সর্বশেষ

» সর্বসাধারন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের স্বার্থে ধর্ষকদের জন্য আইনজীবী নিয়োগ হওয়া জরুরী

প্রকাশিত: ০১. অক্টোবর. ২০২০ | বৃহস্পতিবার

খায়রুল আলম বকুল::

আমি ধর্ষণকে সমর্থন দিচ্ছি না। ধর্ষকদের মামলা হইতে অব্যাহতি বা খালাসের জন্য আইনজীবী নিয়োগের কথা বলছি না। রাস্ট্রে প্রায় সবারই আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে কোন না কোন সময়। অতীত,বর্তমান বিশ্লেষন করলে সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে অনেক মামলা বিচারাধীন ছিল এবং আছে। আপনি বা আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক খুন/ধর্ষনের মিথ্যা মামলা দেয়া হল। পরের দিন পত্রিকায় ফলাও হয়ে নিউজ আসলো ধর্ষণ বা খুনের অভিযোগে আপনি গ্রেফতার । তখন হাজারো মানুষ আপনার ফাসি/ ক্রসফায়ার চাইবে। আর এভাবেই ক্রসফায়ারকে বাহবা দিয়ে আপনি,আমি কত নির্দোষ ব্যক্তিকে মরতে দেখেছি। এখন আপনার ন্যায়বিচার পাওয়ার উপায় কি?

 

ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা ছাড়া ধর্ষণ বা খুনের অপরাধে গ্রেফতার হলে আমরা মনে করি সেই ধর্ষক বা খুনি। অথচ আইনের দৃষ্টিতে এর মানে হল, এই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগনের নাম একটি অভিযোগ করা হয়েছে এবং সে অভিযোগের সত্যতা বা প্রমান করতে তদন্ত, সাক্ষী, জেরা, যুক্তিতর্কসহ অনেক কিছু বিবেচনা করে মাননীয় আদালত রায় প্রকাশ করবেন।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়- এসব আইনি বিষয়গুলো অযৌক্তিকভাবে আমরা যে যার মত ব্যাখা করতেছি, মতামত দিতেছি তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতেছি যা আপনার, আমার, সমাজের ভবিষ্যতের জন্য কাল হয়ে দাড়াবে। আজকে আমি একটা মার্ডার মামলার সাক্ষীকে জেরার পর জনৈক বিজ্ঞ বিচারক মন্তব্য করলেন- সমাজের মানুষের দারা অপরাধগুলো আরো বেশি প্রশমিত হচ্ছে কারন যখন নিজের উপরে এসে পড়ে যায় তখন আমরা চুপসে যাই। আপোষ অযোগ্য ধারার মামলা অপরাধীদেরকে বাচাতে কত-শত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তথ্য হাইড করে আপোষ করে ফেলি। পরবর্তীতে প্রশাসন, এডভোকেট ও বিচার বিভাগকে দোষারোপ করি। এখন আসি মূল কথায়-

যে কোন ধর্ষক বা অপরাধীর জন্য আইনজীবী নিয়োগ পাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, তাদের অপরাধের পরিমাণ অনুযায়ী যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা। আসামী সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার মতো অপরাধ নাও করতে পারে, একাধিক আসামীর ক্ষেত্রে সবার কাজ/অপরাধ একি নাও হতে পারে। আর এডভোকেট নিয়োগ হলেই যে আসামী খালাস পেয়ে যাবে তাও কিন্তু নয়। তাছাড়া আমাদের সংবিধান রাস্ট্রের প্রত্যেকে নাগরিকের আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার দিয়ে রেখেছে এবং উর্ধতন আদালতের নির্দশনাও রয়েছে  – আসামি পক্ষে কোন আইনজীবী পাওয়া না গেলে প্রত্যেক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারন সম্পাদক মহোদয় মামলা পরিচালনা করবেন। তাছাড়া আইনের কতগুলো Maxim আছে, তার মধ্যে একটি হল- ” Nobody can punished unheard”.সকল আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে এবং মাননীয় আদালতের নির্দেশে স্টেট ডিফেন্স হিসাবে কোন না কোন আইনজীবীকে তাদের পক্ষে দাড়াতেই হবে। সুতরাং আমাদের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং আবেগি না হয়ে প্রচলিত আইন মেনে আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপরাধকে না বলি এবং প্রকৃত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করি।

 

খায়রুল আলম বকুল

এডভোকেট

জজ কোর্ট, সিলেট।

[hupso]

সর্বশেষ