সর্বশেষ

» নির্বাচন কমিশন বিড়ালে পরিণত হবে: মাহবুব তালুকদার

প্রকাশিত: ২৪. আগস্ট. ২০২০ | সোমবার

চেম্বার ডেস্ক: জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী আইনের প্রস্তাবিত সংস্কার নিয়ে ফের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এসময় তিনি বলেন, প্রার্থিতা সরাসরি বাতিলের একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এতে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।

সোমবার ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া অনুমোদন ও বিবিধ’ বিষয়ে সিইসি কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের ৬৯ তম সভায় এ সংক্রান্ত আন-অফিসিয়াল নোট (ইউও নোট) দেন মাহবুব তালুকদার। পরে সাংবাদিকদের কাছে কমিশন সভার প্রস্তাব সম্পর্কে তিনটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর তথ্য তুলে ধরেন আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার।

২০১৭ সালে পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশন যোগ দেয়ার পর ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা বর্জনসহ বেশ কয়েকবার আলোচনায় আসেন এ নির্বাচন কমিশনার। সর্বশেষ ভিন্নমত নিয়ে গত জানুয়ারিতে দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি।

যে তিন বিষয়ে এবারের ভিন্নমত তালুকদারের সেগুলো হলো, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম-পদবি পরিবর্তন; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশকে আইনের প্রতিস্থাপন ও প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থেকে সরে আসার বিষয়ে ভিন্ন মত দিয়ে সভায় আন-অফিসিয়াল নোটে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, আমি তিনটি বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, মেয়াদকাল ইত্যাদি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য নয়। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। এই সংস্কার কার্যক্রম নিতান্তই স্থানীয় সরকারের বিষয়।

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের যে সংস্কারের যে প্রস্তাব করেছে, আমি তার সঙ্গেও একমত নই। কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না, তা সার্বজনীন হতে হবে।

ইসি মাহবুব বলেন, নির্বাচন কমিশনের ২৪ আগস্ট ২০২০ তারিখের অনুষ্ঠিত ৬৯তম সভায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়েছে। এই খসড়ায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ রহিতপূর্বক সংশোধনসহ ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০২০’ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি এই উদ্যোগের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ প্রণয়ন ও জারি করেন। এটি একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়।

আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ -এর ৯১ই ধারায় কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত ছিল, তার বিলোপ সাধন। এই ধারাটি সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রকিবউদ্দীন কমিশন এটি বাতিলের উদ্যোগ নিয়ে চরম সমালোচনার মধ্যে পড়ে এবং পরে ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে।

মাহবুব তালুকদার জানান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ইতিপূর্বে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ রহিত করে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০২০ বিল’ -এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতে এই প্রস্তাবে ১১টি মৌলিক ও পদ্ধতিগত বিধান বাদ দিয়ে খসড়াটি তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, প্রার্থিতা সরাসরি বাতিলের একক ক্ষমতা থেকে সরে আসা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। এতে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার মতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক।

[hupso]

সর্বশেষ