে।”
এই প্রথম মাদ্রাসা ছাত্রদের নাগরিক অধিকারের পক্ষে বাংলাদেশের স্যেকুলারেরা দাড়িয়েছে। আমরা অনেকেই ক্ষীণস্বরে এই কথাগুলোই বলে আসছিলাম বিগত কয়েক বছর ধরে যে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে, কথা বলতে দিতে চাওয়ার প্রশ্নে আপনাকে অবশ্যই স্পেইস দিতে হবে, আপনি তার রাজনৈতিক মতকে পছন্দ করেন বা না করেন। এটাই রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় । আর এর মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যত!বিশ নাগরিকের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ।

আনন্দবাজারের শিরোনামের মতো সিপিবি একে “হেফাজতের তাণ্ডব” তত্ত্ব বলেছে। তারা বলেছে, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতার নামে হেফাজতে ইসলাম অশুভ উদ্দেশ্যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে নেমেছে”। আর আনন্দবাজার সিপিবিকে বলেছিল “পাক-পন্থীদের তাণ্ডব” বলে। হেফাজত যা করেছে তা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান। আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, জানি কীভাবে যুদ্ধ করতে হয়। সারপ্রাইজ এলিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে তারা (হেফাজত) আরো বড় হামলার ষড়যন্ত্র করছিল। তারা ভেবেছিল, রুশ বিপ্লবের মতো অভ্যুত্থান করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে নেবে।”বিপ্লবের সময়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয় সেটার সাফাই হিসেবে সিপিবি’র একটা শ্লোগান আছে, বিপ্লব ধ্বংসের তাণ্ডব লীলা নয় সৃষ্টির প্রসব বেদনা মাত্র”।হেফাজতের এটি সৃষ্টির প্রসব বেদনা নয় ,ধ্বংস ও ধ্বংস।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে ঢাকায় গুজরাটের কসাই খ্যাত নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে লাগাতার দমন-পীড়নের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। স্বাধীনতা দিবসের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মোদীবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।তারা হাটহাজারি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহতের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও দাবি করেছে।
বিবৃতিতে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় মোদীবিরোধী বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনীর হামলারও তীব্র নিন্দা জানান ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। এসময় পেশাগত দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের উপরও হামলা করা হয়।এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাতেও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় ছাত্র ইউনিয়ন। নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের উপর যারাই হামলা করুক তাদেরকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছিল। গণতান্ত্রিক এই কর্মসূচিগুলোতে গত কয়েকদিনে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে। বামপন্থীদের প্রতিবাদ ছাড়াও একই ইস্যুতে হেফাজত ও অন্য কিছু সংগঠনকে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ভাষা ব্যবহার করে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ গরম রাখলেও ক্ষমতার প্রশ্নে সরকারের সাথে হেফাজতের কোনও বিরোধ নেই বরং অলিখিত সমঝোতা রয়েছে। মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ হেফাজতের কোনও কর্মসূচি না থাকলেও হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে স্বত:স্ফূর্তভাবে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় হেফাজত নেতারা হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। হেফাজত নেতারা সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্রদের আবেগকে পুঁজি করে মোদীবিরোধীতার নামে যেন কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ঘটনা ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে ছাত্রদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ আশংকা করেন বাংলাদেশে সংঘটিত যেকোন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার সেদেশে মুসলিমবিদ্বেষ উস্কে দিতে পারে। যা দুই দেশের সাধারণ মানুষের জন্যই অমঙ্গল। এ ব্যাপারে দেশের প্রগতিকামী সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
সরকার স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বসাধারণকে শ্রদ্ধা জানানো থেকে বঞ্চিত করেছে এবং রাজধানী শহরে যান চলাচল সীমিত করে উৎসবের বদলে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে করে ছাত্র ইউনিয়ন। এদিকে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশের মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ‘পাকিপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করারও নিন্দা জানান নেতৃবৃন্দ।

খুবই সংগত কারনে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এবারের মোদী সফর নিয়ে কৌশলগত সংযত সাবধানী অবস্থানে ছিলো। তারপরও দিনশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিণত সংযমি সাবধানী দায়িত্বশীল অবস্থানের মধ্যেও থেকে কুলোয় নি।
ডাকসুর ভিপি নূর এবং তার ছাত্র অধিকার পরিষদ সেই কাজটি খুবই দক্ষতা এবং কৌশলের সাথে করতে পেরেছে।বাংলাদেশের রাজনীতি কোথাও না কোথাও সমস্যার আবর্তে বন্দী।আর তা হলো পরমত সহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক চেতনা,জনগণের চিন্তার সাথে সমন্বয়,অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সামাজিক ন্যায়বিচারবোধের চরম অভাব এবং পরশ্রীকাতরতা ও ফ্যাসীবাদের লালনের সংস্কৃতিকে প্রমোট করা।এর জন্য বার বার হোঁচট খায় বাংলাদেশ।দলিথ মথিত হয়ে নিহত ও আহত হন সাধারণ জনতা।আন্দোলন সৃষ্টিকারী খলনায়কেরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে বরাবরের মতো।

লেখক:নির্বাহী সম্পাদক-দৈনিক আলোকিত সিলেট
সম্পাদক-সিলেটের খবর২৪.কম

[hupso]

সর্বশেষ